ডেস্ক রিপোর্ট :
এক মাস পর সোমালি জলদস্যুদের হাতে জিম্মি এমভি আবদুল্লাহর নাবিকরা মুক্ত হয়েছেন। নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী জানিয়েছেন, সরকারের তৎপরতা ও সমঝোতায় নাবিকদের মুক্ত করা হয়েছে। যদিও এক সংবাদ সম্মেলনে জাহাজটির মালিকপক্ষ শিল্পগ্রুপ কেএসআরএম কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, মুক্তিপণ পেয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও কতো টাকা মুক্তিপণ দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়টি বলেনি তারা।
আজ রোববার (১৪ এপ্রিল) রাজধানীর মিন্টো রোডে সরকারি বাসভবনে নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি নাবিকদের মুক্ত করতে পেরেছি। এতে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে পুরো দেশবাসী আনন্দিত। নাবিকদের মুক্তির সংবাদটি যখন প্রধানমন্ত্রীকে দেই, তিনি শুকরিয়া আদায় করেছেন।’ এ সময় নৌপরিবহণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর এম মাকসুদ আলম উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এত অল্প সময়ের মধ্যে এ ধরনের ঘটনা (জিম্মি থেকে মুক্তি) ফয়সালা করা নজিরবিহীন। নববর্ষের প্রথম দিনে আমরা আনন্দিত। শুধু তাদের আত্মীয়স্বজন নয়, পুরো দেশবাসী খুবই আনন্দিত। আমরা আমাদের নাবিকদের মুক্ত করতে পেরেছি।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহণ অধিদপ্তর ও আন্তর্জাতিক মেরিটাইম উইং তৎপর ছিল। প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা নাবিকদের মুক্ত করতে তৎপর ছিলাম। নাবিকদের মুক্তির সংবাদটি যখন প্রধানমন্ত্রীকে দেই তিনি শুকরিয়া আদায় করেছেন। ২৩ জন নাবিক জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্ত হয়েছেন, এখন তারা নিরাপদ। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে তৎপরতার মধ্য দিয়ে জাহাজ ও নাবিকদের মুক্ত করতে পেরেছি। এখন তারা ইউএইর দিকে অগ্রসর হচ্ছেন।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা প্রথম থেকেই শুনছি মুক্তিপণের কথা। এটার সঙ্গে আমাদের ইনভলভমেন্ট নেই। এ ধরনের তথ্য আমাদের কাছে নেই। অনেকে ছবি দেখাচ্ছেন, এ ছবিগুলোরও কোনো সত্যতা নেই। ছবি কোথা থেকে কীভাবে আসছে, আমরা জানি না। এটা যতটুকু হয়েছে, আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শিপিং ডিপার্টমেন্ট, আন্তর্জাতিক মেরিটাইম উইং, ইউরোপিয়ান নেভাল ফোর্স, ভারতীয় নৌবাহিনী, সোমালিয়ার পুলিশকে ধন্যবাদ দিতে চাই। সবাই সহযোগিতা করেছে।’
দীর্ঘ সময় আলাপ আলোচনার তথ্য তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা তাদের সঙ্গে নেগোসিয়েশন করেছি দীর্ঘ সময় ধরে। এখানে মুক্তিপণের কোনো বিষয় নেই। আমাদের আলাপ-আলোচনা, এখানে বিভিন্ন ধরনের চাপ রয়েছে, সেই চাপগুলো কাজে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকে তাদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়েছে। জলদস্যুরা শক্তিমান, তা তো নয়। এতদিন যে সময়টা নিয়েছি আমরা, ইউরোপিয়ান নেভাল ফোর্সসহ তারা ভীষণ চাপে ছিল। বিশেষ করে সোমালি পুলিশ চাপে ছিল। তারা চায় জলদস্যুদের হাত থেকে সমুদ্র পথটাকে নিরাপদ করতে। এ জন্য আমেরিকান সাপোর্টও নিচ্ছে।
প্রতিমন্ত্রী জানান, ভবিষ্যতে এ রুটটা যেন নিরাপদ থাকে। সারা বিশ্বে সোমালি জলদস্যুদের কারণে তাদের ইমেজ নষ্ট হচ্ছে, এটা তারা উপলব্ধি করতে পেরেছে। তারা খুবই সজাগ ছিল। জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টায় ছিল। আন্তর্জাতিক চাপ ও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে (নেগোসিয়েশন) হয়েছে; তাদেরও (সোমালিয়ান জলদস্যু) নিরাপত্তার ব্যাপার ছিল। জলদস্যুরাও তাদের নিরাপদ রাখতে চাইবে, এ চাপটা সার্বক্ষণিক ছিল। খুবই চরম পর্যায়ে ছিল, এজন্য তারা নেমে গেছে। চাপটা এমন ছিল যে তারা জলদস্যু ছিল ২০ জন, পরে ৬৫ জন জলদস্যু জাহাজে অবস্থান নেয়। কী পরিমাণ মূল ভুখণ্ডে চাপ ছিল বুঝতে পেরে সবাই একসঙ্গে বেরিয়ে গেছে। মূল ভুখণ্ডে যাওয়ার পর তাদের কী অবস্থা হয়েছিল তা জানা নেই, সেখানে সোমালি পুলিশ ছিল।
এদিকে, দুপুর ১২টায় চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে সংবাদ সম্মেলনে কেএসআরএমের জাহাজ চলাচলবিষয়ক কোম্পানি এসআর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মেহেরুন করিম সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিপণের কথা উল্লেখ করেন। তবে, কত টাকা মুক্তিপণ দেওয়া হয়েছে, তা জানাতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রথম প্রায়োরিটি (প্রাধান্য) ছিল নাবিকদের সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে আনা। এই কারণে আমরা অনেক দেশের নিয়ম মেনে উদ্ধার প্রক্রিয়া চালিয়েছি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, জাহাজে অবস্থান করছিলেন ৬৫ জন জলদস্যু। উড়োজাহাজ থেকে মুক্তিপণের ডলার ফেলার পর তারা গুনে নিয়ে ৯টি বোটে করে জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ছেড়ে যায়। মুক্তিপণ ফেলার আগে জিম্মি ২৩ নাবিক সুস্থ আছেন কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ভিডিওচিত্র সংগ্রহ করে এসআর শিপিং। ভিডিওচিত্রে সবাইকে সুস্থ দেখার পরই মুক্তিপণ দেওয়া হয় তাদের।