বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) ও সদর হাসপাতালের ভেতরে-বাইরে দালাল চক্রর সদস্যরা বেপরোয়া। বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ অসংখ্য ওষুধের দোকানে নিযুক্ত দালাল সিন্ডিকেট চক্রের বিরুদ্ধে রোগীদের সর্বস্বান্ত করার অভিযোগ রয়েছে।
তথ্য সূত্রে জানা যায়, সরকারি বিধি অনুযায়ী কোনো সরকারি হাসপাতালের ২শ’ গজের মধ্যে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার থাকতে পারবে না। আইনের তোয়াক্কা না করেই বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) ও জেনারেল (সদর) হাসপাতালের সামনে ব্যাঙ্গের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে একাধিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
হাসপাতালের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা ওষুধের দোকানের মালিকরা। দালালদের দিয়ে হাসপাতালের রোগীদের কৌশলে ফুসলিয়ে নিয়ে যায় দালাল নিয়ন্ত্র ডায়াগনস্টিক সেন্টারে।
শুধু তাই নয় রয়েছে বিভিন্ন ওধুষের দোকানের দালাল চক্র সক্রিয়। ফলে রোগী ও তাদের স্বজনদের চড়া দামে করতে হচ্ছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা গুলো। বে-সরকারি হাসপাতালের দালালরা সরকারি হাসপাতালের রোগী নিয়ে যায় তাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে।
সরেজমিন দেখা যায়, বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃক নিয়োগপ্রাাপ্ত পুরুষ-মহিলা দালালরা কেউ থাকেন ডাক্তারের রুমে ও বাহিরে। আবার কেউ থাকেন ঘোরাফেরার মধ্যে। অন্যজন ব্যস্ত থাকেন রোগীদের নিয়ে নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা ওষুধ বিক্রিতে।
এই দালাল চক্রের মধ্যে নারীসহ প্রায় ৪০ জন প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রোগীকে হয়রানি করে যাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বরিশাল সদর হাসপাতালের এক কর্মচারী বলেন, রোগ মানুষের স্বাভাবিক জীবনকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত, দুর্দশাগ্রস্ত এবং অসহায় করে তোলে।
সরকারি হাসপাতালে আসা রোগাক্রান্ত মানুষকে তাদের মৌলিক অধিকার সু-চিকিৎসা সঠিকভাবে নিশ্চিত করা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। কিন্তু এখানে তা উল্টো।
শেবাচিম ও বরিশাল সদর হাসপাতালের সার্জারি, অর্থোপেডিক, গাইনি, মেডিসিন ও প্যাথলজি পরীক্ষা, এক্স-রে, ইসিজি, যক্ষ্মা ও কুষ্ঠসহ প্রায় সব পরীক্ষা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকলেও কর্তব্যরত ডাক্তার অসহায় রোগীদের অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়ে দালালদের হাতে তুলে দেন।
এছাড়াও লক্ষ্য করা গেছে, ডাক্তারের রুম থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই রোগীদের হাত থেকে ব্যাবস্থাপত্র কেড়ে নেয় ওষুধ প্রতিনিধির সদস্য ও দালাল চক্রর সদস্যরা। বরিশাল নগরের কাউনিয়া থেকে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা মুন্নি আক্তার বলেন, হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তারের কক্ষে থাকাকালীন একজন দালাল ধরিয়ে দিয়ে বলেন ওনার সঙ্গে অমুক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে পরীক্ষাগুলো তারাতারি করে নিয়ে আসুন।
ডাক্তারের কক্ষ থেকে বের হয়ে এলেই অন্য আর একজন দালাল ডাক্তারের দেয়া কাগজটি নিয়ে টানাহিঁচড়া করতে শুরু করেন। রক্ত ও ইউরিনসহ চারটি পরীক্ষার জন্য ডায়াগনস্টিক কর্তৃপক্ষ ২ হাজার ৫ শ’ টাকা চান। পরে দামাদামি করলে ডায়াগনস্টিকের লোকরা বলেন আপা ২ শ’ টাকা কম দেন। অন্যদিকে শেবাচিম হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হন প্রসূতিরা।
হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি করার পর ডাক্তারদের কাছে রোগী নিয়ে গেলেই তারা কোনো রকম দেখেই বলে বাচ্চার অবস্থা ভালো না। এখনই সিজার করতে হবে না হলে বাচ্চা বাঁচানো যাবে না।
এমন সংবাদে রোগীর স্বজনদেরকে চিন্তার মধ্যে ফেলে দেয়। দেখা যায়, ওই রোগীকে অন্য স্থানে নেয়ার পর স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব করে। সিজার করতে হলে ১০-১৫ হাজার টাকায় চুক্তির মাধ্যমে সিজার করেন হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তাররা।
এদিকে বরিশালবাসীর পুরানো হাসপাতাল বরিশাল সদর হাসপাতাল। এখানে ডাক্তার দেখাতে আসলেই ভোগান্তির শেষ থাকে না রোগীদের। ডাক্তার দেখাতে গেলেই প্রথমে গরীব অসহায় রোগীদের ২ হাজার টাকার বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেওয়া হয়। দেখা গেছে ২ হাজার টাকার পরীক্ষার কথা শুনেই অনেক গরীব অসহায় রোগীরা চিকিৎসা না নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়। এছাড়াও লক্ষ করা গেছে, দালাল নিয়ন্ত্রন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কারনে বরিশাল সদর হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার মত দেখা যায় না কোন রোগীকে। এতে সরকার হাড়াচ্ছে রাজস্ব। একই অবস্থা এক্স-রে বিভাগের।
এক কথায় বলা যায় সদর হাসপাতালের এক্সরে ও প্যাথলজি বিভাগ এখন বন্ধর পথে। শুধু তাই নয় সদর হাসপাতালে রোগীর ডাক্তার দেখিয়ে রুম থেকে বের হতে দেড়ি হলে ওষুধ প্রতিনিধিরা রোগীর হাত থেকে ব্যাবস্থাপত্র টেনে নিয়ে মোবাইল ছবি তুলতে দেড়ি হয় না তাদের। আর ভোগান্তি প্রহাতে হচ্ছে রোগীও তার স্বজনদের। এছাড়াও হাসপাতালের প্রবেশ পথটি দখলে রয়েছে ওষুধ প্রতিনিধিদের ব্যাগের কাছে। এগুলো হাসপাতাল কতৃপক্ষ দেখেও না দেখার বান করে রয়েছে।
এ ব্যাপারে বরিশাল সদর হাসপাতালের আর এমও ডা. দেলোয়ার হোসেন বলেন, দালাল চক্রের খপ্পরে পরে অনেক রোগী ও তাদের স্বজন সর্বস্বান্ত হয়েছে। দালালদের পুরোপুরি হাসপাতাল থেকে সরানো চেষ্টা চলছে। তবে কিছুদিনের মধ্যেই দালালদের বিরুদ্ধে চালানো হবে অভিযান। তবে ওষুধ প্রতিনিধির ব্যাপারে জানতে চাইলে নিরব থাকেন তিনি।
এদিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের পরিচালক ডা.বাকিব হোসেন বলেন,দালালদের বিরুদ্ধে আমরা প্রয়ই অভিযান চালাচ্ছি। তবে বর্তমানের শেবাচিম হাসপাতালে দালালের সংখ্যা অনেক কম। যা রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে খুব শিগ্রই কঠোর অভিযান চালানো হবে।