নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন ঘিরে থাকছে তিন স্তরের নিরাপত্তাবলয়। এগুলো হল-নির্বাচনপূর্ব, নির্বাচনকালীন ও নির্বাচন-পরবর্তী নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ইতিমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্র ও তার আশপাশের এলাকা গোয়েন্দা নজরদারির আওতায় এসেছে।
নিরাপত্তার প্রথম ধাপে বৃহস্পতিবার থেকেই রাজধানীতে পুলিশের পাশাপাশি ৬৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে অতিরিক্ত আরও ১০ প্লাটুন বিজিবি সদস্য।
গুরুত্ব বিবেচনায় অনেক কেন্দ্রে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা (সিসি ক্যামেরা) বসানোর কাজ চলছে।
দুই সিটিতে স্থাপন করা হচ্ছে একাধিক কন্ট্রোলরুম। আগামীকাল ভোট গ্রহণকে সুষ্ঠু করতে আজ থেকেই মাঠে থাকছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। প্রস্তুত থাকবে র্যাবের হেলিকপ্টার, বিশেষায়িত সংস্থা সোয়াত, বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, র্যাবের ডগ স্কোয়াড ও ক্রাইসিস রেসপন্স টিম।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ভোট গ্রহণকালে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য ইতিমধ্যে ১২৯ জন কর্মকর্তাকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আজ থেকে রোববার পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন ম্যাজিস্ট্রেটরা।
জানা যায়, দুই সিটিতে মোট দুই হাজার ৪৬৮ কেন্দ্রের মধ্যে ১ হাজার ৫৯৭টি কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ। আর সাধারণ কেন্দ্র রয়েছে ৮৭১টি। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটিতে ২৭টি থানা এলাকায় ১৮টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড এবং ৫৪টি সাধারণ ওয়ার্ড রয়েছে।
এসব ওয়ার্ডে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১ হাজার ৩১৮টি। এ ছাড়া ঢাকার দক্ষিণ সিটিতে ২৫টি থানা এলাকায় ২৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড ছাড়াও ৭৫টি সাধারণ ওয়ার্ডে ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১ হাজার ১৫০টি।
এসব ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আনসার ও পুলিশের ৪২ হাজার ৬৮২ জন সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ৫০ হাজার সদস্য নিয়োজিত থাকবেন।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপারেশন) কৃষ্ণপদ রায় বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কেউ শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করতে চাইলে পুলিশ কোনোভাবেই তা বরদাশত করবে না।
বিজিবি সদর দফতর জানিয়েছে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তাদের ৬৫ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন থাকবে। এর মধ্যে ঢাকার উত্তরে ২৭ প্লাটুন আর দক্ষিণে ৩৮ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন থাকবে।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্রে জানা গেছে, মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে প্রতিটি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি মোবাইল ফোর্স থাকবে।
এ ছাড়া প্রতি তিনটি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স এবং প্রতি থানায় একটি করে রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। আর প্রতিটি সাধারণ ওয়ার্ডে র্যাবের একটি টিম থাকবে।
সাধারণ ভোটকেন্দ্রে অস্ত্রসহ চারজন পুলিশ (এসআই/এএসআই একজন ও তিনজন কনস্টেবল), অস্ত্রসহ দু’জন অঙ্গীভূত আনসার, লাঠিসহ ১০ জন অঙ্গীভূত আনসার/ভিডিপি সদস্য (৪ জন নারী ও ৬ জন পুরুষ) মোতায়েন থাকবেন।
অন্যদিকে গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) ভোটকেন্দ্রে অস্ত্রসহ ৬ জন পুলিশ (একজন এসআই ও ৫ জন এএসআই/ কনস্টেবল), অস্ত্রসহ দু’জন অঙ্গীভূত আনসার এবং লাঠিসহ ১০ জন অঙ্গীভূত আনসার/ভিডিপি সদস্য (৪ জন ও ৬ জন পুরুষ) মোতায়েন থাকবেন।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ভোট গ্রহণের দিন এবং এর আগে ২ দিন ও পরে ১ দিনসহ মোট ৪ দিন নিয়োজিত থাকবেন। তবে ভোটকেন্দ্রে অঙ্গীভূত আনসার ও ভিডিপি সদস্যরা নিয়োজিত থাকবেন ৫ দিনের জন্য।
ভোট গ্রহণের আগের দিন রাতে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার সঙ্গে ভোটকেন্দ্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর সব সদস্য ভোটকেন্দ্রেই অবস্থান করবেন। আগামীকাল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ চলবে।