জলাশয় বিশেষ করে পুকুর রক্ষা করে উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার সকালে নিজ কার্যালয়ে (পিএমও) ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্পের সোনারগাঁ-বুয়েট লিংকের হাতিরঝিল অংশের পুনএলাইনমেন্টের পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা অবলোকনকালে এ কথা বলেন তিনি। খবর বাসসের।
উপস্থাপনাটি অবলোকনের পর প্রধানমন্ত্রী নতুনভাবে করা ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নকশায় তার সম্মতি দেন, যা পলাশিকে কাঁটাবন হয়ে বিয়াম (বিআইএএম) ভবনের দক্ষিণ অংশে হাতিরঝিল লেকের প্রান্তের সঙ্গে সংযুক্ত করবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা ঠিক আছে। এটা বাস্তবায়ন করতে পারেন (ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের সোনারগাঁ-বুয়েট লিংকের হাতিরঝিল অংশের পুনঃএলাইনমেন্ট)।
পূর্ববর্তী প্রস্তাবে, হাতিরঝিল লেক এবং পান্থকুঞ্জের মাঝামাঝি বরাবর এই লিংকের অ্যালাইনমেন্টের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী লেক (হাতিরঝিল) এবং পান্থকুঞ্জকে সুরক্ষা করে নতুনভাবে নকশা প্রণয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষকে নির্দেশ দেন। এই সংযোগের ফলে পুরান ঢাকা ও ধানমণ্ডির বাসিন্দারা উপকৃত হবেন এবং এটি দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২০ শতাংশ যানবাহন প্রবেশ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, এ’কদা মতিঝিলে একটি বড় ঝিল (জলাশয়) ছিল, তবে পাকিস্তানি শাসক আইয়ুব খান তা ধ্বংস করেন।’
এ সময় তিনি এমনভাবে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়নের নির্দেশ দেন, যাতে একটি অপরটির পরিপূরক হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একবার পরিকল্পনা (উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর) গৃহীত হলে সেগুলো সংহত করা এবং একে অপরের পরিপূরক হওয়া উচিত।’
ঢাকা শহর অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তবে আমরা নগরীর সমস্ত সুযোগ-সুবিধা গ্রামে দিচ্ছি।’ কাজেই গ্রামের মানুষের রাজধানীমুখী প্রবণতা কমে আসছে।’ সরকারি কর্মকর্তাদের শহরে বসবাসের মানসিকতার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তারা এখন শহরে থাকতে চান। তাদের বদলি করা হলে তাদের পরিবার শহরে রেখে নিজেরাই কেবল কর্মস্থলে যান।’
জনগণের ট্রাফিক আইন মেনে না চলার মানসিকতার কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী সবাইকে ট্রাফিক আইন মেনে চলার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘ফুটওভার ব্রিজ বা আন্ডারপাস থাকার পরেও জনগণ রাস্তা দিয়ে পারাপার হচ্ছে। পথচারি এবং চালক কেউই জেব্রাক্রসিং মানছেন না।’
৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি পিপিপি প্রকল্পের আওতায় ৮ হাজার ৯৪০ দশমিক ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে। প্রকল্পের প্রথম ধাপের কাজ ৫৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে এবং প্রকল্পের সার্বিক কাজ সম্পন্ন হয়েছে ১৮ শতাংশ।
তিনটি ধাপে প্রকল্পটি সম্পন্ন হবে- হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর-কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-কমলাপুর-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক (কুতুবখালী) পর্যন্ত।
যোগাযোগবিদ এবং বুয়েটের শিক্ষক অধ্যাপক মো. শামসুল হক অনুষ্ঠানে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের সোনারগাঁ-বুয়েট লিংকের হাতিরঝিল অংশের পুনঃএলাইনমেন্ট প্রকল্পের প্রেজেন্টেশন প্রদান করেন। প্রকল্প বিশেষজ্ঞ কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী এবং প্রকল্পের স্থপতি সদস্য ইকবাল হাবিব এ সময় প্রকল্প সম্পর্কে তাদের অভিমত দেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, পিএমও’র এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজ, পিএমও সচিব মো. তোফজ্জল হোসেন মিয়া, প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এবং সেতু বিভাগের সচিব মো. বেলায়েত হোসেন এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জয়িতা টাওয়ার নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় নির্মিতব্য ভবনের সংশোধিত স্থাপত্য নকশা প্রত্যক্ষ করেন প্রধানমন্ত্রী। নকশা প্রত্যক্ষকালে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাও প্রদান করেন। নকশা উপস্থাপন করেন জয়িতা ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফরোজা খান।
এ সময় মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী রওশন আরা উপস্থিত ছিলেন।