কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছয় মাসের মুক্তি-সংক্রান্ত ফাইল আইন মন্ত্রণালয় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পৌঁছেছে। এখন এ বিষয়ে একটি সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদনের জন্য সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে পাঠানো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনসাপেক্ষে খালেদা জিয়া আগামীকাল বুধবারের (২৫ মার্চ) মধ্যে মুক্তি পেতে পারেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. শহিদুজ্জামান এ তথ্য জানান। এর আগে মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) বিকেলে গুলশানে নিজ বাসায় জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে তার বয়স বিবেচনায় মানবিক কারণে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মতামত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে তাকে মুক্তির বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সচিব মো. শহিদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা কিছুক্ষণ আগে আইন মন্ত্রণালয়ের ফাইলটি পেয়েছি। এখন আমরা সামারি (সারসংক্ষেপ) করে তা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিলে মুক্তির আদেশ কারাগারে পৌঁছে যাবে। এরপর তিনি (খালেদা জিয়া) মুক্তি পাবেন।
আজকের মধ্যে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হওয়ার পর বেগম জিয়ার মুক্তি সম্ভব কিনা- জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘আশা করি, দেখা যাক। জেল কোড অনুযায়ী যে ব্যবস্থা নেয়ার সেটা তো নিতে হবে। আমরা তো আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত পেয়েই গেলাম, এখন প্রধানমন্ত্রীর চূড়ান্ত অনুমোদন বাকি আছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজ আমরা করেছি, আজকে না হলে আগামীকাল নাগাদ আশা করি তিনি মুক্তি পেয়ে যাবেন।’
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান। রায় ঘোষণার পর খালেদাকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রাখা হয়। এরপর ৩০ অক্টোবর এই মামলায় আপিলে তার আরও পাঁচ বছরের সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেন হাইকোর্ট।
একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন একই আদালত। রায়ে ৭ বছরের কারাদণ্ড ছাড়াও খালেদা জিয়াকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেন।
পরে কারান্তরীণ অবস্থায়ই চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নেয়া হয় খালেদা জিয়াকে। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা শেষে তাকে আবারও কারাগারে পাঠানো হয়। এভাবে কয়েক দফায় তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে এবং হাসপাতাল থেকে কারাগারে নেয়া হয়। সবশেষ গত বছরের ১ এপ্রিল তাকে তৃতীয় দফায় হাসপাতালটিতে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি হাসপাতালের ৬২১ নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন।