বিজ্ঞপ্তি:
দৈনিক শাহনামার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। জাতীয়, রাজনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন সহ সকল সংবাদের সর্বশেষ আপডেট জানতে ভিজিট করুন www.shahnamabd.com

ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ থেকে ফিরছে: মানুষ আতংকিত আমতলীবাসী

ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ থেকে ফিরছে: মানুষ আতংকিত আমতলীবাসী

মো: মহসীন মাতুব্বর, আমতলী প্রতিনিধি:
সারাদেশের মত আমতলী উপজেলার মানুষদেরও করোনা ভাইরাস নিয়ে ভয় ও আতংকে দিন কাটছে।আমতলী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জিএম দেলওয়ার হোসেন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ায় এ আতংক আরো বেড়ে গেছে। ইতিমধ্যে আমতলী উপজেলা প্রশাসন করোনার বিস্তৃতি রোধে উপজেলা লক ডাউন ঘোষনা করেছেন ।

লক ডাউনের কারনে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় গত কয়েকদিনে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ থেকে গোপনে রাতের আধারে বিভিন্ন ট্রলার ও বালুবাহী কার্গোতে করে আসা কিছু মানুষ আমতলী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রবেশ করে। এদের অধিকাংশই বিভিন্ন ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করে বলে জানাগেছে।

এদের মধ্যে কিছু গার্মেন্টস কর্মীও আছে। গত ৮ এপ্রিল রাতে নারায়ণগঞ্জ থেকে জনপ্রতি এক হাজার টাকা ভাড়া চুক্তিতে একটি বালুবাহী কার্গোতে ১০৯ জন ইটভাটা শ্রমিক উপজেলার আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের গাজীপুর আসে। এসময় তাদের পুলিশ আটক করে উপজেলার একটি সাইক্লোন সেল্টারে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রেখেছেন। এর পরের দিন গত শুক্রবার (১০ এপ্রিল) ভোররাতে উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের কলাগাছিয়া এলাকায় অপর একটি ট্রলার যোগে মুন্সিগঞ্জ থেকে তেইশ জন শ্রমিক পৌছালে সংবাদ পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাদের আটক করে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখেন।

এরপরেও প্রতিদিন গোপনে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ থেকে কমবেশী লোকজন এসে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রাম-গঞ্জে ও পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রবেশ করছে । তারা হোম কোয়ারিন্টিন না মেনে অবাধে চলাফেরা করায় স্থানীয় মানুষের মধ্যে আতংক তৈরী হয়েছে । আতংকিত মানুষজন প্রতিদিন সাংবাদিক, পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে মুঠোফোনে কল দিয়ে তাদের আতংকের কথা জানাচ্ছেন।

আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের শাখারিয়া এলাকার আবুল কালাম আজাদ, চাওড়া ইউনিয়নের তালুকদার বাজার, ঘটখালী এলাকার সোহেল- হেলাল, আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের ঘোপখালী এলাকার ইমরান, হলদিয়া ইউনিয়নের তক্তাবুনিয়া এলাকার শাহিন ও গুলিশাখালী ইউনিয়নের হরিদ্রাবাড়িয়া এলাকার ইলিয়াস মুঠোফোনে সাংবাদিকদের জানান, তাদের ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ থেকে অনেক লোকজন আসছে।

এদের অনেকে আত্মগোপন করে বাড়ীতেই অবস্থান করেছে। অনেকে আবার বাড়ীতেই অবস্থান করে প্রকাশ্যে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। নিষেধ করলেও শুনছেন না। এ কারনে আমরা এলাকাবাসী তাদের নিয়ে খুবই আতংকের মধ্যে আছি। আবার অনেক এলাকার আতংকিত মানুষজন মুঠোফোনে তাদের আতংকের কথা পুলিশ ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকেও জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে আমতলী থানার অফিসার ইন চার্জ মোঃ শাহআলম উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আতংকিত মানুষের ফোন পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আমরা চেষ্টা করছি বহিরাগতরা যাতে আমতলীতে প্রবেশ করতে না পারে। সড়কপথে আমতলী উপজেলার প্রতিটি প্রবেশপথ আমরা বন্ধ করে দিয়ে পুলিশ মোতায়েন করেছি। এখন দেখছি রাতের আধারে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ থেকে ট্রলারযোগে মানুষ আসছে। ইতিমধ্যে আমরা দুটি ট্রলার থেকে অনেককে আটক করে প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারিন্টিনে ও কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করেছি। বাহির থেকে আসা আত্মগোপনকৃতদের চিহ্নিত করে তাদেরকে হোম কোয়ারিন্টিনে রাখার চেষ্টা অব্যাহত আছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শংকর প্রশাদ অধিকারী জানান, বেশ কিছুদিন ধরে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ থেকে অনেকে আমতলীর বিভিন্ন গ্রামে এসেছেন ও তারা আত্মগোপন করে আছেন। করোনা রোগের সংক্রমণ এই এলাকাগুলোতে সবচেয়ে বেশী। তাই এসব এলাকা থেকে আগত ব্যক্তিদের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমনের সম্ভাবনা বেশী। যা আমতলীবাসীর জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি এসব এলাকা থেকে যারা এসেছেন তাদেরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে ফ্রি করোনা পরীক্ষা করার জন্য অনুরোধ করেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন বলেন, বহিরাগত যারা গোপনে আমতলী এসে আত্মগোপনে রয়েছেন তিনি তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা হোম কোয়ারিন্টিনে থাকেন। চৌদ্দ দিন ঘর থেকে বের হবেন না। কোথাও কোন অযাথা আড্ডা দিবেন না। আর যাদের করোনাভাইরাস উপসর্গ আছে তারা দ্রুত হাসপাতালে এসে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন। অন্যথায় নৌবাহিনী, পুলিশ আপনাদের আটক করে নিয়ে আসবে ।

আমতলীতে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের ২৩০ কর্মী পিপিই ছাড়াই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাঠে কাজ করছে।।
মো: মহসীন মাতুব্বর আমতলী প্রতিনিধি।।

আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের ২শ’৩০ জন মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা করোনা প্রতিরোধে কাজ করলেও তাদের নিজেদের কোন নিরাপত্তা নেই । পারসোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট – পিপিই ছাড়াই তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ এবং মানুষকে সচেতন করার কাজ করছে। ফলে তাদেরসহ তাদের পরিবারের জীবন হয়ে উঠছে ঝূঁকিপূর্ণ।

আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের স্বাস্থ্য বিভাগের ৩২ জন স্বাস্থ্য সহকারী, ইউনিয়ন পরিদর্শক ৭ জন এবং কমিউনিটি হেলথ প্রোভাইডার রয়েছে ২৯ জন। এছাড়া পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন পরিবার কল্যান পরিদর্শকা ১০ জন, পরিবার কল্যান সহকারী পরিদর্শিকা ৫১ জন, পেইড ভলান্টিয়ার ৯৬ জন, উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ৪ জনসহ দুই বিভাগে ২শ ৩০ জন কর্মী মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। তারা মানুষকে সচেতনতাসহ জ্বর সর্দিকাশীর তথ্য সংগ্রহ করছেন এবং সাধারন রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। অথচ এই মুহুর্তে তাদের নিজেদের জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই পারসোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট –পিপিই ছাড়াই এসকল কর্মীরা প্রতিদিন মাঠ চষে বেড়াচ্ছে। আবার কাজ শেষে সন্ধ্যা হলে তারা ফিরে যাচ্ছে নিজের বাসায়।

পাশাপাশি কমিউনিটি হেলথ প্রেভাইডাররা প্রতিনিয়ত কমিউিনিটি ক্লিনিকে বসে রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। এভাবে কাজ করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে তাদের নিজেদের জীবন ও পরিবার । গত ৯ এপ্রিল আমতলী উপজেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১ জন রাজনৈতিক নেতার মৃত্যুর পর আমতলীর প্রতিটি জনপদ এখন করোনা জোন হয়ে উঠেছে। কারন তার মৃত্যুর আগে এবং তার মৃত্যুর পরে অনেকে তার সংস্পর্সে এসেছে। তারা এখন অনেক জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। ফলো করোনা রোগের বিস্তার রোধে চলছে লকডাউন। এই লক ডাউনের মধ্যেও পায়ে হেটে কিংবা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মীরা কাজ করছে উপজেলার প্রতিটি গ্রামে। স্বাস্থ্য সহকারী মোর্শেদা বেগম জানান, জীবনের ঝুঁকি এবং আতঙ্ক নিয়ে মাঠে কাজ করছি। আমাদের প্রত্যেককে নিরাপত্তা সামগ্রী দেয়া হলে আমাদের জীবন কিছুটা ঝুঁকি মুক্ত হবো ।

আমতলী উপজেলা কমিউনিটি ক্লিনিক এসোসিয়েশনের সভাপতি ও চলাভাঙ্গা কমিউিনিটি ক্লিনিকের হেলথ প্রোভাইডার মো. আল হাসিব জানান, আমরা জীবন বাজি রেখে প্রতিটি কর্মী প্রতিদিন ক্লিনিকে কাজ করছি। আমাদের সাথে বাসার সকল সদস্যরাও ঝুঁকির মধ্যে পপড়ছ।

আমতলী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন জানান, আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মীরদের আমারা কোন পিপিই দিতে পারিনি। সরকারী ভাবে তাদের পিপিই সরবরাহ করা হলে তাদের জীবনের ঝুঁকি কিছুটা হলেও কমবে।

আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শংকর প্রসাদ অধিকারী জানান, আমতলী হাসপাতালে যে পরিমান পিপিই পাওয়া গেছে তা কেবল হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসদের জন্য রাখা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের পিপিই হলে তাদের জীবনের ঝুঁকি অনেকটা কমে আসবে।

বরগুনা জেলা সিভিল সার্জন ডা. হুমায়ূন শাহীন খান জানান, উর্ধতন কর্র্তৃপক্ষের কাছে মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের জন্য পিপিই চাওয়া হয়েছে। সরবরাহ পাওয়া গেলে মাঠ পর্যায়ের প্রত্যেক কর্মীকে পিপিইসহ সকল সরঞ্জাম সরবরাহ করবো।

 

Please Share This Post in Your Social Media




All rights reserved by Daily Shahnama
কারিগরি সহায়তা: Next Tech