সমুদ্রের ঢেউ এসে প্রবল বেগে আচরে পড়ছে সৈকতে অবস্থিত ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। ঢেউয়ের তান্ডবে উপড়ে পড়ছে সৈকত লাগোয়া গাছপালা। ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে দোকান, ছাতা চেয়ার। প্রচন্ড ঢেউয়ের তান্ডব ও স্রোতের তোরে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের তীলে তীলে গড়া স্বপ্ন গুলোও ভেসে যাচ্ছে ঢেউয়ের সাথে। অমাবশ্যার জো-য়ের প্রভাবে উত্তাল সমুদ্র। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়ে পুরো সৈকত এলাকা তচনছ হয়ে গেছে। সৈকতে থাকা সরকারী পিকনিক স্পট ও নারিকেল বাগানের অবশিষ্ঠ গাছগুলো গত দুই দিনে ধ্বংস স্তুপে পরিনত হয়েছে।
ধ্বংস স্তুপে পরিনত হয়েছে বনবিভাগের রিজার্ভ ফরেষ্ট, ঝাউবন ও জাতীয় উদ্যান। ঝুঁকির মুখে মসজিদ মন্দির,আবাসিক হোটেল,ট্যুরিস্ট পুলিশ বক্স ও সদ্য নির্মিত ট্যুরিজম পার্ক। সৈকত লাগোয় কিংস হোটেলটির একাংশ ইতিমধ্যে সমুদ্রের গর্ভে। সমুদ্রের এমন রূদ্র মুর্তি গত ১০ বছরে আর দেখা যায়নি বলে স্থানীয়দের অভিমত। গত ২-৩ দিনে ২০ থেকে ২৫ফুট ভূ-ভাগ ভেঙ্গে সমুদ্রের গর্ভে চলে গেছে। কুয়াকাটা পৌর কর্তৃপক্ষ জিও বস্তা ফেলে পাবলিক টয়লেটটি রক্ষার চেষ্টা করলেও আগামী দু’য়েক দিনের মধ্যেই পাবলিক টয়লেট ও কিংস হোটেলটি সমুদ্রে গর্ভে চলে যাবার সম্ভাবণা রয়েছে এমনটাই জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
সৈকতের পাড়ের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ঝিনুকের দোকানদার মোঃ সৈয়দ জানান, রাতে দোকান বন্ধ করে বাসায় চলে যান তিনি। সকালে এসে দেখেন তার দোকানের মালামাল ও দোকানের একাংশ সমুদ্রের ঢেউয়ে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। শুধু তার দোকানই এরকম প্রায় অর্ধশত দোকান ও দোকানের মালামাল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সৈয়দ জানান, ক্ষুদ্র ব্যবসা করে ছেলে মেয়ে নিয়ে কোন রকম সংসার চালিয়ে আসছেন। তীলে তীলে গড়ে তোলা তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি সমুদ্রের গ্রাসে চলে গেছে।
সকালে সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, ঢেউয়ের ঝাপটায় অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। অবশিষ্ট অংশ দোকানীরা সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সমুদ্রের ঢেউ এসে আচড়ে পড়ছে মহাসড়ক,ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। কোথাও দাড়ানোর স্থান নেই। পর্যটকরা সৈকতে দাড়িয়ে থাকতে পারছে না। ঢেউ এসে তাদের উপর আচড়ে পরছে।
ঢাকা থেকে কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা ডকুমেন্টারী ফ্লিম মেকার সন্দীপ বিশ্বাস বলেন, তিনি ১২ বছর ধরে কুয়াকাটায় আসেন। ১২ বছর আগে প্রায় আধা কিলোমিটার দুরে সৈকত দেখেছেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা কুয়াকাটার এখনকার চিত্র দেখে আমি হতভাগ হয়ে গেছি। সেসব এখন তার কাছে স্মৃতির মতো। মঙ্গলবার তিনি কুয়াকাটা সৈকতে ভ্রমণে এসে এমন বিধস্ত চিত্র দেখে আহত হয়েছেন। তার সামনেই ঢেউয়ের ঝাপটায় নারিকেল, আম,তালগাছ সহ কয়েকটি গাছ ভেঙ্গে পড়তে দেখেছেন। ভেসে যেতে দেখেছেন কয়েকটি ছোট ছোট দোকান।
তার মতে কুয়াকাটা সৈকতকে রক্ষায় জরুরী উদ্যোগ নেয়া দরকার। অন্যথায় সূর্যোদয় সূর্যাস্তের এই বিরল সৌন্দর্য ভূমি আমরা অচিরেই হারিয়ে ফেলবো। কুয়াকাটা প্রেসক্লাব ও কুয়াকাটা ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট এসোসিয়েশন (কুটুম) এর সভাপতি নাসির উদ্দিন বিপ্লব বলেন, কুয়াকাটা সৈকতের বালুক্ষয় রোধে দীর্ঘমেয়াদি দৃশ্যমান কোন পরিকল্পনার বাস্তবায়ন নেই। বিভিন্ন সময় স্বল্পমেয়াদি যেসব পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে তা নিয়েও রয়েছে দুর্নীতির অভিযোগ। দরকার দ্রুত এবং সময় উপযোগী পরিকল্পনার বাস্তবায়ন।
কুয়াকাটা পৌর মেয়র আঃ বারেক মোল্লা বলেন, সমুদ্র ভাঙ্গন রোধে পৌর কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা নেই। দরকার দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা। পাউবো কর্তৃপক্ষ এ পরিকল্পণা নিতে পারে। পৌরসভার পক্ষ থেকে জিরো পয়েন্টে কিছু জিও বস্তা ফেলে সাময়িক ভাবে রক্ষার চেষ্টা করছেন। যা দিয়ে সৈকত রক্ষা করা সম্ভব নয়। পাউবো কর্তৃপক্ষকে তিনি বার বার এ বিষয়ে বলেছেন। তারা একটি প্রকল্প প্রস্তাবণা আকারে পাঠিয়েছে বলে তাকে জানিয়েছেন।