বরগুনায় আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের আড়াই মাস পর নতুন ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের সামনে বসানো একটি সিসি ক্যামেরার ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, গত ২৬ জুন বরগুনা কলেজ গেটে হামলার পরপরই সকাল ১০টা ২১ মিনিটে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি নিজেই একটি রিকশায় করে অচেতন রিফাতকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এ ভিডিওটিও ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালও হয়েছে।
তবে ঘটনার পর একটি মহল থেকে দাবি করা হয় যে, মিন্নি তার স্বামী রিফাতকে নিয়ে হাসপাতালে যাননি। রিফাত একাই রিকশায় বরগুনা সদর হাসপাতালে যান এবং মিন্নি পরে অন্য রিকশায় হাসপাতালে গিয়েছিলেন।
ভিডিওটিতে দেখা যায়, রিকশাটি হাসপাতাল গেটে পৌঁছার পর চালকের ডাকে মামুন ভেন্ডার নামে একজন দৌড়ে আসেন। এরপর তিনি দ্রুত হাসপাতালের ভেতরে গিয়ে একটি স্ট্রেচার নিয়ে আসেন। এ সময় সেখানে আরও অনেকেই এগিয়ে আসেন। এরপর রিফাতকে রিকশা থেকে নামিয়ে স্ট্রেচারে হাসপাতালের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়।
পরে রক্তমাখা হাতে মিন্নি হাসপাতালের সামনে উপস্থিত একজনের ফোন নিয়ে কারও সঙ্গে কথা বলে হাসপাতালের ভেতর প্রবেশ করেন। এর কিছুক্ষণ পর মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর হাসপাতালে আসেন।
সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সটি রিফাত শরীফকে বহন করে বরিশাল নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয়। ১০টা ৪৪ মিনিটে অপিজেন ও দুটি স্যালাইন লাগানো অবস্থায় রিফাত শরীফকে স্ট্রেচারে করে হাসপাতালের সামনে অপেক্ষমাণ অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয়। এরপর রিফাত শরীফকে বহন করা অ্যাম্বুলেন্সটি ১০টা ৪৯ মিনিটে বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল প্রাঙ্গণ ত্যাগ করে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দিকে রওনা হয়।
রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত হওয়ার পর কারামুক্ত হয়ে বর্তমানে বরগুনায় বাবার বাসায় অবস্থান করছেন মিন্নি। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় এ বিষয়ে মিন্নির সঙ্গে কথা বলা যায়নি।
মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, হাসপাতালের সামনের এ ভিডিওটি তিনি সংগ্রহ করে কয়েকজন সংবাদকর্মীকে দিয়েছেন। মিন্নি যে রিফাত শরীফকে বাঁচাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে, তা কলেজের সামনের ভিডিও এবং হাসপাতাল প্রাঙ্গণের ভিডিওতে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত।
তিনি বলেন, আমার মেয়ে রিফাত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নয়। আমার মেয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সত্য কখনও চাপিয়ে রাখা যায় না। আস্তে আস্তে সব সত্য ঘটনা মানুষ জানতে পারবে এবং আশা করি আমার মেয়ে এ ঘটনায় নির্দোষ প্রমাণিত হবে।
তবে এ বিষয়ে বরগুনা পুলিশ প্রশাসন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
গুরুতর আহত রিফাতকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসার পর চিকিৎসা দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন বরগুনার সিভিল সার্জন অফিসের সিনিয়র টেকনিশিয়ান সুভাষ চন্দ্র।
তিনি বলেন, রিফাতকে যখন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়, তখন আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে রিফাতের অবস্থা খুব খারাপ ছিল। বিশেষ করে তার বাঁ পাশের ফুসফুস ধারালো অস্ত্রের আঘাতে দ্বিখণ্ডিত হয়ে গিয়েছিল। এ কারণে তার জীবন বিপন্ন হতে পারে ভেবে চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে রক্ত দেওয়া হয়নি। তাই প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে রিফাতকে দ্রুত উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল।