রাখাইনে ফিরে যেতে রোহিঙ্গাদের মনোভাবে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। প্রত্যাবাসনের শর্ত হিসেবে আগে মিয়ানমারের নাগরিকত্বসহ পাঁচ দফা দাবি জানালেও এখন অনেকে বলছেন, দুই দফা পূরণ হলে তারা ফিরে যাবেন।
গত দু’দিনে চীনের একটি প্রতিনিধি দল কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের এই মনোভাবের কথা জানতে পারে বলে দাবি করেছেন।
প্রতিনিধি দলের কাছে রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, তাদের বসতভিটায় যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হলে এবং সেখানে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা পেলে তারা নিজ দেশে ফিরে যেতে ইচ্ছুক।
চীনের প্রতিনিধি দলটি জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধি দলকে রাখাইন পরিস্থিতি দেখতে পাঠানো যেতে পারে।
সোমবার সকালে টেকনাফের শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সিআইসি কার্যালয়ে ২০ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের সঙ্গে বৈঠকে এই প্রস্তাব দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। এ সময় শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের কর্মকর্তাসহ চীনের প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এক ঘণ্টার এ বৈঠকে প্রত্যাবাসন নিয়ে রোহিঙ্গাদের মনোভাব জানতে চায় চীনা প্রতিনিধি দলটি। বৈঠক শেষে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শামসুদ্দৌজা নয়ন এসব তথ্য জানান।
বৈঠকে উপস্থিত রোহিঙ্গারা বলেছেন, রাখাইনে বিবদমান বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে সংঘাত এখনও চলছে। সেখানে রোহিঙ্গাদের ওপর এখনও নির্যাতন চালানো হয়। এ অবস্থায় রোহিঙ্গারা রাখাইনে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে শঙ্কিত। পরিস্থিতির উন্নতি হলেই প্রত্যাবাসনে ইচ্ছুক রোহিঙ্গারা।
টেকনাফ শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা আবুল ফয়েজ ও মোহাম্মদ গুরা মিয়া বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের কেড়ে নেওয়া জমি ফেরত ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এই দাবি তারা চীনা প্রতিনিধি দলের কাছে উত্থাপন করেছেন।
রাখাইন পরিস্থিতি দেখতে রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধি দল যাবে কি-না, চীনের প্রতিনিধি দলের প্রধান এমন প্রশ্ন করলে রোহিঙ্গারা বলেন, তারা রাজি আছেন।
রোহিঙ্গা নেতা জসিম উদ্দিন জানান, চীনের রাষ্ট্রদূত তাদের বলেছেন, রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দল রাখাইনে যেতে রাজি থাকলে দলের প্রত্যেককে দুটি করে মোবাইল ফোন দেওয়া হবে। এর মধ্যে একটি তারা রাখাইনে নিয়ে যাবেন। অন্যটি বাংলাদেশে পরিবারকে দিয়ে যাবেন। মিয়ানমারে পরিস্থিতি ভালো হলে মোবাইলে পরিবারকে খবর দেবেন।
বৈঠক শেষে টেকনাফের শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তিনটি পরিবারের মধ্যে স্কুলব্যাগ ও শিশুদের হাতে খেলনা তুলে দেন চীনের রাষ্ট্রদূত। এ সময় মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। চীনের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা টেকনাফের নয়াপাড়া ক্যাম্প পরিদর্শন করেন এবং রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা টেকনাফের ট্রানজিট ক্যাম্পও পরিদর্শন করেন। রোববার সকালে নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু শূন্যরেখায় আটকেপড়া রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং সীমান্ত ঘুরে দেখে চীনের প্রতিনিধি দল।