বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) এক বছর পার করেছেন ভিসি অধ্যাপক ড. ছাদেকুল আরেফিন। ২০১৯ সালের ৬ নভেম্বর ভিসি হিসেবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন তিনি।
অধ্যাপক ড. ছাদেকুল আরেফিন বলেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা-গবেষণা, সহশিক্ষায় দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় হবে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় একটি শিক্ষার্থীবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয় হবে এমন প্রত্যাশা তার।
এর আগে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ছিলেন অধ্যাপক ড. এস. এম. ইমামুল হক। শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলায় ছাত্র আন্দোলনের মুখে তাকে বাধ্যতামূলক পূর্ণ মেয়াদে ছুটিতে পাঠানো হয়।
এর ছয়মাস পর ভিসি নিয়োগ না হওয়ায় বাতিল করা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা। একই সময় রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি পদ শূন্য হওয়ায় একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম যখন স্থবির হয়ে পড়েছিল। ঠিক তখনই ভিসি হিসেবে দায়িত্ব নেন অধ্যাপক ড. ছাদেকুল আরেফিন।
যোগদানের পর কারো কাছ থেকেই ফুল গ্রহণ করেননি তিনি। বলেছিলেন, ভালো কাজ করলে বিদায়ের দিন কেউ ফুল দিলে তা গ্রহণ করবেন। এরপর আটকে থাকা ভর্তি পরীক্ষা সফলতার সঙ্গে শেষ করেন।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়কে দেশের আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে হাতে নেন একটি মাস্টারপ্ল্যান। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব চাকরির বিধিমালা, আবাসিক নীতিমালা এবং সহশিক্ষা কার্যক্রম গতিশীল করতে টিএসসি নীতিমালা প্রণয়ন করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৯ বছরেও হয়নি এসব নীতিমালা। শিক্ষার্থী দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন ফি ও জরিমানা কমানোর জন্য গঠন করেছেন কমিটি।
একাডেমিক ক্যালেন্ডার রিভিউ করে সেশনজট নিরসনের উদ্যোগ, গবেষণা খাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেটে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মরণে নিয়েছেন বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রবর্তনের উদ্যোগ। মুজিববর্ষ উপলক্ষে সামাজিক বনায়নের অংশ হিসেবে ৫০ একর ক্যাম্পাসে ২৩শ’ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি শুরু করেন ববি ভিসি।
করোনায় জরুরি টেলি স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের হতদরিদ্র, অসচ্ছল শিক্ষার্থী ও চুক্তি ভিত্তিক (কানামনা) কর্মচারীদের জন্য বহুমুখী পদক্ষেপ নেন। ক্যাস্পাস বন্ধ থাকায় দৈনিক মজুরি ভিত্তিত ৭১ কর্মচারীকে একমাসের বেতন সমপরিমাণ ৭ লাখ ২ হাজার ৯শ’ টাকার অনুদান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪টি বিভাগে দেড় শতাধিক অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের ৩ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা দেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি সহকারী অধ্যাপক আরিফ হোসেন বলেন, ক্রান্তিকালে দায়িত্ব নেন ভিসি ড. ছাদেকুল আরেফিন। একাডেমিক ও প্রশাসনিক অচলাবস্থা সচল করে সুষ্ঠুভাবে ভর্তি পরীক্ষা শেষ করেছেন।
করোনাকালে শিক্ষার্থীদের জন্য মেডিকেল সেবা, আর্থিক সহায়তা, সেশনজট কমাতে অনলাইন ক্লাস মনিটরিংসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন। আশা করি তার দক্ষ নেতৃত্বে শিক্ষার্থীদের সব প্রত্যাশা পূরণ হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রাকিবুল হাসান জানান, অন্যান্য ভিসির চেয়ে বর্তমান ভিসির কার্যক্রম ও পরিকল্পনা প্রশংসনীয়। কিন্তু শিক্ষার্থীদের সব প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি। ক্লাসরুম সংকট, আবাসিক সংকট, পরিবহন সংকট, লাইব্রেরিতে পর্যাপ্ত বই নেই, সেশন ফি এবং অন্যান্য ফি বেশি।
এক বছরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ করতে পেরেছেন জানতে চাইলে ভিসি অধ্যাপক ড. ছাদেকুল আরেফিন বলেন, করোনার কারণে সব কাজ সীমাবদ্ধ হয়ে আছে, দৃশ্যমান হচ্ছে না।
একাডেমিক ক্যালেন্ডার রিভিউ করে সেশনজট কমানোর উদ্যোগ নিয়েছি। ছাত্রদের বিভিন্ন ফি’র জরিমানা কমোনার জন্য কমিটি গঠন করেছি। শিক্ষার্থীদের বাস ক্রয়ের জন্য টেন্ডার দেয়া হয়েছে।
টিএসসির মাধ্যমে সহশিক্ষা কার্যক্রম বৃদ্ধির লক্ষে নীতিমালা সম্পন্ন করেছি। আধুনিক লাইব্রেরি, একাডেমিক ভবন, অডিটোরিয়াম, আবাসিক হল বৃদ্ধির চেষ্টা অব্যাহত আছে।