অনলাইন ডেস্ক:
দেশে গ্যাসের মজুত শেষ হয়ে আসছে। উন্নত বিশ্বে এভাবে কোনো বাসায় গ্যাস দেয়া হয় না। এ কারণে গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে বাসাবাড়িতে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সংযোগ বন্ধ রয়েছে। গুরুত্ব দেয়া হয়েছে লিকুইড পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ওপর।
দেশে এলপিজির ব্যবহার নিশ্চিত করতে আবাসিকে গ্যাসের সংযোগ বন্ধের সময় সরকার ঘোষণা দিয়েছিল, এলপিজি সহজলভ্য করা হবে। যাতে কম খরচে যে কেউ এটা ব্যবহার করতে পারেন। এজন্য সরকার সাড়ে ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের মূল্য ৭০০ টাকা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপনও জারি করে। কিন্তু ওই প্রজ্ঞাপন-কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এ খাতের ব্যবসায়ীরা সাড়ে ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রি করছেন এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকায়। সরকারও এ বিষয়ে নির্বিকার। দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো কার্যকর ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না।
সাড়ে ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের দাম জানতে চাইলে রায়ের বাজার টালি অফিস এলাকার ব্যবসায়ী ও আছমা এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটার মোহাম্মদ হাসান বলেন, এক সপ্তাহ আগেও একটি সিলিন্ডার এক হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এখন একটু দাম কমিয়ে কোম্পানিগুলো বিক্রি করছে এক হাজার টাকায়।
অথচ গত ৫ আগস্ট বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে সাড়ে ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ভোক্তাপর্যায়ে ৭০০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়।
সরকারের নির্ধারিত মূল্যের বিষয়ে জানতে চাইলে হাসান বলেন, এগুলো আমার-আপনার দেখার বিষয় নয়। কোম্পানি আমাদের কাছে যে দামে বিক্রি করে তার থেকে কিছুটা বেশি রেখে আমরা বিক্রি করি।
জানা গেছে, ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহীসহ দেশের বড় বড় শহরে রান্নার কাজে পাইপলাইনের গ্যাস ব্যবহার হচ্ছে। যারা দুই চুলা ব্যবহার করেন, তাদের মাসিক বিল গুনতে হয় ৯৭৫ টাকা। পাইপলাইন নেটওয়ার্কবিহীন এলাকায় একটি ছোট পরিবারে রান্নার জন্য মাসে সাড়ে ১২ কেজির দুটি সিলিন্ডার লাগে। এজন্য তাদের গুনতে হয় দুই হাজার টাকা। সরকারের দায়িত্বশীলরা রান্নায় গ্যাস ব্যবহারে এ বৈষম্য দূর করা হবে বলে বহুবার ঘোষণা দেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
রাজধানী জিগাতলার নতুন বাড়িওয়ালা আফজাল হোসেন। বলেন, নতুন বাড়ি করেছি। তিতাস সেখানে গ্যাসের সংযোগ দেয়নি। শুধু গ্যাস না থাকায় ফ্ল্যাট বিক্রিতে হিমশিম খাচ্ছি। সিলিন্ডার গ্যাসের অনেক দাম। পাশের পুরনো বাড়িতে গ্যাস সংযোগ রয়েছে। সেখানে মাসে ৯৭৫ টাকা দিয়ে রান্নাবান্নার কাজ সারা যায়। সিলিন্ডারের খরচ মাসে দ্বিগুণেরও বেশি। একই দেশে একই স্থানে এভাবে বৈষম্য চলতে পারে না।
এ বিষয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম বলেন, এলপিজির খুচরা মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই। কোম্পানিগুলো একেক দামে ডিলারের কাছে গ্যাস বিক্রি করছে। ডিলাররা ইচ্ছামতো লাভ ধরে গ্রাহকপর্যায়ে তা সরবরাহ করছেন।
তিনি বলেন, সরকার কার্যকর উদ্যোগ নিলে এলপিজির দাম সাধারণের নাগালে নেমে আসবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশে সাড়ে ১২ কেজি, ৩০ কেজি, ৩৫ কেজিসহ বিভিন্ন মাপের সিলিন্ডারে এলপি গ্যাস বিক্রি হয়। এর মধ্যে সাড়ে ১২ কেজির সিলিন্ডার বাসাবাড়ি, হোটেল-রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত হয় ৩০ ও ৩৫ কেজির সিলিন্ডার।