বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের লেবুখালীর পায়রা সেতুর কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। দৃশ্যমান হয়েছে নির্মাণাধীন ১ হাজার ১৩২ মিটার সেতু। এরই মধ্যে সেতুটির ৬২ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। আগামী বছরের জুনে সেতু চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার বিষয়ে আশাবাদী সড়ক ও জনপথ এবং সেতু বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের ১০টি মেগা প্রকল্পের একটি পায়রা সেতু নির্মাণ প্রকল্প।
২০১২ সালের এপ্রিলে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী সেতুর আদলে চার লেনবিশিষ্ট পায়রা সেতুর নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১ হাজার ১২৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ১ হাজার ৪৭০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৯ দশমিক ৭৬ মিটার প্রস্থের পায়রা সেতুর নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কুয়েত ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়ন এবং সড়ক যোগাযোগ ও সেতু বিভাগের তত্ত্বাবধায়নে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সেতুর নির্মাণকাজ সম্পন্নের কথা ছিল। কিন্তু বরাদ্দসংক্রান্ত জটিলতায় পিছিয়ে যায় পায়রা সেতুর নির্মাণকাজ। পরবর্তী সময়ে ২০১৬ সালের ২৪ জুন সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করে চীনের প্রকৌশল সংস্থা লং জিয়ান রোড অ্যান্ড ব্রিজ কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড। তৃতীয় কর্ণফুলী সেতুর আদলে এক্সট্রাডোজ কেবল স্টেট পদ্ধতিতে নির্মাণাধীন সেতুর এরই মধ্যে ১ হাজার ১৩২ মিটার অংশ দৃশ্যমান হয়েছে। যদিও পরপর দুবার সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে এ সেতুর নির্মাণকাজের।
সড়ক জনপথ ও সেতু বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ও পায়রা সেতু নির্মাণ প্রকল্প ম্যানেজার আহমেদ শরীফ সজিব বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম এবং নান্দনিক এ সেতু ৩৫০টি পাইলের ওপর ভর করে দাঁড়াবে। এ পাইলগুলো চীন-ভারতসহ বিভিন্ন দেশের প্রকৌশলী ও কারিগর দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুর দুদিকে অ্যাপ্রোচ সড়কের দৈর্ঘ্য হবে ১ হাজার ২৬৮ মিটার ও প্রস্থ ২২ দশমিক ৮০ মিটার। সেতুর মাঝখানে থাকবে এক মিটার দৈর্ঘ্যের ফুটপাত। মূল সেতুতে স্প্যান থাকবে চারটি। এর মধ্যে মাঝ নদীর দুটি স্প্যান ২০০ মিটার ও বাকি দুটি ১৫৫ মিটার করে। প্রতি স্প্যানের দূরত্ব ৬৩০ মিটার করে। আর নদী থেকে সেতুর উচ্চতা হবে ১৮ দশমিক ৩ মিটার।
আহমেদ শরীফ সজিব বলেন, সেতুর বরিশাল প্রান্তে ৩০ মিটার করে ১২টি ও পটুয়াখালী প্রান্তে ১৬টি পিলারসহ মোট ৩১টি পিলার স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। নদীর মধ্যে যে চারটি পিলার হবে, তার মধ্যে বরিশাল প্রান্তের পিলার নির্মাণ শেষ হয়েছে। মাঝখানের পাইলের কাজও প্রায় সম্পন্নের পথে। পটুয়াখালী প্রান্তের পাইল ও পিলারের কাজ শেষের পথে। ২০২১ সালের জুনের মধ্যে সেতুটি চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে।
সড়ক জনপথ ও সেতু বিভাগের পায়রা সেতু প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নূর-ই-আলম বলেন, পাইল ও পিলার স্থাপনকাজ শেষ হয়েছে। এমনকি বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ প্রান্তে ১ হাজার ১৩২ মিটার সেতু এখন দৃশ্যমান। ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে।
তিনি বলেন, পায়রা সেতুর প্রকল্প ব্যয় ১০ শতাংশ বেড়েছে। সেতু রক্ষায় নদীশাসন কাজের জন্য ওই টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় নদীর তীর সংরক্ষণ, ব্লক ও জিও ব্যাগ ফেলা হবে।
স্থানীয়রা বলছেন, লেবুখালীর পায়রা নদীতে সেতুটি উন্মুক্ত করার পর ঢাকার সঙ্গে গোটা দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার আরো উন্নয়ন হবে। বরিশাল থেকে পটুয়াখালী, বরগুনা ও পর্যটন নগরী সাগরকন্যা কুয়াকাটার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো সহজ হবে। এসব রুটে যোগাযোগে কমে আসবে সময়। সেতুটি উন্মুক্ত হলে ঢাকা থেকে কক্সবাজারের চেয়ে অর্ধেক সময়ে কুয়াকাটায় যাতায়াত সম্ভব হবে। আর পদ্মা সেতু নির্মাণে সময়ের ব্যবধান কমে আসবে আরো কয়েক গুণ।