পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল (অব.) জাহিদ ফারুক এমপি বলেছেন, জাতির উন্নতি নির্ভর করে সে দেশের নাগরিকদের ওপর। সে দেশের নাগরিক যদি সুস্থ-সবল হয় তাহলেই সম্ভব হয় উন্নতি সাধন করা। সোনার বাংলা গড়তে হলে আমাদেরকে শারিরীকভাবে সুস্থ থাকতে হবে। শারিরীক সুস্থ থাকতে হলে আমাদেরকে খেলাধুলা করতে হবে।
শনিবার (১৪ নভেম্বর) বরিশালে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড কর্তৃক প্রদত্ত রোলার হস্তান্তর এবং সরকারির শিশু পরিবারে ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
কিশোর-কিশোরীদের খেলাধুরার প্রতি আগ্রহী হওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, খেলার দিকে যারা মনযোগী তারা কিন্তু খারাপ কাজের দিকে মনযোগী হয় না। তারা খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকে। যারা স্বাস্থ্য সচতেন তারা কিন্তু মাদকের দিকে আকৃষ্ট হয় না। খেলাধুলার সাথে সাথে লেখাপড়ার দিকে মনযোগী হলেই দেশ সোনার বাংলা হতে পারবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি অনেক সময় চেষ্টা করি চাকুরি দেয়ার জন্য। কিন্তু সাধারণ একটা লিখিত পরীক্ষায় বেশিরভাগ ছেলে পাস করতে পারে না। পরীক্ষার ধরণ পরিবর্তন করলেও তারা লিখিত পরীক্ষায় পাশ করতে পারে না। একটা পরীক্ষার্থী যদি লিখিত পরীক্ষায় পাশ না করতে পারে তাহলে কিভাবে সুপারিশ করে চাকুরি দেয়া সম্ভব। নিজের প্রস্তুতি নিজেকে নিজের নিতে হবে। তোমার ভালো তোমাকে দেখতে হবে। যদি নিজের ভিত মজবুতভাবে গড়তে না পারলে হলে মন্ত্রী কোন উপকার করতে পারবে না। নূন্যতম লেখা-পড়ার জ্ঞান না থাকলে পদ্মাসেতু-পায়রা বন্দর হওয়ার পর বরিশালের শিল্প কারখানা হলেও সেখানে তোমারা চাকুরি করতে পারবে না। বাহিরের লোক এসে চাকুরি করবে। আর সন্তানের লেখাপড়ার দিকে অভিভাবকদেরও খেয়াল রাখতে হবে। তাদের সময় দিতে হবে।
অনেকেই বলেছেন সন্তানরা সারাক্ষন কম্পিউটার দেখছে, ইন্টারনেটে ব্যবহার করছে, এটারও প্রয়োজন আছে। তবে এজন্য শারিরীক সুস্থতারও প্রয়োজন আছে। আর এজন্য খেলাধুলার প্রয়োজন। বাংলাদেশে একসময় ফুটবলের প্রতি আমাদের ছেলেদের আগ্রহ ছিলো, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আমাদের ছেলেরা এখন ক্রিকেটের প্রতি মনযোগী বেশি।
তিনি বলেন, মুজিব বর্ষে যে টি টোয়েন্টি খেলা হবে, সেখানে বরিশালের একটি টিম দেয়া হয়েছে। সে টিমের লগো উদ্বোধন আজ হবে ঢাকাতে। যার একটি অনুষ্ঠান আমরা বরিশালেও করবো। বরিশালের নামে টিম করায় আমি ব্যক্তিগতভাবে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানাই উদ্যোক্তা সেই শিল্পপতিকে। ওই খেলায় যারা অংশগ্রহন করছেন তাদের সাপোর্ট দেয়ার পাশাপাশি সবাই খেলা দেখবেন। কারন এটারও প্রয়োজন আছে। আজ বরিশাল থেকে ক্রিকেট টিম হয়েছে কিন্তু আমি চাই বরিশাল থেকে ভালো ফুটবল টিম, ভালো মানের ভলিভল, হা-ডু-ডু টিম হোক।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, কিশোর এবং যুবক যারা তোমরা আছো তাদের প্রতি আহবান ইয়াবাসহ সকল ধরণের মাদক থেকে দূরে থাকবে। অভিভাবকদের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানাই আপনাদের সন্তানদের প্রতি খেয়াল রাখুন, যাতে মাদকের সাথে জড়িয়ে না পরে। মাদকাসক্তদের কাছ থেকে সন্তানকে দুরে রাখবেন, কারণ তাদের সাথে থাকলে আপনার ভালো সন্তানটিও মাদকাসক্ত হয়ে পড়বে। তখন আপনার সন্তান আপনার থাকবে না, ভিন্ন রুপে আভির্ভুত হবে, তখন সারাজীবন আপনার চোঁখের পানি আর বন্ধ করতে পারবেন না। আর যারা মাদকের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছো, তাদের প্রতি আহবান জানাবো, তোমরা মাদক ত্যাগ করে ভালো পথে আসো, সুস্থ-সবল হও এবং সুস্থ নাগরিক হিসেবে সোনার বাংলাদেশকে গড়ার যে স্বপ্ন সেখানে যোগ দেও।
তিনি বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনারের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, সমাজে কিছু লোক আছে যারা যুবকদের মাদকের প্রতি আকৃষ্ট করে এবং তাদের দিয়ে বিভিন্ন ধরণের খারাপ কাজ করতে উৎসাহিত করে। এটা শক্ত হাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দমন করতে হবে। যারা মাদকের সাথে জড়িত তাদের ধরতে হবে।
তিনি বলেন, অনেকে আছেন মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত থাকে আবার রাজনীতির সাথেও জড়িত থাকে। তাদের আমি ধিক্কার জানাই। বরিশালবাসীর প্রতি আহবান থাকবে, বঙ্গবন্ধুর যে স্বপ্ন সোনার বাংলা গড়ার, সেই স্বপ্নে যাতে আমরা পৌছাতে পারি সেজন্য সবাই মিলে মাদককে না বলি। বরিশালকে মাদকমুক্ত হিসেবে গড়ে তুলি।
বক্তব্যে শেষে মহামারি করোনার বিষয়ে সকলকে সচেতন থাকার জন্য আহবান জানিয়ে সকল বয়সী মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহবান জানান প্রতিমন্ত্রী।
পরে তিনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে উদ্দেশ্য করে বরিশালের বিসিক এলাকায় শান্তি বজায় রাখার আহবান জানান। এসময় তিনি বলেন, বরিশালে এমনিতেই শিল্প কারখানা কম। বরিশালে যারা শিল্প-কারখানা করছেন বা উদ্যোক্তা রয়েছেন তাদের যদি সহযোগীতা না করি তাহলে কিন্তু তারা এখানে কিছু করবে না। শিল্প কারখানা তৈরি না করলে নতুন প্রজন্ম চাকুরি পাবে না। আমাদের ছেলেদের চাকুরি ও কর্মসংস্থানের জন্য শিল্প কারখানা গড়ে উঠুক সেটাই আমি বলবো এবং এরজন্য সুন্দর একটা পরিবেশ আসা করবো। কোন অপরাধী যেন সেখানে বিচরণ না করতে পারে।
উল্লেখ্য বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের পক্ষ থেকে একটি রোলার দেয়া হয়েছে এবং সরকারি শিশু পরিবারের সদস্যদের জন্য ফরচুন সু ফ্যাক্টরীর পক্ষ থেকে খেলার সামগ্রী প্রদান করা হয়। এজন্য প্রতিমন্ত্রী ফরচুন সু ফ্যাক্টরীর মালিককে ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার ড. অমিতাভ সরকার(অতিরিক্ত সচিব), বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোঃ শাহাবুদ্দিন খান-বিপিএম(বার), জেলার পুলিশ সুপার মোঃ সাইফুল ইসলাম-বিপিএম(বার), বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক আলমগীর খান আলো।