সরকার ষড়যন্ত্রকারীদের নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে বৃহত্তর কর্মসূচি দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের আমির চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম।
মঙ্গলবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে পুরানা পল্টনে সাংবাদ সম্মেলনে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।
সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, ইসলাম চরিত্রগত ভাবেই শান্তিবাদী একটি ধর্ম। পবিত্র কুরআনে পরিষ্কার ভাবেই জোর করে কারো ওপরে ধর্ম চাপাতে নিষেধ করা হয়েছে। ফলে ইসলাম তার সাড়ে চৌদ্দশত বছরের ইতিহাসে কখনই কোনো জনপদে শক্তি প্রয়োগ করে ইসলামের কোনো বিধান চাপিয়ে দেয় নাই।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সমাজকে অপরাধমুক্ত রাখতে, কর্মমুখি করতে, সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে, সমাজের মানুষের মাঝে সম্প্রীতি, সহমর্মিতা ও সৌজন্যবোধ চর্চায় উলামায়ে কেরাম শান্তিপূর্ণভাবে যুগ-যুগ ধরে নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
চরমোনাই পীর বলেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতু প্রকল্পের ঢাকা কেন্দ্রের প্রবেশ দ্বারে বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে স্থাপিত হতে যাওয়া ভাস্কর্য নিয়ে একটি বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ৫/৭টি মসজিদ মাদ্রাসার মিলন মোহনায়, দু’টি মসজিদের অবকাঠামো ভেঙে এ পয়েন্টে ভাস্কর্য স্থাপনের ফলে স্থানীয় ইমাম মুসল্লি ও তৌহিদী জনতা সেখানে ভাস্কর্যের বদলে বিকল্প কোনো উত্তম পন্থায় বঙ্গবন্ধুকে স্মরণীয় করে রাখার দাবি জানিয়ে ছিলো। কিন্ত মূর্তি বা ভাস্কর্য নিয়ে বিরাজমান পরিস্থিতিকে আমরা দেশ বিরোধী অপশক্তির চক্রান্ত আকারে দেখছি।
তিনি বলেন, আমরা মনে করছি, ওরা বাংলাদেশের মানুষের ঐক্য বিনষ্ট করে ভিনদেশি এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চায়। সামাজিক ও ধর্মীয় অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে চায়। এ বিষয়টিতে সরকারের অবস্থান নিয়েও আমরা হতাশ। সাধারণ মানুষের নিয়মতান্ত্রিক একটি দাবিকে কেন্দ্র করে যখন কুচক্রিমহল দেশে উলামাদের বিরুদ্ধে উগ্রতা ছড়াচ্ছে, তখন তারা তা দমন না করে আরো উৎসাহ দিচ্ছে। ষড়যন্ত্রকারীদের নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে জনগণকে নিয়ে বৃহত্তর কর্মসূচি দেয়া হবে।
সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, আমরা মনে করি, তাদের এই ভূমিকা বরং বঙ্গবন্ধুকে ছোট করছে। তার সম্মানকে মানুষের চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক অবস্থানে ঠেলে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ভাস্কর্য ও মূর্তি ইস্যুতে চরম উস্কানির মুখেও দেশের শান্তি ও স্থিতিশিলতা বজায় রাখার স্বার্থে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সীমাহীন ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়ে এসেছে। কিন্তু এরই মাঝে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামের একটি ভূঁইফোড় সংগঠন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীমের নামে একটি জঘন্য মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। সঙ্গে আরো দুইজন বিশিষ্ট আলেম আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী ও মাওলানা মামুনুল হকের নামেও মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, সরকার যদি তাদের সুবিধাভোগী উগ্র সমর্থক এবং দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী শক্তিগুলোর বাড়াবাড়ি ও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সাধারণ দেশপ্রেমিক জনতা ও ধর্মপ্রাণ মানুষ তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বাধ্য হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন- নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই, প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, আলহাজ্ব খন্দকার গোলাম মাওলা, রাজনৈতিক উপদেষ্টা অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, ও মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, আলহাজ্ব আমিনুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, কেএম আতিকুর রহমান, আহমদ আবদুল কাইয়ূম, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাকী, মাওলানা নেছার উদ্দিন, বরকত উল্লাহ লতিফ, মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম, জিএম রুহুল আমীন, মাওলানা খলিলুর রহমান, এডভোকেট একেএম এরফানুল হক চৌধুরী, ছাত্রনেতা এম হাছিবুল ইসলাম, নুরুল করীম আকরাম ও এডভোকেট আবদুল বাসেত প্রমুখ।