২০২০ সাল। পুরোটা বছর দাঁড়িয়ে ছিল মৃত্যুর মুখোমুখি। বছর শেষে বৈশ্বিক মহামারির তাণ্ডবে বিশ্বব্যাপী মৃত্যু হয়েছে ১৮ লাখের বেশি মানুষের। আক্রান্ত হয়েছে আট কোটির বেশি মানুষ।
মানব সভ্যতার ইতিহাসে এমন বছর কমই এসেছে। পৃথিবী এমন মৃত্যুর বিভীষিকাময় মিছিল কমই দেখেছে। দুটি বিশ্বযুদ্ধ, একাধিক সংঘাত-রক্তপাত পেরিয়ে আসা পৃথিবীর সামনে ২০২০ সাল ছিল মৃত্যুপুরী।
হয়তো অতীতে প্লেগে, কলেরায়, কালাজ্বরে, ম্যালেরিয়ার এমন মহামারির প্রকোপ দেখা গেছে। তখন বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্যসেবার পশ্চাৎপদ পরিস্থিতিতে মানুষ ছিল অনেক বেশি অসহায়। উন্নত জীবনের বিজ্ঞানময় পরিস্থিতিতে উদ্ভূত করোনাভাইরাসের প্রকোপেও মানুষ একই রকম অসহায়ত্ব বোধ করেছে। অতি অগ্রসর দেশগুলোও ধ্বস্ত হয়েছে মহামারির করাল থাবায়।
চীন থেকে শুরু হয়ে বিশ্বের প্রতিটি কোণে, অতি প্রান্তীয় মেরুদেশেও ছড়িয়েছে ভাইরাস। বছর জুড়ে আগ্রাসন চালিয়ে আবার নতুন শক্তি ও রূপে দ্বিতীয় বা তৃতীয় ঢেউ তুলেছে মৃত্যুর। ভীত-বিহ্বল মানুষ চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিনাতিপাত করেছে বেঁচে থাকার আকুতিতে।
সাধারণ জীবন-যাপনের মতোই ভেঙ্গে পড়েছে ব্যবসা, বাণিজ্য, কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ, যোগাযোগ, পর্যটন, শিক্ষা ও যাবতীয় ব্যবস্থা। করোনার ক্ষতির ছাপ মৃত্যু ও আক্রান্তের পাশাপাশি দেখা গেছে সর্বস্তরে।
তথাপি লড়াকু মানুষ অবিরাম যুদ্ধ করে চলেছে করোনা মহামারির বিরুদ্ধে। ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা, চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা অকাতরে মারা গেছেন। তবুও লড়াই চলেছে মহামারির বিরুদ্ধে। শেষ পর্যন্ত এসেছে ভ্যাকসিনের সুসংবাদ।
করোনা বিরূপতার ‘নিউ নর্মাল’ পটভূমিতে মানুষ শিখেছে অনেক কিছু। মাস্ক, স্বাস্থ্যবিধি, সঙ্গরোধ, সামাজিক দূরত্বকে করেছে জীবনশৈলীর অঙ্গ। লকডাউন, কোয়ারেন্টাইনের মতো পরিস্থিতিতেও নিত্য পরিচালিত করেছে জীবনের অদম্য গতিকে।
২০২০ সাল যেন মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জীবনকে আলিঙ্গনের বছর। মৃত্যুর শোক-তাপ-শূন্যতা অতিক্রম করে জীবনের পথে চলার বছর ছিল ২০২০ সাল। করোনা-দগ্ধ যে পৃথিবী মৃত্যুর উপত্যকায় পরিণত হয়েছে, তাকে আবার সবুজ ও প্রাণময় করার প্রত্যয়ও জেগেছে বছরের শেষলগ্নে। আশাবাদে ও প্রত্যাশায় সারা পৃথিবী বিদায় জানাচ্ছে, বহতা বেদনায় অশ্রুস্নাত ও অযুত মৃত্যুচিহ্নিত ২০২০ সালকে।