শামীম আহমেদ:
দূরপাল্লা রুটের বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানীর বরিশালে কর্মরত ৩ শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী মানবেতর জীবনযাপন করছে। বছরের পর বছর ধরে বাজারের সাথে সঙ্গতিহীন বেতন-ভাতা দেয়ায় ক্ষুব্ধ তারা। শ্রমিক ইউনিয়ন, বাস মালিক সমিতি, এমনকি সংশ্লিস্ট পরিবহন কোম্পানীগুলোর কাছে বারবার আবেদন-নিবেদন করেও সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে পারেননি তারা। তাই বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবীতে আজ বুধবার থেকে অনির্দিস্টকালের কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন বরিশালের দূরপাল্লার ২৪টি কাউন্টারের ৩ শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী। বরিশাল জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন শ্রমিকদের এই আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের সভাপতি ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. জাহাঙ্গীর হোসেন।
বরিশালের নথুল্লাবাদ কেন্দ্রিয় বাস টার্মিনালে দূরপাল্লা রুটের সৌদিয়া পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার ইমাম হোসেন বলেন, বাস মালিকরা শ্রমিকদের কাছ থেকে সব কিছু পায়। কিন্তু বিনিময় তারা কোন কিছুই দেয় না। ইমাম অভিযোগ করে বলেন, বর্তমান সময়ে একজন দৈনিক শ্রমিকের বেতনও ৫ থেকে ৬শ’ টাকার কম নয়। কিন্তু বাস মালিকরা কাউন্টার কর্মচারী ও কলারম্যানদের মাত্র সাড়ে ৫ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা বেতন দিচ্ছে। সাকুরা এবং সৌদিয়া ছাড়া অন্যরা ঈদ বোনাসও দিচ্ছে না। দির্ঘদিন ধরে মালিকদের কাছে আবেদন-নিবেদন করেও কোন সুফল হয়নি। তাই আজ বুধবার সকাল ৬টা থেকে কর্মবিরতিতে যাবেন তারা। অফিস খোলা থাকলেও কেউ কলম ধরবে না, টিকেট বিক্রি করবে না। যতদিন পর্যন্ত বেতন বৃদ্ধি হবে না হবে শ্রমিকদের কর্মবিরতি চলবে।
বরিশাল-ঢাকা রুটের সুগন্ধা পরিবহনের স্থানীয় কাউন্টার ম্যানেজার মতিউর রমান বলেন, কলারম্যানদের মাধ্যমেই যাত্রীরা আসে। অথচ তাদের দৈনিক বেতন মাত্র ১৬০ থেকে ২শ’ টাকা। এই টাকায় তাদের সংসার চলে না। বেতন বাড়ানোর জন্য এর আগে শ্রমিক ইউনিয়নের মাধ্যমে মালিকদের সাথে সমঝোতার চেস্টা করা হয়েছিলো। কিন্তু কোন সুরহা হয়নি। তাই কলারম্যানরা কাল (বুধবার) থেকে কোন কাজ করবেনা বলে তাদের জানিয়ে দিয়েছেন।
জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি নগরীর ২৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ১৬০ টাকায় একজন শ্রমিকের কি হয়। তাদের সারাদিনের চা-পানির খরচও হয় না ১৬০ টাকায়। তার উপর সংসার চালাতে হয়। মালিকদের কাছে এর আগে শ্রমিকদের মানবেতর জীবনের কথা বলে বেতন বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছিলো। কিন্তু দুই একজন বাদে কেউ শ্রমিকদের বেতন বাড়ায়নি। নিরুপায় হয়ে বুধবার সকাল থেকে কাউন্টার শ্রমিকরা কর্মবিরতি করবে বরে শ্রমিক ইউনিয়নকে জানিয়েছে। শ্রমিক ইউনিয়ন তাদের দাবীর প্রতি সমর্থন দিয়ে সাথে থাকার ঘোষনা দিয়েছে। এই কর্মসূচীর ফলে দূরপাল্লার রুটের যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়বে বলে স্বীকার করেন শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি জাহাঙ্গীর।