নিউজ ডেস্ক:
ফরিদপুরের চাঞ্চল্যকর আকলিমা আক্তার সোনিয়া (৩০) হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি সোনিয়ার প্রেমিক মো. আনিস শেখকে (২৩) গ্রেফতার করেছে র্যাব-৮ । মঙ্গলবার দুপুরে শহরের নিউ মার্কেট এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
বিকেলে ফরিদপুর র্যাব-৮ ক্যাম্পে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৮ ফরিদপুর ক্যাম্পের কোম্পানি অধিনায়ক মেজর শেখ নাজমুল আরেফিন পরাগ জানান, গত ২০ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সদর উপজেলার রায়ের ডাঙ্গী নান্নু চেয়ারম্যানের লেক সংলগ্ন সিএন্ডবি ঘাট এলাকা থেকে আকলিমা আক্তার সোনিয়ার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটা ক্লুলেস হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাসেল দেওয়ান বিজ্ঞ আদালতে আকলিমা হত্যার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। রাসেলের জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডে দ্বিতীয় আসামি মো. আনিস শেখ ও মো. ছালাম শেখ (৩৫) জড়িত আছে বলে তথ্য পাওয়া যায়।
এরপর থেকে র্যাবের একটি চৌকস দল পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের জন্য গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যহত রাখে এবং জানতে পারে যে আসামি মো. আনিস শেখ ঘটনার পর থেকে রাজশাহী ও পাবনা এলাকায় আত্মগোপন করে আছে। মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ পাওয়া যায় আনিস শেখ ফরিদপুরে এসেছে। তাৎক্ষণিকভাবে শহরের নিউ মার্কেট এলাকায় অভিযান চালিয়ে আনিস শেখকে গ্রেফতার করা হয়।
আনিস শেখের বরাত দিয়ে মেজর শেখ নাজমুল আরেফিন পরাগ জানান, আকলিমার সঙ্গে ছালাম শেখের বিয়ে হয় ১০ বছর আগে। কয়েকমাস আগে তাদের ডিভোর্স হয়। ডিভোর্সের পর আনিস শেখের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে আকলিমার। প্রেমের সূত্র ধরে আনিস আকলিমাকে ডেকে নিয়ে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। এরপর আনিস ও ছালাম পরিকল্পনা করে আকলিমাকে ধর্ষণ করে হত্যা করে।
১৯ সেপ্টেম্বর বিকেলে আনিস ও ছালাম আকলিমাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ছালাম তার দোকান থেকে লোহার রড নিয়ে এবং একটা মাইক্রোবাস ভাড়া নিয়ে ১৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। মোবাইল ফোনে আকলিমার সঙ্গে যোগাযোগ করে আনিস শিবরামপুর থেকে আকলিমাকে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। এর আগেই ছালাম মাইক্রোবাসের পেছনের ছিট ও ডালার ফাঁকে লুকিয়ে পড়ে।
পরে আনিস চলন্ত গাড়িতে আকলিমাকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের পরে ছালাম লুকানো স্থান থেকে বের হয়ে এসে আকলিমাকে লোহার রড দিয়ে মারপিট করে, তখন আনিসও ছালামের সঙ্গে আকলিমাকে কিল, ঘুষি, লাথি ও লোহার রড দিয়ে মারপিট করে হত্যা করে। পরে তারা আকলিমার মরদেহ নিয়ে বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে ঘুরে ফরিদপুর সিএন্ডবি ঘাটের নিকটে রাস্তার পাশে ফেলে দিয়ে মাইক্রো চালিয়ে মধুখালী ও বালিয়াকান্দি দিয়ে কালুখালী পৌঁছায়। আনিস, ছালাম ও রাসেল কালুখালী তেল পাম্প থেকে গাড়িতে তেল নিয়ে গাড়ি আনিসের বাড়ির সামনে নদীর ধারে রেখে নদীর পানি দিয়ে সম্পূর্ণ গাড়ি খুব ভালোভাবে ধুয়ে এবং আকলিমার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও ভ্যানিটি ব্যাগ নদীর পানিতে ফেলে দিয়ে রাতে গাড়ি মালিকের কাছে গাড়ি বুঝে দিয়ে নিজ নিজ বাড়িতে চলে যায়।
গত ২০ সেপ্টেম্বর তালতলা এলাকা থেকে চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের জমাদ্দার ডাঙ্গী গ্রামের আব্দুল ওহাব শেখের মেয়ে আকলিমা আক্তার সোনিয়ার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই দিনই কোতোয়ালি থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন সোনিয়ার বাবা।