নিউজ ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে থাকছে ১১টি ইস্যু। আর সই হতে পারে ১০ থেকে ১২টি সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি। নয়াদিল্লিতে এ বৈঠকে তিস্তাসহ আটটি অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন নিয়ে কাঠামোগত চুক্তির ব্যাপারে আলোচনা হবে।
বৃহস্পতিবার চার দিনের ভারত সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী শনিবার শেখ হাসিনা-নরেন্দ্র মোদি বৈঠক হবে। গত জানুয়ারিতে টানা তৃতীয় মেয়াদে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর এটি তার প্রথম ভারত সফর।
বুধবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ভারত সফরের প্রথম দু’দিন ৩ ও ৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লিতে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের আয়োজনে ‘ইন্ডিয়ান ইকোনমিক সামিটে’ অংশ নেবেন। সম্মেলনের প্রথম দিন প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ১০০টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ফোরাম ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস কাউন্সিলের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপে অংশ নেবেন।
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতা অধিকতর বৃদ্ধির বিষয়ে অন্য অতিথিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সিঙ্গাপুরের উপপ্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী হেং সুই কিটসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অংশ নেবেন।
দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের আলোচ্যসূচি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, শনিবার দিল্লিতে স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১১টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক শুরু হবে। বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নানা বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।
বৈঠকে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে ১১টি বিষয়ে আলোচনার কথা রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- সীমান্তে হত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা ও চোরাচালান বন্ধের বিষয়ে সহযোগিতা বৃদ্ধি, উভয় দেশের মধ্যে জনযোগাযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্নমুখী উদ্যোগ গ্রহণ এবং বাংলাদেশের নাগরিকদের ভারতীয় ভিসা থাকা সাপেক্ষে আরও অবাধ যাতায়াতের ব্যবস্থা গ্রহণ, সন্ত্রাসবাদ রোধ এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার লক্ষ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি, সার্বিক বাণিজ্যিক ও আর্থিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের ওপর আরোপিত অ্যান্টিডাম্পিং ও অ্যান্টিসারকামভেশন শুল্ক প্রত্যাহার, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নৌ ও সমুদ্রপথে যোগাযোগ বৃদ্ধি, ‘বিবিআইএন এমভিএ’ চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ, গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা, উন্নয়ন ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর ও বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনের বিষয়ে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ এবং রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে ভারতের সহযোগিতা।
এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন জানান, বৈঠকে কতটি সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি স্বাক্ষর হবে, তা এ মুহূর্তে সুনির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। তবে ১০ থেকে ১২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে।
অপর একটি প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিস্তাসহ অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টনের বিষয় এবং এনআরসি প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা তোলা হবে। তিনি বলেন, তিস্তাসহ আটটি অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনে কাঠামোগত চুক্তির বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
ভারতের রাষ্ট্রপতি ও সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক: সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সফরকালে শনিবার প্রধানমন্ত্রী ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এ দিন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকরও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
সফরের চতুর্থ দিন ৬ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতীয় কংগ্রেসের অন্তর্বর্তী সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এ দিনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকায় ফিরবেন।