গভীর রাতে ববি’র ঘুমন্ত ছাত্রদের বাসায় বাসায় নির্মমভাবে বর্বর হামলা
উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় এলাকাবাসী, চারদিকে নিন্দার ঝড়,
ডেস্ক রিপোর্ট ॥
গভীর রাতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিত বর্বর হামলা চালিয়েছে রুপাতলী বাসস্ট্যান্ডের পরিবহন শ্রমিকরা।
তাদের এ সন্ত্রাসি হামলায় কমপক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (১৭ ফেব্রুয়ারী) দিনগত রাত দেড়টার দিকে নগরীর রুপাতলী এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। ছাত্ররা অভিযোগ করে জানিয়েছে, দীর্ঘ সময় ধরে ববি প্রশাসন ও শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সাহায্য চেয়েও তা পাওয়া যায়নি। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ গেলেও তাদের উপস্থিতিতেই ঘটে এসব ঘটনা। এ ঘটনায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগসহ নিন্দা জানিয়েছেন আপামর জনসাধারণ।
আহত শিক্ষার্থীরা বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদিকে এই ঘটনার প্রতিবাদে গভীর রাতে ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক কিছুক্ষণ অবরোধ ও রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভের পর বুধবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আবারও সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। এসময় ঢাকা টু কুয়াকাটাগামী একটি বাসে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
আহত শিক্ষার্থীরা জানান, মঙ্গলবার দুপুরের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে মারধর ও লাঞ্ছিত করেন বরিশাল নগরীর রুপাতলী বাসস্ট্যান্ডের বিআরটিসি কাউন্টারের দায়িত্বরত স্টাফ রফিক।
এ সময় সহপাঠীর ওপর হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষার্থীরা ওই কাউন্টারে ভাঙচুর চালান এবং বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। পরে রফিককে গ্রেফতার করা হলে শিক্ষার্থীরা ২ ঘণ্টা পরে সড়ক অবরোধ তুলে নেন।
শিক্ষার্থীদের দাবি, এর জের ধরে মঙ্গলবার (১৭ ফেব্রয়ারী) দিনগত রাত দেড়টার দিকে রুপাতলী হাউজিং এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অবরোধের নেতৃত্ব দেয়া মাহমুদুল হাসান তমালের মেসে আক্রমণ করেন কতিপয় পরিবহন শ্রমিকরা। এ সময় দুইজন শিক্ষার্থীকে মারধর করে ডোবায় ফেলে দেন হামলাকারীরা।
সে সময় ঘটনা জানিয়ে ফেইসবুকে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে মাহমুদুল হাসান তমাল সাহায্যের আহ্বান জানান। তাতে তিনি বলেন, শিপন মিয়ার নেতৃত্বে একদল লোক লাঠিসোটা নিয়ে তার ছোট ভাইদের ওপর হামলা চালাচ্ছেন। আর এ ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তমালকে উদ্ধারে এগিয়ে আসেন পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন মেসের শিক্ষার্থীরা। তখন ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা দিয়ে আগত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হয়।
আহত শিক্ষার্থীরা হলেন, মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের নুরুল্লাহ সিদ্দিকী, রসায়ন বিভাগের এস এম সোহানুর রহমান, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের আহসানুজ্জামান, গণিত বিভাগের ফজলুল হক রাজীব,সমাজবিজ্ঞান বিভাগের আলীম সালেহী, বোটানি ও ক্রপ সাইন্সের আলী হাসান, বাংলা বিভাগের মো. রাজন হোসেন এবং মার্কেটিং বিভাগের মাহবুবুর রহমান,মাহাদী হাসান ইমন, মিরাজ হাওলাদার ও সজীব শেখ। যারা বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এদিকে গভীর রাত থেকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মোতায়েন থাকলেও ক্রমশই যেন পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
এদিকে এ ঘটনার পর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে রাতেই আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ ও বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে বুধবার (১৭ ফেব্রয়ারী) সকালেও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সম্মুখে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষাভ করেন শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন তারা।
এদিকে, দিনভর বিক্ষোভ ও সড়ক আটকের রাখার পর প্রশাসনের আশ্বাসে অবরোধ প্রত্যাহার করেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সাদেকুল আরেফিন জানান, ছাত্রদের উপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, শিক্ষার্থীদের আবাসন নিরাপাত্তা নিশ্চিত করাসহ তাদের তিন দফা দাবি ছিল। তাদের যৌক্তিক দাবিগুলো বাস্তবায়নের আশ্বাসে তারা ঘরে ফিরে গেছেন।
রাতের আঁধারে ছাত্রদের উপর হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন উপাচার্য।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ কমিশনার মোক্তার হোসেন বলেন, “আমরা আশ্বাস দিয়েছি দ্রুত সময়ের মধ্যে হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে। এর প্রেক্ষিতে ছাত্র-ছাত্রীরা সড়ক ছেড়ে দিয়েছে। বিকেল থেকে যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে।”
তিনি জানান, ছাত্ররা সড়ক অবরোধ করে গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। সব ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশের পক্ষ থেকে বারবার তাদেরকে শান্ত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের হামলায় নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করেছেন বরিশাল-পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওসার হোসেন শিপন।
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের সাথে ঝামেলা হয়েছে বিআরটিসির স্টাফদের সাথে। বিআরটিসি সরকারি প্রতিষ্ঠান। এখানে মিনিবাস মালিক, শ্রমিকদের কোনো বিষয় নেই। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’
তবে বৈঠক শেষেও ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। তারা হামলাকারীদের বিচারের দাবীতে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিয়ে মিছিল করছেন। শিক্ষার্থীরা জানান, তারা বৈঠকে তিন দফা দাবীর কথা তুলে ধরেছেন। যা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। দাবীগুলো হলো, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার করা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় মামলা করা, এমন ঘটনার পুরনাবৃত্তি না হয় তার নিশ্চয়তা দেওয়া এবং হলের বাইরের অনাবাসিক শিক্ষাথীদের পুরোপুরি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. সুব্রত কুমার দাস জানান, রাতে সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান তিনি সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক-কর্মকর্তাবৃন্দ। পরবর্তীতে আহত সকল শিক্ষার্থীর চিকিৎসা ব্যবস্থা করা হয়।
বরিশাল কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, অভিযুক্তদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।