নিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ ও নিখুঁত চার্জশিট (অভিযোগপত্র) শিগগিরই দাখিল করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী এ কথা জানান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বুয়েটে আপনারা নৃশংস হত্যাকাণ্ড দেখেছেন। এটা কারো কাম্য নয়। কেন এ হত্যাকাণ্ড, কী উদ্দেশ্য ছিল সবকিছু এখন তদন্ত করা হচ্ছে। আপনারা ইতোমধ্যে শুনেছেন যারা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল কিংবা যারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, আমরা ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্ত করেছি। আমরা ১৪ জনকে ইতোমধ্যে ধরেছি। তারপর আরও যদি কেউ জড়িত থাকে। সবাইকে আমরা ধরব।’
মন্ত্রী বলেন, ‘গতকাল আমাদের প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে অত্যন্ত শক্ত ভাষায় কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, যারা এই দুষ্কৃতকারী, যারা এ ধরনের কাণ্ডকারখানা ঘটায়, সেটার সঙ্গে রাজনৈতিক কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমরা সে বিষয়ে কঠিন ও কঠোর। তিনি পাশাপাশি এ কথাও বলেছেন, কোনো ইনফরমেশন (তথ্য) কিংবা কোনো কিছু থাকে কিংবা নাও থাকে তাহলে প্রত্যেকটি ছাত্রাবাস যেন তল্লাশির আওতায় নিয়ে আসা হয়।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর যে নির্দেশনা দিয়েছেন আমরা অবশ্যই সবগুলো সামনে নিয়ে কাজ করছি।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি মনে করি পুলিশ যথাসময়ে তাদের (আবরার হত্যাকারী) অ্যারেস্ট (আটক) করতে সক্ষম হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে হল থেকে তারা বের হতে পারেনি, এর আগেই তারা ধরা পড়েছে।’
আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আমরা আশা করি শিগগিরই, খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেই এ মামলার পূর্ণাঙ্গ চার্জশিট প্রদান করতে পারব। আমাদের পুলিশ সেই কাজটি করছে। চার্জশিট যাতে নিখুঁত হয়, সবকিছু যাতে নির্ভুল হয়; সেজন্য পুলিশ ইতোমধ্যে কাজ শুরু করছে। আমরা আশা করি একটা নিখুঁত চার্জশিট দিয়ে বিচারের কাজটি দ্রুততার সাথে শেষ হয়, আমরা সেই কাজটি সহজতর করব। আমরা সেটাই করছি।’
সমালোচনার মুখে বুয়েটের ছাত্রলীগ নেতা অমিত সাহাকে আজ আটক করা হয়েছে, কিন্তু তার নামে মামলা হয়নি- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি যতটুকু শুনেছি, আমি শিওর না- অমিত সাহাকে ঠিক সেই মুহূর্তে পায়নি, সেই মুহূর্তে সে ছিল না। তার সাথে যোগাযোগ করলে সে বলেছিল সে পূজার ছুটিতে বাইরে গেছে। যাই হোক, যেভাবে হোক, তাকেও ধরা হয়েছে।’
‘মামলায় আবরারের বাবা কিছু নাম দিয়েছিলেন, সেই নামের বাইরেও কিন্তু পুলিশ যাদের সম্পৃক্ততা পাচ্ছে তাদের ধরছে। অমিত সাহা কিংবা যে কেউ হোক আমাদের কাছে ফ্যাক্টর নয়, আমাদের কাছে ফ্যাক্টর সে অপরাধী কিনা, সে অপরাধী হলেই আমরা ধরছি।’
কবে নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে তল্লাশি চালানো হবে- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করে নেব। কোথায় কীভাবে করব? আমাদের আরও কিছু ফর্মালিটিজ (আনুষ্ঠানিকতা) পালন করতে হয়, সেটা আপনারা জানেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে এটা করব। আমরা কলেজগুলোর ছাত্রবাসেও এটা (তল্লাশি) করব।’
টর্চার সেল অনেক ক্লাবে আছে, সেগুলোতেও তল্লাশি হবে কি না- এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দেখুন টর্চার সেল একটা ক্লাবে ছিল, সেখানে টেন্ডারবাজির একটা ব্যাপার-স্যাপার ছিল। হলগুলোতো ছাত্ররা থাকে। সেখানে টর্চার সেল কতখানি ছিল, কতখানি আছে কতখানি না আছে সেগুলো আমরা সবই দেখব।’
র্যাগিং কালচার আইন করে বন্ধ করার কোনো চিন্তা-ভাবনা করছেন কি না- এ বিষয়ে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘খুব বেশি রকমভাবে এ কালচারটা রয়েছে বুয়েটে, জাহাঙ্গীরনগর ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেভাবে নেই। যারা ছাত্র নেতৃত্ব দেন, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ তাদেরও চিন্তা করার সময় হয়েছে। তারা এই কালচার থেকে কীভাবে বেরিয়ে আসবেন, আমার মনে হয় তাদেরও চিন্তা-ভাবনা করা উচিত এই মুহূর্তে।’
শুদ্ধি অভিযান চলবে কি না, একটি ইস্যুর কারণে আরেকটা ঢাকা পড়ে যাচ্ছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, ‘না না, ঢাকা পড়েনি। প্রধানমন্ত্রী খুব সুন্দর করে গতকাল ব্যাখ্যা দিয়েছেন, এরপর আর আমার কিছু বলার নেই। আমি শুধু এইটুকু বলব, আমি সবসময় বলে আসছি, প্রধানমন্ত্রী যে নির্দেশনা দিয়েছেন… তৃতীয়বারের মতো তিনি রাষ্ট্রভার পালন করছেন, এখন তিনি রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছেন। টেকসই শান্তি ও উন্নয়ন ধরে রাখার জন্য সুশাসন একদম অপরিহার্য। আমরা এটা প্রতিষ্ঠিত করব। আমরা এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুদ্ধি অভিযান সবসময়ই হয়। ইদানিং যারা মাত্রার বাইরে চলে গেছে প্রধানমন্ত্রী তাদের ব্যাপারে অ্যাকশন নিচ্ছেন এবং নির্দেশনা দিচ্ছেন। দেশের সুশাসন প্রতিষ্ঠিত করার জন্য যা যা প্রয়োজন আমরা করব। শুদ্ধি অভিযান বলুন, টেন্ডারবাজদের নিয়ন্ত্রণ বলুন, যা কিছু প্রয়োজন হয়- কোনোটাই আমরা বাদ দিচ্ছি না।’