অনলাইন ডেস্ক:
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেছেন, ঘটনাস্থলে হয়তো অমিত সাহা উপস্থিত ছিলেন না। কিন্তু প্রাথমিক তদন্তে আবরার হত্যায় প্রত্যক্ষভাবে না থাকলেও পরোক্ষভাবে তার দায়দায়িত্ব রয়েছে। তদন্ত, পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে তা উঠে এসেছে।
বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) দুপুর আড়াইটায় ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন তিনি।
মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আইন অনুযায়ী বলতে পারি, অপরাধের সঙ্গে জড়িত কেউ ঘটনাস্থলে থেকেও করতে পারে আবার ঘটনাস্থলে না থেকেও করতে পারে। অনেক ঘটনায় দেখা গেছে, ঘটনাস্থলে না থেকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এক্ষেত্রে তেমনই কিছু ঘটেছে।’
তদন্তকারী সংস্থা ডিবিও জানতে চাচ্ছে ঘটনার মোটিভটা কী? আসলে কি হত্যার জন্যই আবরারকে ডেকে নেয়া হয়েছিল, না কি অন্য কারণে হত্যা করা হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মোটিভটা আমরা পরিষ্কার করে বলছি না। তবে আমরা প্রাথমিকভাবে ক্লিয়ার মোটিভ পেয়েছি। তবে এটা স্পষ্ট যে, অনেকগুলো ঘটনার সমষ্টিতে আবরার হত্যা। তদন্ত শেষ হলে মোটিভটা ক্লিয়ার করে বলব।’
এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ১৫ জনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ওই রাতে আসলে আবরার হত্যায় কতজন জড়িত ছিল? টর্চারসেলে কারা ছিল? জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তদন্তে ক্লিয়ার পিকচার নেয়ার চেষ্টা করছি। কারা ছিল কারা ছিল না তা যাচাই করা হচ্ছে। যেহেতু মারার কোনো সুনির্দিষ্ট ছবি কিংবা ভিডিও নেই। তবে এমনও তো হতে পারে যে আশপাশের রুমের কেউ ঘটনা শুনে আসছে। আবার কেউ কেউ এমনও থাকতে পারে যে, ছবিতে নেই কিন্তু ঘটনাস্থলে ছিল বা মারের সঙ্গে জড়িত। এর সবই তদন্ত করা হচ্ছে। ক্লিয়ার পিকচার পেতে কিছুটা সময় লাগছে।’
গত ৫ অক্টোবর দিবাগত রাতে বুয়েটের ত্রিপলীর দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদ শেরেবাংলা হলে নৃশংসভাবে খুন হন। খুনের ঘটনার পর পুলিশের অনেকগুলো টিম আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করেছে। পাশাপাশি তদন্ত কাজও শুরু করেছে বলে ডিএমপির এই কর্মকর্তা জানান।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘এ ঘটনায় আবরারের বাবা মোট ১৯ জনকে আসামি করে মামলা করেন। ঘটনা জানার পরপরই পুলিশ তৎপর হয়। নৃশংস ঘটনাটি যারা ঘটিয়েছে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে এজাহার দায়েরের আগেই ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। আদালতে সোপর্দ করে ১০ জনকে মোট পাঁচদিন করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। এজাহারের পর দ্রুততার সঙ্গে আরও পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এজাহার একটি প্রাথমিক তথ্য বিবরণী। প্রাথমিক তথ্য বিবরণীর বাইরে যাদের নাম আসছে তাদের নামও উঠে আসছে। সেই সূত্র ধরে এজাহারে নাম নেই কিন্তু তদন্তে ও অন্য গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এবং বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে আরও কয়েকজনের জড়িত থাকার তথ্য পেয়ে আরও তিনজনকে গ্রেফতার করি। যাদের নাম এজাহারে ছিল না। প্রথম গ্রেফতার ১০ জনের সঙ্গে পরে গ্রেফতার তিনজনও রিমান্ডে রয়েছে। আজও ডিবির কয়েকটি টিম কাজ করছে। আজও দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
মনিরুল ইসলাম বলেন, এজাহারবহির্ভূত গ্রেফতাররা হচ্ছেন- অমিত সাহা, মো. মিজানুর রহমান ওরফে মিজান ও শামসুল আরেফিন আরাফাত। প্রাথমিক তদন্তে ও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় গ্রেফতার করা হয়েছে।’
রোববার (৬ অক্টোবর) দিবাগত মধ্যরাতে বুয়েটের সাধারণ ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ফাহাদকে শেরেবাংলা হলের দ্বিতীয় তলা থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান। সোমবার (৭ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বুয়েটের শেরেবাংলা হলের যে ২০১১ নম্বর কক্ষে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়; সেই কক্ষটি অমিত সাহার। তার বিরুদ্ধে আবরারকে হত্যার অভিযোগ থাকলেও মামলায় তাকে আসামি না করায় এবং তিনি গ্রেফতার না হওয়ায় সমালোচনা চলছিল।
আবরার ফাহাদ হলে আছেন কিনা সে বিষয়ে প্রথম খোঁজ নিয়েছিলেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের উপ-আপ্যায়ন সম্পাদক অমিত সাহা। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় অমিত সাহা আবরারের এক বন্ধুকে ইংরেজি অক্ষরে ‘আবরার ফাহাদ হলে আছে কিনা’ মেসেজ দেন।
মেসেজের এক ঘণ্টার মধ্যেই শেরেবাংলা হলের তথাকথিত সিনিয়র ভাইয়েরা অর্থাৎ ছাত্রলীগ নেতারা তাদের সহপাঠীদের আবরারের ১০১১ নম্বর কক্ষে পাঠিয়ে তাকে ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে আসার নির্দেশ দেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার সবুজবাগ থেকে অমিত সাহাকে গ্রেফতার করা হয় বলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মাহবুব আলম নিশ্চিত করেছেন। এ ছাড়া আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় তার রুমমেট মিজানকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর রুম থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ। মিজান বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াটার রিসোর্চ অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন, কৃষ্ণপদ রায়, যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম ও ডিসি (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।