বিজ্ঞপ্তি:
দৈনিক শাহনামার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। জাতীয়, রাজনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন সহ সকল সংবাদের সর্বশেষ আপডেট জানতে ভিজিট করুন www.shahnamabd.com

দক্ষিণাঞ্চলে খুলছে দেড় হাজার কোটি টাকার সেতু

দক্ষিণাঞ্চলে খুলছে দেড় হাজার কোটি টাকার সেতু

শামীম আহমেদ:
ঢাকা-ফরিদপুর-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কে পায়রা নদীর ওপর এক হাজার ৪৭০ মিটার (প্রায় দেড় কিলোমিটার) দীর্ঘ লেবুখালী সেতুর নির্মাণকাজ শেষের দিকে। সবকিছু ঠিক থাকলে জুলাইয়ে সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচল শুরু হওয়ার আশা করছে কর্তৃপক্ষ। ওপেক এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে দেশে দ্বিতীয়বারের মতো নির্মিত হচ্ছে ‘এক্সট্রা ডোজ প্রি-স্ট্রেসড বক্স গার্ডার’ টাইপের এ সেতুর ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৪৪৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এদিকে সেতুটি খুলে দেওয়া হলে ফেরি পারাপারের দুর্ভোগ ঘুচবে। আর এ সেতুর বদৌলতে পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনার দ্বারও খুলে যাবে বলছেন সংশ্লিষ্টরা। সেতুটি চালু হলে কক্সবাজারের চেয়েও কাছের দূরত্বে চলে আসবে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। ঢাকা থেকে কুয়াকাটা পৌঁছাতে সময় লাগবে মাত্র সাত ঘণ্টা। জানা যায়, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারেনি চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

জুলাই মাসের মধ্যে সেতুর কাজ শেষ হওয়ার আশ্বাসের কথা শুনিয়েছেন সড়ক ও জনপদ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুস সবুর। সেতুর প্রকল্প পরিচালক আবদুল হালিম বলেন, কর্ণফুলী দ্বিতীয় সেতুর আদলেই নির্মাণ করা হয়েছে ফোর লেন লেবুখালী সেতু। পায়রা নদীর মূল অংশের ৬৩০ মিটার ‘বক্স গার্ডার’ চারটি স্প্যানের ওপর নির্মিত হয়েছে। যার মূল অংশ ২০০ মিটার করে দুটি স্প্যান ১৮.৩০ মিটার ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স রাখা হয়েছে পায়রা সমুদ্রবন্দরে উপকূলীয় পণ্য ও জ্বালানিবাহী নৌযান চলাচলের জন্য। এছাড়া সেতুর মূল অংশের দু’প্রান্তে ৮৪০ মিটার ভায়াডাক্ট-এ ৩০ মিটার করে ২৮টি স্প্যানে বর্ধিত অংশের ভার বহন করছে। লেবুখালী সেতুর ৩২টি স্প্যান এখন দাঁড়িয়ে আছে ৩১টি পিয়ারের ওপর। সেতুটির ২৮টি স্প্যানের ১২টি বরিশাল প্রান্তে এবং ১৬টি পটুয়াখালী প্রান্তে। তিনি আরও জানান, মূল সেতু ও তার ভায়াডাক্টের জন্য টেস্ট পাইল, ওয়ার্কিং পাইল, পিয়ার ক্যাপ, পিয়ার এবং ভায়াডাক্টসহ সাব-স্ট্রাকচার নির্মাণ করা হয়েছে।

ভায়াডাক্টের ওয়ার্কিং পাইলসহ পাইল ক্যাপ, অ্যাবাটমেন্ট ওয়ালও কঠোর মান নিয়ন্ত্রণে সম্পন্ন হয়। মূল সেতুটি বিভিন্ন মাপের ৫৫টি টেস্ট পাইলসহ ১০টি পিয়ার, পাইল ও পিয়ার ক্যাপের ওপর নির্মিত হয়েছে। এছাড়া ১৬৭টি বক্স গার্ডার সেগমেন্ট রয়েছে সেতুতে। যার ফলে দূর থেকে সেতুটিকে মনে হবে ঝুলে আছে। এছাড়া পায়রা নদীতে জোয়ারের সময় নদী থেকে সেতু ১৮.৩০ মিটার উঁচু থাকবে। এতে নদীতে বড় বড় জাহাজ চলাচলে কোনও সমস্যা হবে না বলে জানান তিনি। প্রকল্প পরিচালক আরও বলেন, খরস্রোতা পায়রা নদীর ভাঙন থেকে লেবুখালী সেতু রক্ষায় পটুয়াখালী প্রান্তে এক হাজার ৪৭৫ মিটার নদী শাসন কাজ চলছে। সেতুর ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বরিশাল প্রান্তেও নদী শাসনের প্রয়োজন।

প্রকল্পের আওতায় বরিশালে একটি প্রশাসনিক ভবনও নির্মাণ করা হচ্ছে। সৌর বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হবে লেবুখালী সেতু। এদিকে সেতুর টোল আদায়ের জন্য পটুয়াখালী প্রান্তে নির্মিত হচ্ছে টোল প্লাজা। ডিজিটাল পদ্ধতিতে টোল আদায় করা হবে। বরিশাল প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কাজী মিরাজ বলেন, সেতুটি খুলে দেওয়ার পর পদ্মার এ পাড়ের ১১ জেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হবে। বরিশাল থেকে কুয়াকাটা যেতে সময় লাগবে মাত্র দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। পদ্মা সেতু খুলে দিলে পর্যটন শিল্পের প্রসার হবে। কুয়াকাটাসহ সারা দেশের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগে কোনও ফেরির প্রয়োজন হবে না। এমনকি উত্তরবঙ্গের সঙ্গেও কুয়াকাটার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করবে এ সেতু। ঢাকা থেকে কুয়াকাটা কক্সবাজারের চেয়ে কাছে হবে। ঢাকা থেকে কুয়াকাটায় যেতে সময় লাগবে মাত্র ৭ ঘণ্টা। সড়ক ও জনপদ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী বলেন, আর মাত্র ৫ ভাগ কাজ বাকি রয়েছে। যা শেষ করতে দ্রুতগতিতে কাজ চলছে। এতে আগামী মাসের মধ্যে সেতুর সব কাজ শেষ করে খুলে দেওয়া সম্ভব হবে। সেতু নির্মাণকাজের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রধান প্রকৌশলী বলেন, বর্তমান সরকার সব অবকাঠামো টেকসই ও গুণগতমান রক্ষা এবং বজায় রাখতে জিরো টলারেন্স নীতিতে অটল। গুণগতমান রক্ষার্থে কনসালট্যান্ট ও ঠিকাদারসহ সব পর্যায়ের কর্মকর্তারা সজাগ রয়েছেন বলে জানান তিনি।

 

 

Please Share This Post in Your Social Media




All rights reserved by Daily Shahnama
কারিগরি সহায়তা: Next Tech