আমতলী প্রতিনিধি।
ভেঙ্গে পরার দুই মাস পর লক্ষাধীক টাকা ব্যয়ে গ্রামবাসী অর্থায়ণ ও সেচ্ছাশ্রমে ভাসমান সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। দুই গ্রামের মানুষ এ সেতু নির্মাণ করেন। ভাসমান সেতু নির্মাণ করায় দুই ইউনিয়নের ২০ হাজার মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার নিরসন হলো। ঘটনা ঘটেছে আমতলী উপজেলার মহিষডাঙ্গা গ্রামে। কাঠের সেতু নির্মাণ করলেও এলাকাবাসী দ্রুত গার্ডার সেতু নির্মাণের দাবী জানিয়েছেন।
জানাগেছে, আমতলী সদর ও চাওড়া ইউনিয়নের মধ্যদিয়ে চাওড়া নদীর দুই ইউনিয়নের সংযোগ স্থাপনে মহিষডাঙ্গা গ্রামের ঠিকাদার শামীম আহসান ম্যালাকার বাড়ীর সামনে ২০০৬ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর আয়রণ সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।
এক কোটি টাকা ব্যয়ে ওই সেতু নির্মাণের দরপত্র আহবান করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। ওই সেতুর কাজ পায় পটুয়াখালীর বশির উদ্দিন সিকদার নামের এক ঠিকাদার। কিন্তু ওই ঠিকাদার শামীম আহসান ম্যালাকারের খালু শ^শুর হওয়ায় সেতুর নির্মাণ কাজ করেন শামিম। স্থানীয় প্রকৌশল অফিসের তদারকি না থাকায় ঠিকাদার নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে সেতু নির্মাণ করেছেন এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে সেতুর কাজ করায় গত ২৫ জুন ওই সেতুটি আপনা-আপনী ভেঙ্গে চাওড়া নদীতে পড়ে যায়। এতে চাওড়া ও আমতলী সদর ইউনিয়নের ১০ গ্রামের ২০ হাজার মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়। সেতু ভেঙ্গে পরার দুই মাসেও স্থানীয় প্রকৌশল বিভাগ সেতু মেরামতের উদ্যোগ নেয়নি। নিরুপায় হয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল করতে এলাকাবাসী মিলে লোহার ভাঙ্গা সেতুতে ভাসমান সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। গ্রামবাসী মিলে লক্ষাধীক টাকা চাঁদা তুলেন।
ওই টাকা দিয়ে বাঁশ, প্লাস্টিকের ড্রাম, লোহা ও দড়িসহ অন্যান্য উপকরন কিনে গ্রামবাসী মিলে স্বেচ্ছাশ্রমে সেতু মেরামতের কাজ শুরু করেন। রবিবার ওই সেতুর কাজ শেষ হয়। ধসে যাওয়া সেতুর স্থানে ২০টি প্লাস্টিকের ড্রামের উপর লম্বা বাঁশ বেঁধে তার উপর তক্তা দিয়ে কাঠের পাটাতন তৈরী করে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুর ভাঙ্গা জায়গা থেকে উপরের মুল সেতুতে উঠতে নির্মাণ করা হয়েছে একটি দীর্ঘ কাঠের সিড়ি।
রবিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে, বিশটি প্লাস্টিকের ড্রাম, বাঁশ ও কাঠ দিয়ে ভাসমান সেতু নির্মাণ করেছে গ্রামবাসী। ওই সেতু দিয়ে মানুষ চলাচল করছে।
মহিষডাঙ্গা গ্রামের মাসুদ সন্ন্যামত বলেন, আমতলী সদর ও চাওড়া ইউনিয়নের সংযোগ স্থাপনকারী চাওড়া খালের মহিষডাঙ্গা নামক স্থানের সেতুটি ভেঙ্গে পরায় দুই ইউনিয়নের ২০ হাজার মানুষ গত দুই মাস ধরে চরম ভোগান্তিতে ছিল। সরকারী ভাবে সেতুটি মেরামত না হওয়ায় আমরা দুইপাড়ের গ্রামবাসী মিলে লক্ষাধিক টাকা তুলে লোহার ভাঙ্গা সেতুতে ভাসমান সেতু নির্মাণ করেছি। এতদিন আমরা দুই পাড়ের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ ছিল। ভাসমান সেতু নির্মাণ করায় দুই পাড়ের মানুষের আবার মেলবন্ধন হয়েছে।
কাউনিয়া গ্রামের রাজ্জাক মোল্লা বলেন, সেতুটি ধসের পর মাদরাসা, এতিম খানা এবং হাফেজি মাদরাসার ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এই সেতু মেরামতের ফলে এখন থেকে ছেলে মেয়েরা আবার পড়াশুনার জন্য মাদরাসায় এবং এতিমখানায় যেতে পারছে। হানিফ খাঁন বলেন, সেতু ভাইঙ্গা গ্যাছে, মোরা ব্যামালা দিন আডা চলা হরতে পারি নাই। এ্যাহন নিজেরা বানাইয়া লইছি। এ্যাহানে হগল গ্রামবাসী কাম হরছে। হ্যার পর যারা আইতে পারে নাই হেরা আবার টাহা দিছে। মোগো গ্রামের সেতু মোরা বানাইয়া আডমু।
জুয়েল মৃধা বলেন, ইচ্ছা করলেই মানুষ সব পারে। গ্রামবাসী মিলে টাকা তুলে লোহার সেতুতে ড্রাম দিয়ে কাঠের সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।
আমতলী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মোতাহার উদ্দিন মৃধা বলেন, মহিষডাঙ্গা এবং কাউনিয়া গ্রামের মানুষ তাদের চলাচলের জন্য ধসে পরা সেতুটি গ্রামবাসীর অর্থায়নে স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামত করছে। গ্রামবাসীর এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয়।
আমতলী উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, সেতুটি ধসে পরার পর এখানে একটি গার্ডার সেতু নির্মানের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ আসলে কাজ শুরু করা হবে।