আমতলী প্রতিনিধি।
আমতলী ও তালতলী উপজেলার সারের জন্য হাহাকার করছে কৃষকরা। গত ৭ দিন ধরে দু’উপজেলা থেকে সার উধাও। সার না পেয়ে হন্য হয়ে ঘুরছে কৃষকরা। কৃষকরা বলেন, জমিতে সার না দেওয়ায় রোপা আমনের চারা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত সার সরবরাহের দাবী জানিয়েছেন কৃষকরা।
জানাগেছে, আমতলী ও তালতলী উপজেলায় আমনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ৭’শ ৯০ হেক্টর জমি। এর মধ্যে আমতলীতে ২৩ হাজার ৫০০ হেক্টর এবং তালতলীতে ১৬ হাজার ২’শ ৯০ হেক্টর। গত ১৫ দিন পুর্বে জমিতে আমনের চারা রোপন শেষ হয়েছে। ওই জমির উর্বরতা বৃদ্ধিতে দুই উপজেলায় ১ হাজার ৩’শ ৮৭ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার প্রয়োজন। কিন্তু গত সাত দিন ধরে আমতলী ও তালতলী উপজেলার ইউরিয়া সার নেই। সার না পেয়ে কৃষকরা হন্য হয়ে গ্রাম থেকে গ্রামান্তর ও শহরে সারের দোকানগুলোতে খুজে বেড়াচ্ছেন। সার না পেয়ে কৃষকরা খালী হাতে বাড়ী ফিরে যাচ্ছেন। কৃষকরা বলেন, জমিতে সার প্রয়োগ করতে না পারায় জমির উর্বরতা কমে রোপা আমন ধানের চারা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত জমিতে সার দিতে না পারলে খুবই সমস্যা হয়ে বলে জানান তারা। এদিকে তীব্র সার সংকটের মধ্যেও তালুকদার স্টোরের মালিক মোঃ মৃনাল তালুকদার চরা মুল্যে সার বিক্রি করছেন। তিনি প্রতি কেজি সারের দাম নিচ্ছেন ২০ টাকা। ৫০ কেজির এক বস্তা সার বিক্রি করছেন এক হাজার টাকায়।
তালুকদার স্টোরের মালিক মৃণাল তালুকদার বলেন, শ্রমিকরা কয়েক বস্তা সার দিয়েছিল। ওই সার বেশী মুল্যে ক্রয় করেছি আবার বেশী মুল্যে বিক্রি করছি।
খোজ নিয়ে জানাগেছে,আমতলীতে ৮ জন বিসিআইসি ও ৭২ জন খুচরা এবং তালতলী ৭ জন বিসিআইসি ডিলার রয়েছে। বিসিআইসি ডিলারগত ০১ সেপ্টেম্বর টাকা জমা দিলেও গত ২৫ দিনের সার পায়নি। সার না পাওয়ায় তারা কৃষকদের সার দিতে পারছে না এমন দাবী বিসিআইসি সার ডিলার মোঃ মহিউদ্দিন মিয়ার।
শনিবার আমতলী ও তালতলী উপজেলার খোজ নিয়ে জানাগেছে, বিসিআইসি ও খুচরা ডিলারদের কাছে কোন সার নেই। তারা কৃষকদের সার দিতে পারছেন না। কৃষকরা দলে দলে সার নিতে এসে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন।
হলদিয়া ইউনিয়নের হলদিয়া গ্রামের ফারুক গাজী বলেন, জমিতে চার বস্তা সারের প্রয়োজন। কিন্তু হলদিয়া ইউনিয়নের সার ডিলারের কাছে সার পাইনি। নিরুপায় হয়ে আমতলী উপজেলা শহরের এসেছি। এখানের সকল দোকান ঘুরেও সার পেলাম না। সার না পেয়ে খালী হাতে ফিরে যাচ্ছি। গত ১৫ দিনেও জমিতে এক মুঠো সার দিতে পারিনি।
আমতলী সদর ইউনিয়নের নাচনাপাড়া গ্রামের নয়া মিয়া সরদার বলেন, দুই বস্তা সারের জন্য আমতলী পৌর শহরে হন্য হয়ে খুঁজেও পাইনি। তিনি আরো বলেন, তালুকদার স্টোরে কিছু সার আছে। ওই সার অনেক বেশী মুল্যে বিক্রি করছেন দোকান মালিক মৃণাল তালুকদার।
একই ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের মাহবুব হাওলাদার বলেন, আমতলী ইউনিয়নের সকল দোকান ও পৌর শহরের দোকানে খুজেও সার পাইনি।
মহিষডাঙ্গা গ্রামের কিশোর ও জলিল বলেন, পৌর শহরের সকল দোকানে ঘুরেও সার পাইনি। কি করবো ভেবে পাচ্ছি না? জমিতে সার দিতে না পারলে রোপা আমনের চারা নষ্ট হয়ে যাবে।
আমতলী পৌরসভার আরিফ স্টোরের মালিক গনি বেপারী বলেন, বিসিআইসি ডিলাররা সার দিতে পারছে না। তাই সার বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছি। কৃষকরা দোকানে এসে ঘুরে যাচ্ছেন। দোকানে এক মুঠো সার নেই।
ইউনুস টেড্রার্সের মালিক মোঃ ইউনুস মিয়া বলেন, গত সার দিন ধরে আমতলীতে সার নেই। কৃষকরা হন্য হয়ে খুঁজেও সার পাচ্ছে না।
তালতলী উপজেলার বিসিআইসি ডিলার মোঃ খলিলুর রহমান বলেন, এক মাস পুর্বে টাকা জমা দিয়েও সার পাইনি। কৃষকের যন্ত্রনায় আর টিকতে পারছি না। দ্রুত সার সরবরাহের দাবী জানান তিনি।
আমতলী পৌরসভার বিসিআইসি ডিলার মোঃ মহিউদ্দিন মিয়া বলেন, সেপ্টেম্বর মাসে ২৫৮ মেট্রিকটন বরাদ্দ সারের মাত্র ২০ টন পেয়েছি। এই সার দিয়ে কৃষকদের সামাল দেয়া সম্ভব হচ্ছে। কৃষকরা দোকানে আসলে দোকান বন্ধ করে যেতে হয়। তিনি আরো বলেন, গত ১ সেপ্টেম্বর সারের টাকা ব্যাংকে জমা দিয়েছি। কিন্তু ২৫ দিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও এখনো সার পায়নি।
আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসার সিএম রেজাউল করিম বলেন, বরিশাল বাফার কর্তৃপক্ষ সার সরবরাহ করছে না। ফলে আমতলী ও তালতলীতে সার নেই। দ্রুত সময়ের মধ্যে কৃষকদের কাছে সার সরবরাহ চেষ্টা করছি।
সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ কাওসার হোসেন বলেন, বরিশাল বাফার গুদামে খোজ খবর নিয়ে দ্রুত কৃষকদের মাঝে সার সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে।
ডেপুটি চিফ বাফার ইনচার্জ বরিশাল আব্দুর রহিম খন্দকার বলেন, আমতলীর গত আগস্ট মাসের ৪’শ ৫০ মেট্রিক টন ও সেপ্টেম্বর মাসের ১’শ ২৫ মেট্রিক টন এবং তালতলীর ১’শ ১৪ মেট্রিক টন সার সরবরাহ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, পর্যায়ক্রমে আমতলীর ও তালতলীর চাহিদা মাফিক সার সরবরাহ করা হবে।