নিউজ ডেস্ক:
দফায় দফায় রোহিঙ্গাদের তালিকা মিয়ানমারকে দেয়া হলেও প্রত্যাবানের কোনো খবর নেই। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশ-চীন-মিয়ানমারকে নিয়ে গঠিত ত্রিপক্ষীয় ওয়ার্কিং কমিটির প্রথম বৈঠক অক্টোবরে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তারিখ নির্ধারিত হয়নি। ফলে শুরু রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ভবিষ্যৎ প্রায় অনিশ্চিত।
এ অবস্থায় মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করা ছাড়া বিকল্প দেখছেন না বিশ্লেষকরা। তবে চীনের সমন্বয়ে গঠিত ত্রিপক্ষীয় ওয়ার্কিং কমিটির প্রথম বৈঠক দ্রুত অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘ত্রিপক্ষীয় ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকটি দ্রুতই অনুষ্ঠিত হবে। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
উল্লেখ্য, গত মাসে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে এক বৈঠকে বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে ত্রিপাক্ষিক ওয়ার্কিং কমিটির বিষয়ে একমত হন।
ড. মোমেন তখন সাংবাদিকদের জানান, ত্রিপক্ষীয় এ দলটি যৌথভাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন পরিস্থিতি মূল্যায়ন করবে। এ কমিটির প্রথম বৈঠক অক্টোবরে অনুষ্ঠিত হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। এটা বাংলাদেশের হাতে নেই। মিয়ানমারের ওপর নির্ভর করছে। কিন্তু তাদের রাজনৈতিক সদিচ্ছা তো নেই। আবার দেশটির ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যেভাবে চাপ সৃষ্টি করার কথা, তারা তা করছে না।’
‘এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ছোট বা বড় যেকোনো ধরনের উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে’ বলেও মনে করেন আন্তর্জাতিক এ সম্পর্ক বিশ্লেষক। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের এমন উদ্যোগ প্রত্যাবাসন শুরুর প্রচেষ্টাকে সক্রিয় রাখবে এবং মিয়ানমার একটু হলেও চাপে থাকবে।’
অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘নতুন যে তালিকা মিয়ানমারকে দেয়া হলো সেটা দেশটির ওপর এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করবে। কারণ, প্রত্যাবাসন না শুরু করতে পারার জন্য মিয়ানমার বারবার বাংলাদেশকে অভিযুক্ত করে আসছে। এখন তারা বলতে পারবে না যে বাংলাদেশের জন্য প্রত্যাবাসন হচ্ছে না’- বলেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ অধ্যাপক আরও বলেন, ‘প্রত্যাবাসন শুরু করতে চীন দায়িত্ব নিয়েছে। তবে এটা রাতারাতি সমাধানের বিষয় নয়। চীন হয়তো কূটনৈতিকভাবে চেষ্টা করছে।’
উল্লেখ্য, প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করতে গত মঙ্গলবার মিয়ানমারকে আরও ৫০ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা দিয়েছে বাংলাদেশ। এদিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত লুইন উয়ের হাতে এ তালিকা তুলে দেন মিয়ানমার বিষয়ক অনুবিভাগের মহাপরিচালক দেলোয়ার হোসেন। পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ১১ লাখ রোহিঙ্গা দুই বছরে বাংলাদেশে রয়েছে। সবার তালিকা মিয়ানমারকে আমরা দেইনি। এখন আমরা তাড়াহুড়া করছি। প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা দেয়া হলো। এর আগে দেয়া হয়েছিল ৫৫ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা।’
তিনি বলেন, আমরা রোহিঙ্গাদের পরিবারভিত্তিক তালিকা দিচ্ছি। যাতে তাদের (মিয়ানমার) শনাক্ত করতে সুবিধা হয়। জানা যায়, এ নিয়ে চার দফায় এক লাখের বেশি রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করলো বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, মিয়ানমারকে দেয়া নতুন তালিকায় মোট ৫০ হাজার ৫০৬ রোহিঙ্গার নাম-পরিচয় রয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এর আগে তিন দফায় মোট ৫৫ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারকে হস্তান্তর করে বাংলাদেশ। এর মধ্যে দু-দফায় ১২ হাজারের মতো রোহিঙ্গার যাচাই-বাছাই শেষ হয়েছে । তাদের মধ্য থেকে আট হাজার ৭০০ রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে সম্মত হয়েছে দেশটি।
বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের দাবি, কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সম্পূর্ণ তালিকা তৈরির কাজ প্রায় শেষের দিকে। প্রত্যাবাসনের জন্য পুরো তালিকাই ধীরে ধীরে মিয়ানমারকে দেয়া হবে।
উল্লেখ্য, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরসা কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে একযোগে হামলা চালানোর প্রতিক্রিয়ায় এ জনগোষ্ঠীর ওপর ব্যাপক নিপীড়নমূলক অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। জাতিসংঘ ওই অভিযানকে ‘জাতিগত নিধন’ হিসেবে আখ্যা দেয়।