গৌরনদী (বরিশাল) প্রতিনিধি:
বরিশালের গৌরনদী উপজেলার প্রত্যান্ত অঞ্চলে অবস্থিত দোনারকান্দি বিলের জমির ভেতরে জনৈক সংখ্যালঘু হিন্দু ব্যাক্তির তৈরীকৃত একটি পরিত্যাক্ত বসত ঘরে বৃহস্পতিবার রাতে রহস্যজনক অগ্নিকান্ড সংঘটিত হয়েছে। এতে চৌচালা টিনের ওই পরিত্যাক্ত বসত ঘরটি সম্পুর্ন ভস্মিভূত হয়েছে। ফলে পরিবারটির প্রায় দুই লাখ টাকার সম্পদ পড়ে গেছে। এ ঘটনায় এলাকার সংখ্যালঘুদের মনে নানা সন্দেহ দ্বানা বাঁধলেও অগ্নিকান্ডের প্রকৃত কারন কেউ বলতে পারেননি।
গতকাল দুপুর পৌনে ১২টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত অগ্নিকান্ডেরস্থলসহ উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের দোনারকান্দি গ্রাম ঘুরে প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে পাওয়া বর্ননায় জানাগেছে, গত কয়েক বছরে ওই গ্রামের কৃষক মনোরঞ্জন চৌধুরী ওরফে মনমত চৌধুরী প্রতিবেশীদের কাছে বেশ ঋনি হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে তিনি নিজের বসত ভিটা বিক্রি করে দিয়ে দোনারকান্দি বিলের ভেতরে থাকা তার একখন্ড কৃষি জমি ভরাট করে সেখানে একটি চৌচালা টিনের ঘর করে স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস করছিলেন। গত প্রায় দেড় বছর পুর্বে বসত ঘরটিতে তালা দিয়ে মনমত চৌধুরী তার স্ত্রী সন্ধ্যারানী চৌধুরী ও সন্তানদের নিয়ে ভারতে চলে যান। সেই থেকে গত প্রায় দেড় বছর ধরে তার বিলের ভেতরের ওই তালাবন্ধ বসত ঘরটি পরিত্যাক্ত অবস্থায় ছিল। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঘরটিতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখে এলাকাবাসী ডাক চিৎকার দিয়ে নৌকা নিয়ে সেখানে গিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা চালায়। ততক্ষনে ঘরটি পুড়ে বিদ্ধস্ত হয়ে নিচে পড়ে যায়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ওই গ্রামের বাসিন্ধা ও ব্র্যাক এনজিওর কর্মী সুধীর সরকার তার ভাই কৃষক প্রতুল সরকার, স্থানীয় একটি এনজিও কর্মী রবীন সরকার জানান, তারাসহ এলাকাবাসী নৌকা নিয়ে গিয়ে হাড়ি বালতি ভরে বিলের পানি নিয়ে আগুন নেভান। এ অগ্নিকান্ড কিভাবে সংঘটিত হয়েছে তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে না পারলেও তারা দাবি করেছেন আগুন জলাকালে সেখানে পেট্রলের ঘ্রান পেয়েছেন। তাদের ধারনা নৌকা নিয়ে এসে কেউ পেট্রল ঢেলে ঘরটিতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।
এ প্রতিনিধি ওই ঘরটির ছবি তোলার সময় সেখানে নৌকাযোগে উপস্থিত হন খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ মতলের মাতুব্বর, ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগ নেতা প্রদীপ সাহা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতৃবৃন্দ। পুড়ে যাওয়া ঘরটি দেখেই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ মতলের মাতুব্বর বলেন, এলাকার গাঁজাখোর ও জুয়াড়ীরা এ ঘরটিতে গাঁজা ও জুয়ার আড্ডা বসাতো। আর তাদের ফেলে যাওয়া গাঁজা বা সিগারেটের আগুন থেকেই হয়ত এ অগ্নিকান্ড ঘটে থাকতে পারে। চারি দিকে বিলের পানি বেষ্টিত এ ঘরে কেউ নৌকা নিয়ে আগুন দিতে আসলে, সে ফিরে যেতে পারবেনা। বিলের চারিদিকের পরিবেশ এমন যে, নৌকা নিয়ে পালাতে গেলে তাকে ধরা পরতেই হবে। খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বিপ্লব রায় চৌধুরী ও ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল চন্দ্র মল্লিক বলেন, খবর পেয়ে আমরা যখন ঘটনাস্থলে যাই তখনও ঘরটিতে আগুন জ্বলছিল। এ সময় আমরা সেখান থেকে পেট্রলের ঘ্রনি পেয়েছি। এ থেকেই আমাদের ধারনা কেউ পরিকল্পিত ভাবে ঘরটিতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।
গৌরনদী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আফজাল হোসেন জানান, খবর পেয়ে আমি ফোর্স নিয়ে ওই রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। পুলিশ ঘটনাটিকে ক্ষতিয়ে দেখছে। কোন ক্লু পেলে আইনগত ব্যাবস্থা নেয়া হবে।