বিজ্ঞপ্তি:
দৈনিক শাহনামার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। জাতীয়, রাজনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন সহ সকল সংবাদের সর্বশেষ আপডেট জানতে ভিজিট করুন www.shahnamabd.com

ভাসমান সেতু ভেঙ্গে নদীতে ভোগান্তিতে ১০ গ্রামের ২০ হাজার মানুষ

ভাসমান সেতু ভেঙ্গে নদীতে ভোগান্তিতে ১০ গ্রামের ২০ হাজার মানুষ

আমতলী প্রতিনিধি।
আমতলীর চাওড়া নদীর মহিষডাঙ্গা এলাকার ভাসমান সেতু আবার ভেঙ্গে পরেছে। রবিবার রাতে একটি মোটর সাইকেল পারাপারের সময় এ সেতু ভেঙ্গে মোটর সাইকেল নদীতে পড়ে যায়। এতে ভোগান্তিতে পরেছে ৮ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ ১০ গ্রামের ২০ হাজার মানুষ। দ্রুত র্গাডার সেতু নির্মাণের দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

জানাগেছে, আমতলী সদর ও চাওড়া ইউনিয়নের মধ্যদিয়ে বদ্ধ চাওড়া খালে দুই ইউনিয়নের সংযোগ স্থাপনে মহিষডাঙ্গা গ্রামের ঠিকাদার শামীম আহসান ম্যালাকার বাড়ীর সামনে ২০০৬ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর আয়রণ সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এক কোটি টাকা ব্যয়ে ওই সেতু নির্মাণের দরপত্র আহবান করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। ওই সেতুর কাজ পায় বশির উদ্দিন সিকদার নামের এক ঠিকাদার। কিন্তু ওই ঠিকাদার শামীম আহসান ম্যালাকারের খালু শ^শুর হওয়ায় কাজটি তিনি করেন। ঠিকাদারের বাড়ীর সামনে সেতু নির্মাণে স্থানীয় প্রকৌশল অফিসের কোন তদারকি ছিল না। ঠিকাদার নিজের ইচ্ছামত নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে ব্রিজ নির্মাণ করেছেন এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। কার্যাদেশে ইআই পোষ্ট (রেলপোষ্ট) দেয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদার স্থানীয়ভাবে লোহার প্লেট দিয়ে ফাপা পোষ্ট তৈরি করে ব্রিজ নির্মাণ করেছেন। এছাড়া নিম্নমানের লোহার বিম সেতু নিমার্ণে ব্যবহার করেছেন।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন পোষ্ট যতটুকু গভীরতা দেয়া কথা তা দেয়নি ঠিকাদার শামিম। নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে সেতুর কাজের শুরুতেই স্থানীয়রা বাঁধা দেয়। কিন্তু এতে ঠিকাদারের তোপের মুখে পড়েন তারা, এমন অভিযোগ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয়দের। নির্মাণের তিন বছরের মাথায় ২০০৯ ওই সেতুর মাঝখান দেবে যায়। সেতু দেবে যাওয়ার বিষয়টি তৎকালীন উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ আতিয়ার রহমানকে স্থানীয়রা জানালেও তিনি তাতে কর্মপাত করেনি। ওই সময়ে ঠিকাদার শামীম আহসান দেবে যাওয়া সেতু রক্ষায় সেতুর সামনে পিলার পুতে দেন, যাতে বড় কোন যানবাহন ওই সেতুতে উঠতে না পারে।

গত ১৫ বছরে ছোট যানবাহন ও মানুষ ছাড়া কিছুই ওই ব্রিজে উঠতে পারেনি বলে জানান স্থানীয় অলিল খাঁন ও মাহাদী হাসান। ওই সেতুটি গত জুন মাসে ভেঙ্গে পড়ে। গত জুন মাসে ওই ভাঙ্গা সেতুতে ভাসমান সেতু নির্মাণ করে স্থানীয়রা। গত পাঁচ মাস ধরে ওই ভাসমান সেতু দিয়ে মানুষ পারাপার হতো। কিন্তু বরিবার রাতে একটি মোটর সাইকেল পার করতে গিয়ে সেতু ভেঙ্গে নদীতে পড়ে যায়। ওই সেতু ভেঙ্গে পরায় আমতলী সদর ইউনিয়নের ভায়লাবুনিয়া, মহিষডাঙ্গা, পূর্ব মহিষডাঙ্গা, নাচনাপাড়া, হলদিয়া ইউনিয়নের হলদিয়া,তুজির বাজার ও চাওড়া ইউনিয়নের কাউনিয়া, চলাভাঙ্গা ও লোদা গ্রামের অন্তত ২০ হাজার মানুষ ভোগান্তিতে পরেছে।

ওই সেতু দিয়ে চলাচল সম্পুর্ণ বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়াও কাউনিয়া ইব্রাহিম একাডেমী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কাউনিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মহিষডাঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পুর্ব মহিষডাঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, শামিম আহসান দাখিল মাদ্রাসা, নুরানী মাদ্রাসা , ইব্রাহিমিয়া হাফিজি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী এবং কাউনিয়া আশের্^দিয়া বায়তুল আমান জামে মসজিদের মুসুল্লীদের পারাপার বন্ধ হয়ে গেছে। দুই ইউনিয়নের মানুষের মেলবন্ধনে সেতুটি নির্মাণের দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

মহিষডাঙ্গা গ্রামের রুহুল আমিন ও সুমন মল্লিক বলেন, ডাক চিৎকারের শব্দ শুনে সেতুতে এসে দেখি সেতু ভেঙ্গে মোটর সাইকেল নদীতে পড়ে গেছে। সেতু ভেঙ্গে পরায় ৮ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ ১০ গ্রামের অন্তত ২০ হাজার মানুষ ভোগান্তিতে পরেছে। দ্রুত ব্রিজ নির্মাণের দাবী জানান তারা।

কাউনিয়া গ্রামের হেলাল মিয়া বলেন, সেতু ভাইঙ্গ্যা পরায় মোরা ভোগান্তিতে পরেছি। এ্যাহন এপারের মানু ওপাড়ে যাইতে পারমু না।
কাউনিয়া গ্রামের শাফিয়া বেগম বলেন, ‘সেতুডা ভাইঙ্গ্যা পইর‌্যা মোগো এ্যাহন আর ভোগান্তির শ্যাষ নাই। মুই হহালে ব্রিজ নির্মাণের দাবী হরি।
কাউনিয়া ইব্রাহিম একাডেমি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোসাঃ শাহনাজ পারভীন বলেন, ওই সেতু পার হয়ে শতাধিক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসে। ব্রিজ ভেঙ্গে পরায় শিক্ষার্থীদের বেশ অসুবিধা হয়েছে। দ্রুত সেতু নির্মাণের দাবী জানান তিনি।
আমতলী সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ মোতাহার উদ্দিন মৃধা বলেন, আমতলী ও চাওড়া ইউনিয়নের মধ্যবর্তি চাওড়া খালের মহিষডাঙ্গা ও কাউনিয়া গ্রামের সংযোগ সেতু ভেঙ্গে পরায় ৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ দুই ইউনিয়নের ১০ গ্রামের অন্তত ২০ হাজার মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। সেতু নির্মাণ করা না হলে মানুষের ভোগান্তির শেষ থাকবে না। দ্রুত সেতু নির্মাণ করা প্রয়োজন।

ঠিকাদার আলহাজ¦ শামীম আহসান ম্যালাকার সেতু নির্মাণে নিম্নমানের মালামাল ব্যবহারের কথা অস্বীকার করে বলেন, সঠিক নিয়মে ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ঠিকাদার বশির উদ্দিন সিকদার ব্রিজ নির্মাণ করেছেন।
ঠিকাদার মোঃ বশির উদ্দিন শিকদার বলেন, ওই সেতুটির কাজটি আমি করিনি। করেছে শামীম আহসান।
আমতলী উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, দ্রুত ওই সেতু নির্মাণের জন্য বরগুনা নির্বাহী প্রকৌশলী দফতরে প্রকল্প দেয়া হবে।

Please Share This Post in Your Social Media




All rights reserved by Daily Shahnama
কারিগরি সহায়তা: Next Tech