বিজ্ঞপ্তি:
দৈনিক শাহনামার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। জাতীয়, রাজনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন সহ সকল সংবাদের সর্বশেষ আপডেট জানতে ভিজিট করুন www.shahnamabd.com

শব্দ দূষণে অতিষ্ঠ আমতলী পৌরবাসী!

শব্দ দূষণে অতিষ্ঠ আমতলী পৌরবাসী!

আমতলী প্রতিনিধি।
শব্দ দূষণে অতিষ্ট আমতলী পৌরবাসী। প্রতিদিন সকাল থেকে অধিক রাত পর্যন্ত মাইকে বিভিন্ন ধরনের প্রচার চালানো এবং ইঞ্জিন চালিত যানবাহনের হাইড্রোলিক হর্ন বাজানো হয়। প্রতিকারের জন্য আইন থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। নীরব ঘাতক ভয়ানক ক্ষতিকর শব্দ দুষন থেকে মানুষকে রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবী সচেতন নাগরিকের।
জানাগেছে, আমতলী পৌর শহরে প্রতিদিন সকাল থেকে অধিক রাত পর্যন্ত ডিজেল ও পেট্রোলচালিত ইঞ্জিন বাস, ট্রাক, লরি, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল, টেম্পু,অটো রিক্সা, অটো গাড়ী, টমটম মাহেন্দ্র ও থ্রিহুইলারের হাইড্রোলিক হর্ন ও ডিজেল চালিত জেনারেটরের মাধ্যমে শব্দ দূষণ হয়। এছাড়াও রোগিদের আকৃষ্ট করতে চিকিৎসকের নামে প্রচার, ওয়াজ মাহফিলের প্রচার,ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে বয়লার মুরগি, মাছ, মাংশ বিক্রিসহ মাইকে বিভিন্ন ধরনের প্রচার চালানো হয়। এতে পৌর শহরে শব্দ দূষণ ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। হাইড্রোলিক হর্ন ও মাইকের শব্দ মানুষের কানের জন্য যন্ত্রনাদায়ক। শব্দ দূষণের কারনে মানুষের মানসিক ও শারীরিক অসুস্থতার সৃষ্টি করে। অতিরিক্ত শব্দ উচ্চ রক্তচাপ, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, মাথা ধরা, বদহজম, পেপটিক আলসার এবং অনিদ্রার কারণ বলে জানান চিকিৎসকরা।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর ক্ষমতাবলে শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬ উল্লেখ আছে, সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ শব্দসীমা ৫৫ ডেসিবেল এবং রাত ৯টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ৪৫ ডেসিবেল। একইভাবে নীরব এলাকায় দিনে ৫০ ও রাতে ৪০ ডেসিবেল, আবাসিক এলাকায় দিনে ৫৫ ও রাতে ৪৫ ডেসিবেল,মিশ্র এলাকায় দিনে ৬০ ও রাতে ৫০ ডেসিবেল, বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৭০ ও রাতে ৬০ ডেসিবেল এবং শিল্প এলাকায় দিনে ৭৫ ও রাতে ৭০ ডেসিবেল সর্বোচ্চ শব্দসীমা নির্ধারণ করা হয়। এর ওপরে শব্দ সৃষ্টি করাকে দন্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গন্য করা হয়েছে। বিধিমালায় আরও উল্লেখ আছে, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকার নির্ধারিত কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত নীরব এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই সকল জায়গায় মোটর গাড়ির হর্ন বাজানো বা মাইকিং করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ আইন অমান্য করলে প্রথমবার অপরাধের জন্য এক মাস কারাদন্ড বা অনধিক পাঁচ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য ছয় মাস কারাদন্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে। এ সকল নিয়ম নীতি ও আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রতিদিন আমতলী পৌর শহরে মাইকে প্রচার ও বিভিন্ন গাড়ীর হাউড্রোলিক হর্ন অহরহ বেজে যাচ্ছে। এতে মারাত্মক শব্দ দুষণ হচ্ছে। পৌর বাসীকে শব্দ দুষণ শেষে রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা করার দাবী জানিয়েছেন সচেতন নাগরিকরা।
বরগুনা জেলা পরিষদ সদস্য ও আমতলী পৌরসভার সচেতন নাগরিক এ্যাড. আরিফ উল-হাসান আরিফ বলেন, পৌর শহরে অহরহ মাইকে বিভিন্ন ধরনের প্রচারনা চালাচ্ছে তাতে বসবাস করা খুবই দুরহ। শব্দ দূষণের আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পৌর শহরের অতিরিক্ত মাইকিং হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ দূষণ রোধে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। প্রশাসনের কাছে শব্দ দূষণ রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানান তিনি।
আমতলী উপজেলা পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা আব্দুল মুনয়েম সাদ বলেন, শব্দ দূষণের কারনে শ্রবন শক্তি ও মেমোরি কমে যায়। কানের টিস্যুগুলো আস্তে আস্তে বিকল হয়ে পড়ে তখন সে স্বাভাবিক শব্দ শুনতে পায় না। শিশুদের মধ্যে মানসিক ভীতির সৃষ্টি হয়। মাত্রাতিরিক্ত শব্দের কারণে মানুষের কারোনারি হার্ট ডিজিজ ,কণ্ঠনালির প্রদাহ, উচ্চ রক্তচাপ, নিন্দ্রাহীনতা, আলসার ও মস্তিকের রোগ হতে পারে। তিনি আরও বলেন, হাসপাতাল এলাকায় মাইকিং করা নিষিদ্ধ কিন্তু নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রতিদিন যানবাহনের হাইড্রোলিক হর্ন বাজানো হচ্ছে এবং মাইকে বিভিন্ন ধরনের প্রচার প্রচারনা হয়। ক্ষতিকর শব্দ দুষন থেকে মানুষকে রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
আমতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মোঃ মতিয়ার রহমান শব্দ দূষণে পৌরবাসী অতিষ্ঠের কথা স্বীকার করে বলেন, পৌর বাসীকে শব্দ দুষনের হাত থেকে রক্ষায় আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি কিন্তু রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, শব্দ দুষন রোধে সচেতন নাগরিক ও সংশ্লিষ্টদের ডেকে সভা করা হবে। তারপরও শব্দ দুষণ রোধ করা সম্ভব না হলে কঠোর ব্যবস্থা নেব।

Please Share This Post in Your Social Media




All rights reserved by Daily Shahnama
কারিগরি সহায়তা: Next Tech