অনলাইন ডেস্ক:
শাপলার রাজধানী হিসেবে খ্যাত বরিশালের উজিপুরের সাতলা বিল। দূর থেকে সবুজের মধ্যে অসংখ্য ক্ষুদ্র লাল ও সাদা বৃত্ত দেখে দুরূহ হয়ে ওঠার মতো আর দূরত্ব কমার সঙ্গে সঙ্গে একসময় স্পষ্ট হয়ে ওঠে ফুলের অস্তিত্ব। আগাছা আর লতাপাতায় ভরা বিলের পানিতে সহস্ত্র লাল ও সাদা শাপলা। সূর্যের সোনালি আভা শাপলা পাতার ফাঁকে ফাঁকে পানিতে প্রতিফলিত হয়ে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয় এর সৌন্দর্য। বিলের লাল শাপলার নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখে আপনা থেকে চোখ জুড়িয়ে যায়। বরিশাল সদর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত উজিরপুর উপজেলার সাতলা ইউনিয়ন।
সাধারণত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে এই বিলে লাল শাপলা ফুল ফোটে। শেষ সময়ে প্রকৃতিপ্রেমীদের পদচারনায় মুখোরিত হয়ে উঠেছে শাপলার বিল। মনোমুগ্ধকর এ বিলের শাপলা দেখতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্নস্থান থেকে ছুটে আসছেন ভ্রমণপিপাসু প্রকৃতিপ্রেমীরা। এখানের কয়েকটি বিলে নৌকায় চড়ে পানিতে ভেসে ভেসে উপভোগ করা যায় এই বিলের সৌন্দর্য।
নৌকা চালক মিলন বাড়ৈ জানায়, এই শাপলার সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিন দূর দূরান্ত থেকে অনেক মানুষ আসে। আমরা পুরো বিলটি নৌকায় করে ঘুরিয়ে দেখাই। আর ১০/১৫দিনের মতো থাকবে এই শাপলা, তারপর আমরা এই বিলে ধান চাষ করবো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রায়হান জানায়, আমি ঢাকা থেকে বন্ধুদের সাথে এই শাপলার বিল দেখতে এসেছি। এখানে আসা না হলে বুঝতাম না এই জায়গাটা এতো সুন্দর।
স্থানীয় অসংখ্য পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছেন এ বিলের শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করে। স্থানীয়রা জানান, বাজারে সাদা শাপলার কদর বেশি। লাল শাপলার কদর থাকলেও এটি রান্না করতে অতিরিক্ত ঝামেলা পোহাতে হয়। লাল শাপলা সরাসরি রান্না করার পরও কিছুটা কালচে রং থাকে। তাই রান্নার আগে এটিকে সিদ্ধ করে নিতে হয়।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, বছরের ছয় মাস তারা অনেকেই এই বিলের শাপলার ওপর নির্ভরশীল। এভাবেই জীবিকা নির্বাহ করছেন এলাকার কয়েক শ’ পরিবার। এদের কেউ শাপলা তুলে, কেউবা বিল থেকে মাছ শিকার করে বাজারে বিক্রি করেন।
এদিকে শাপলার বিকলকে ঘিরে এখনও কোন রেষ্টহাউজ কিংবা রিসোট গড়ে না ওঠায় ভোগান্তিতে পরছেন ভ্রমণ পিপাসুরা। রূপক নামে এক পর্যটক জানায়, আমি সেই মুন্সিগঞ্জ থেকে এই সাপলার বিল দেখতে এসেছি কিন্তু এখানে কোন রিসোর্ট কিংবা গেষ্টহাউজ না থাকায় খুবই সমস্যা পরেছি। এখানে খাবার কোন ভালো হোটেলও নেই। প্রশাসনের এদিকে ভালোভাবে একটু নজর দেয়া উচিত।
এবিষয়ে বরিশালের জেলা প্রশাসক এস,এম অজিয়র রহমান জানায়, দিন দিন শাপলার বিল প্রকৃতপ্রেমীদের আকৃষ্ট করছে। আমরা ইতিমধ্যে বিভাগীয় কমিশনার মহোদয়কে নিয়ে বিলটি পরিদর্শন করেছি। সেখানে পর্যটকদের কথা চিন্তা করে আমাদের কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। আশা করছি পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়িত হলে এখানে আরও বিপুল পরিমানের পর্যটকদের সমাগম হবে।