আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি:
ব্যাডাগো হোমান কাম হইর্যাও অর্ধেক মজুরী পাই। একই সোমায়ে কামে আই। সন্ধ্যার পর ব্যাডারা মজুরী পায় ৬’শ টাহা আর মুই পাই ৩’শ টাহা। ব্যাডাগো চাইতে মুই মোডেও কাম কোম হরি না। কি আর হরমু প্যাডের দায়ে অর্ধেক মজুরীতে কাম হরতে অয়। এ কথা বলেছেন আমতলী উপজেলার আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের উত্তর সোনখালী গ্রামের ৪৫ বছর বয়সী নারী শ্রমিক মোমেলা বেগম।
জানাগেছে, আমতলী উপজেলায় দুই হাজার পাচ’শ তরমুজ চাষী ৩ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ জাষ করছেন। তরমুজ চাষীরা তরমুজ চাষে ব্যস্ত সময় পার করছে। এ সময়ে দিন মজুর শ্রমিকদের চাহিদা অনেক। কিন্তু শ্রমিক সঙ্কট তীব্র। এ তরমুজ চাষে ৯ হাজার শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে। শ্রমিক সংঙ্কট কাটাতে এবং স্বল্প মুল্যে শ্রমিক পেতে অসহায় হত-দরিদ্র নারী শ্রমিকদের বেছে নিয়েছেন কৃষকরা। নারী শ্রমিকদের পুরুষ শ্রমিকদের অর্ধেক মজুরী দিচ্ছেন তারা। নারী শ্রমিকরা সকাল থেকে সন্ধ্যা অবদি প্রচন্ড রোধে পুড়ে কাজ করছে। কিন্তু পুরুষের সমান কাজ করেও নারী শ্রমিকরা অর্ধেক মজুরী পাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, চাহিদা শ্রমিকের প্রায় অর্ধেক নারী শ্রমিক কাজ করছে। একজন পুরুষ শ্রমিক দৈনিক ৫’শ থেকে ৬’শ টাকা মজুরীতে কাজ করছেন। একই কাজ করে একজন নারী শ্রমিক মজুরী পাচ্ছেন ২’শ ৫ থেকে ৩’শ ৫০ টাকা। সমান কাজ করে অর্ধেক মজুরী পাওয়ায় নারী শ্রমিকদের বৈষম্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন নারী শ্রমিকরা। এ বৈষম্য লাঘবের দাবী জানিয়েছেন তারা।
আমতলী উপজেলার রাওঘা, কাঠালিয়া, দক্ষিণ রাওঘা, কুকুয়া, রায়বালা, খাকদান, সোনাখালী ও উত্তর সোনাখালী ও চাউলাসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখাগেছে, শত শত নারী তরমুজ খেতে কাজ করছে।
নারী শ্রমিক খাদিজা ও রোজিনা বলেন, স্বামীর আয়ে সংসার চালাতে কষ্ট হয়। তাই স্বাবলম্বি হতে নিজেই তরমুজ খেতে কাজ করছি। কিন্তু পুরুষের সমান কাজ করেও দিন শেষে অর্ধেক মজুরী পাচ্ছি। এটা অত্যান্ত কষ্টের। এ মজুরী বৈষম্য নিরসনের দাবী জানান তারা।
উত্তর সোনাখালী গ্রামের নারী শ্রমিক মাজেদা বলেন, একই সময়ে একই কাজ করে অর্ধেক মজুরী পাই। যখন মজুরী নেই তখন অনেক খারাপ লাগে।
কৃষক রাজ্জাক মৃধা বলেন, ৩০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। প্রতিদিন ১৫ জন শ্রমিক কাজ করছে। পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরা কাজ করছে। তিনি আরো বলেন, পুরুষ শ্রমিকদের দৈনিক ৫’শ থেকে ৬ শ টাকা এবং নারী শ্রমিকদের ২’শ ৫০ থেকে ৩’শ ৫০ টাকা মজুরী দেই।
বে-সরকারী উন্নয়ন সংস্থা এনএসএস’র নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট শাহাবুদ্দিন পান্না বলেন, পুরুষের পাশাপাশি নারীও অর্থনীতির চালিকা শক্তি। তাদের পিছনে রেখে উন্নতির অগ্রযাত্রা ভাবা যায়না। তিনি আরো বলেন, নারী- পুরুষদের মজুরী বৈষম্য থাকলে নারীরা কাজে অনুৎসাহী হবে এবং দেশ অর্থনৈকিবভাবে পিটিয়ে যাবে। তাই মজুরী বৈষম্য নিরসনে প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে হবে।
আমতলী উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আফরোজা সুলতানা বলেন, নারীদের মজুরী বৈষম্য নিরসনে উদ্যোগ নেয়া হবে।
আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসার সিএম রেজাউল করিম বলেন, পুরুষ শ্রমিকদের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরা মাঠে কাজ করছেন এটা ভালো লক্ষণ। দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বি করতে হলে নারী-পুরুষ সমান তালে এগুতে হবে। তবে কোন মতেই মজুরী বৈষম্য করা যাবে না। মজুরী বৈষম্য করতে নারী শ্রমিকরা কাজে আসবে না।