এই যে বড় ইলিশ এই দিকে। আসেন আসেন দেইখা লন, বাইচ্ছা লন। পঁচা নিয়েন না, ভালোটা দেইখা লন।’ শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে রাজধানীর রামপুরা মাছ বাজারে ঢুকতেই একাধিক কণ্ঠে ভেসে আসে এসব কথা।
বাজারটিতে ঢুকে দেখা যায়, প্রত্যেক ব্যবসায়ী ঝুড়ি অথবা পাতিলে বরফের ওপর থরে থরে ইলিশ সাজিয়ে রেখেছেন। সব ব্যবসায়ীর কাছেই ৯০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের ইলিশের যেন ছড়াছড়ি।
শুধু রামপুরা নয় এখন রাজধানীর প্রায় প্রতিটি মাছ বাজারই ইলিশের দখলে। যেকোনো বাজারে ঢুঁ মারলেই চোখে পড়ছে এক কেজি ওজনের ইলিশ। সেই সঙ্গে ভরপুর আছে ছোট ও মাঝারি ইলিশ।
বাজারে ইলিশের এমন সরবরাহের কারণে প্রিয় মাছের দামও কমেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ইলিশের দাম কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে। ফলে ইলিশের ক্রেতাও বেড়েছে। তবে ছোট ইলিশের থেকে বড় ইলিশের প্রতিই ক্রেতাদের ঝোঁক বেশি।
শুক্রবার রামপুরা, খিলগাঁও এবং মালিবাগ অঞ্চলের মাছ বাজার ঘুরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক সপ্তাহ ধরে বাজারে ভরপুর ইলিশ আসছে। দিন যত যাচ্ছে ইলিশের সরবরাহ তত বাড়ছে, যার প্রভাবে দামও কমেছে।
ব্যবসায়ীরা বলেন, ইলিশ মাছ পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। সুস্বাদু বড় ইলিশ সবাই খেতে চায়। কিন্তু ইচ্ছা থাকলেও সব সময় তা পূরণ করা যায় না। কারণ সারা বছরই বড় ইলিশ পাওয়া যায় না। আর যা পাওয়া যায় দাম অনেক বেশি থাকে। কিন্তু আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর- এই তিন মাসে বড় ইলিশের দেখা মেলে। ফলে দামও কম থাকে। এ কারণে এ সময় সব শ্রেণি পেশার মানুষ ইলিশ কিনতে মুখিয়ে থাকে।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারভেদে এক কেজি সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০-১০০০ টাকা পিস, যা গত সপ্তাহে ছিল ২০০০-২২০০ টাকা পিস। আবার কোনো কোনো ব্যবসায়ী এক কেজি থেকে এক কেজি ২০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি করছেন ১০০০ টাকা কেজি। যা এক সপ্তাহ আগে ২০০০ টাকার নিচে মিলছিল না।
বড় ইলিশের পাশাপাশি দাম কমেছে ছোট ও মাঝারি ইলিশের। ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে ৬০০-৭০০ টাকার মধ্যে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৯০০-১০০০ টাকা পিস। ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে। এক সপ্তাহ আগে ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের পিস বিক্রি হয় ৪৫০-৫০০ টাকা।
ইলিশের দামের বিষয়ে রামপুরার ব্যবসায়ী সুকুমার বলেন, জালে এখন ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ মাছ ধরা পড়ছে। এক কেজি ওজনের ইলিশ মাছের এখন অভাব নেই। সব ব্যবসায়ীর কাছে এখন কেজি সাইজের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে, যে কারণে দাম কমেছে।
তিনি বলেন, এবার একটু আগেভাগেই বাজারে বড় ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের হিসাব মতে, এক সপ্তাহ পর বড় ইলিশের সরবরাহ আরও বাড়বে। আর সরবরাহ বাড়লে ইলিশের দাম আরও একটু কমতে পারে। তবে এখন যে দামে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে ক্রেতারা এতেই খুশি। কারণ অন্য মাছের দাম বেশ চড়া।
খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী অশোক বলেন, এখন যদি ইলিশ না কেনেন তাহলে আর কখন কিনবেন? এক কেজি পাবদা মাছের দাম ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। রুই মাছের কেজি সাড়ে তিনশ টাকা। পাঙাশ, তেলাপিয়ার কেজি ১৮০ টাকা। এই বাজারে এক কেজি ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে ১০০০ টাকায়। এর থেকে ইলিশ আর কতো সস্তা হবে?
এই ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের হিসেবে এখন ইলিশের দাম সস্তা। ইলিশের এমন দাম কমার কারণ জালে প্রচুর ধরা পড়ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আশা করা যায়, সামনে দাম আরও একটু কমতে পারে। সাধারণত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ইলিশ মাছ সব থেকে বেশি ধরা পড়ে। দেখা যাক এবার কী হয়।
রামপুরা থেকে ইলিশ কেনা মো. মামুন বলেন, গত সপ্তাহে এক কেজি ওজনের ইলিশ ২০০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখেছি। আজ বাজারে এসে দেখি ইলিশের দাম কমেছে। ৪টি ইলিশ ৩১০০ টাকা দিয়ে কিনেছি। ৪টির ওজন হয়েছে ৩ কেজি ৯৫০ গ্রাম। এই দামে ইলিশ কিনতে পেরে আমি খুশি।
তিনি বলেন, আমার বাসার সবাই ইলিশ মাছ পছন্দ করে। কিন্তু দামের কারণে কেনা হয় না। গত বছর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে কিছু ইলিশ কিনে রেখেছিলাম। দাম আর একটু কমলে এবারও কিছু ইলিশ কিনে রাখার ইচ্ছা আছে।