রইসুল ইমন, পটুয়াখালী:
পটুয়াখালীর বাউফলের কালিশুরি ইউনিয়নের বীরমুক্তিযোদ্ধার মরহুম সোবেদার আওলাদ হোসেন সাজ্জালের পরিবারের বসতঘরে মাদক অভিযানের নামে ভাংচুর ও লুটপাট করা সহ মরহুম মুক্তিযোদ্ধার নাতিকে মিথ্যা মাদক মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে বরিশাল বিভাগীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) পটুয়াখালী পুলিশ সুপারের বরাবর এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত চেয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন মুক্তিযোদ্ধা পুত্র মো. খোকন সাজ্জাল। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নিন্দার ঝড় উঠেছে।
খোকন সাজ্জাল বলেন, মাদক অভিযানের বিষয়টি সম্পূর্ণ সাজানো। মূলত ভাংচুর লুটপাটের জন্যই অভিযানের নাটক সাজানো হয়েছে। স্থানীয় একাধিক লোকের সামনে আমার ঘরে কিছু না পাওয়া গেলেও আমার ছোট পুত্রকে আটক করে নিয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে তাঁরা। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী’র বছরে একজন মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সাথে এ কেমন আচরণ? আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মরহুম বীরমুক্তিযোদ্ধা সোবেদার আওলাদ হোসেন সাজ্জালের পুত্র মো. খোকন সাজ্জাল কালিশুরি ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডে নিজ পৈত্রিক নিবাসে বসবাস করেন। খোকন সাজ্জালের দুই পুত্র সন্তান নাঈম সাজ্জাল ও নাবিন সাজ্জাল। নাবিন সাজ্জাল নিজের ফুফু বাড়িতে ১৫ দিন বেড়ানোর পরে গত ২ এপ্রিল নিজ বাসভবনে ঘুমাচ্ছিলেন। সকাল ৯ ঘটিকায় হঠাৎ অজ্ঞাত কিছু ব্যক্তি বাসভবনের পিছনের দরজা ভেঙ্গে বাসায় প্রবেশ করে এবং নাবিন সাজ্জালকে মারধর শুরু করে। এসময় পিতা খোকন সাজ্জাল, তার স্ত্রী ও মুক্তিযোদ্ধার বৃদ্ধ স্ত্রী নাবিনকে বাঁচাতে গেলে তাদেরকেও মারধর করা হয়। একপর্যায়ে হামলাকারীরা এলোপাতাড়ি ভাবে আসবাবপত্র ভাংচুর করে এবং বসতঘরের বিভিন্ন স্থানে থাকা ব্যাংক থেকে নির্মান কাজের জন্য তোলা, ছাগল বিক্রি, বাজার খরচ ও মাটির ব্যাংকে জমানো প্রায় ১৫৭০০০ টাকা ও ৩ ভরি স্বর্ন নিজেদের জিম্মায় নিয়ে নেয়। এরকিছু সময় পরে স্থানীয় একাধিক লোক ও বাড়িতে বসবাসকারী অন্যান্যদের সামনে পাশের একটি সড়কের ডোবা থেকে একটি টিনের কৌটা উদ্ধার করে এবং জানান এতে ২০-২৫ গ্রাম গাঁজা রয়েছে৷ এসময় হামলাকারীরা নিজেদের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দেন এবং নাবিন সাজ্জালকে আটক করে নিয়ে যায়। কোথাও খোঁজ না পেয়ে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সন্ধ্যায় বাউফল থানায় গিয়ে জানতে পারে নাবিন সাজ্জালের বিরুদ্ধে ৫০০ গ্রাম গাঁজা বহন ও গাঁজা বিক্রির ৭২০০০ টাকা সহ একটি মাদক মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়াও ওই লিখিত অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আলমগীরের আত্মীয় কালিশুরি ইউপির বাসিন্দা এনামুল শিকদারের সাথে দীর্ঘদিন জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছিলো খোকন সাজ্জালের। সেই বিরোধের জেড়ে এর আগেও একাধিক বার খোকন সাজ্জালের পরিবারের উপর হামলা মামলা হয়েছে৷ এই মাদক অভিযানের ঘটনাও নাটকীয় বলে মনে করছে এই পরিবার। তাই তারা সুষ্ঠ তদন্তের জন্য পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন করেছেন।
নাবিন সাজ্জালের বড় ভাই পটুয়াখালী সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের নেতা নাঈম সাজ্জাল বলেন, আমার ভাইকে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে মিথ্যা অভিযোগ এনে ফাঁসানো হয়েছে। কিছুদিন পূর্বে এনামুল শিকদার আমাকে হুমকি দিয়ে বলেছিলো তোদের পরিবারের এমন অবস্থা করবো যে সমাজে মুখ দেখাতে পারবি না। তখন বুঝি নাই সামান্য জমি সংক্রান্ত ঝামেলার কারণে সে এভাবে আমার ভাইকে ফাঁসাবে। আইনের লোক কিভাবে সাধারণ মানুষকে মিথ্যা হয়রানি করে? আমি বিষয়টির সুষ্ঠু ও সঠিক তদন্তের জন্য সকল ধরনের আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।
নাবিন সাজ্জালের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বাদী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, বরিশাল বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়ের উপ-পরিদর্শক ইশতিয়াক হোসেন বলেন, “আমরা যা পেয়েছি মামলায় তাই লিখেছি। স্থানীয় সাক্ষীদের উপস্থিতিতে নাবিন শিকার করেছে গাঁজা এবং টাকা তার।” অভিযানের বিষয়ে পূর্বে স্থানীয় থানাকে জানিয়েছিলেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগে জানাতে হয় কিনা আমার জানা নেই অথবা এরকম চর্চাও নেই। তবে অভিযান শেষে সবসময় স্থানীয় থানায় জানানো হয়।