ডেস্ক রিপোর্ট:
মহামারির খারাপ সময় কাটিয়ে দুই বছর পর ঈদের জামাতের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ও দিনাজপুরের গোর-এ শহিদ ঈদগাহ ময়দান। ফের খোলা ময়দানে নামাজ আদায়ের ঘোষণায় খুশি মুসল্লিরাও। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে নেয়া হচ্ছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
করোনার কারণে দু’বছর না হলেও এবার ঈদের জামাতের জন্য বৃহৎ এ ঈদগাহে চলছে সবরকম প্রস্তুতি। ২২ একর আয়তনের ঈদগাহটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে কয়েক দিন ধরেই চলছে ব্যস্ততা। ঈদের দিন সকাল ৯টায় এখানে জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ইমামতি করবেন মাওলানা শামসুল ইসলাম কাসেমী। ছয় লাখের বেশি মুসল্লি এক সঙ্গে নামাজ আদায় করবেন বলে আশা করছেন আয়োজকরা।
সরেজমিন শনিবার বড়মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, ইতোমধ্যেই মিনার ধোয়ামোছা ও সংস্কারকাজ শেষ হয়েছে। অজুখানা ও শৌচাগার স্থাপনের কাজ শেষ পর্যায়ে। রোলার দিয়ে মাঠের উঁচুনিচু সমান করার পর চলছে কাতারের দাগ দেওয়ার কাজ। মাঠের চার পাশে ১৯টি প্রবেশপথ তৈরি করা হচ্ছে। মাঝখানে বসানো হয়েছে উঁচু ওয়াচ টাওয়ার। ১০ এপ্রিল থেকে এসব কাজ চলছে বলে জানান দিনাজপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র তৈয়ব আলী দুলাল।
জানা গেছে, ১৯৪৭ সাল থেকে এ মাঠে ঈদের জামাত হয়ে আসছে। তবে বড় কোনো মিম্বর ছিল না। ২০১৫ সালে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম মিনার নির্মাণের পরিকল্পনা ও অর্থায়ন করেন। ২০১৭ সালে নির্মাণকাজ শেষ হয়। ৫২ গম্বুজের ঈদগাহ তৈরিতে খরচ হয় তিন কোটি ৮০ লাখ টাকা। ওই বছরই ঈদের জামাতে প্রায় ছয় লাখ মুসল্লির সমাগম হয়।
কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া মাঠ- ঐতিহাসিক এই ময়দানে এবার ১৯৫তম ঈদের জামাত হবে সকাল দশটায়। কয়েক লাখ মুসল্লি অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। করোনার কারণে দুই বছর পর ঈদের জামাত ফেরায় খুশি এলাকাবাসী। এরইমধ্যে কাতারের জন্য দাগ কাটা, বালু ফেলে মাঠ সমতল করা ও দেয়ালে রং করার কাজ শেষ। এখন চলছে শোভা বাড়ানোর কাজ। স্বেচ্ছাসেবকদের দিন-রাতের পরিশ্রমে শোলাকিয়া ময়দান এখন নামাজ পড়ার জন্য উপযুক্ত হয়ে উঠেছে।
২০১৬ সালের ৭ জুন এ ময়দানের ঈদের জামাত শুরুর আগে পুলিশ চৌকিতে জঙ্গি হামলায় দুই পুলিশ কনস্টেবল, এক গৃহবধূ ও এক জঙ্গিসহ চারজনের মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত হন ১৬ জন। এবার নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা জানিয়েছে জেলা ও পুলিশ প্রশাসন।
জেলা পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ জানান, ঈদগাহ ময়দানে ৫ প্লাটুন বিজিবি সদস্য, র্যাব, সাধারণ ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন সদস্য, সাদা পোশাকের গোয়েন্দা পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল সদস্য মোতায়েন থাকবে। একই সঙ্গে থাকবে ফায়ার ব্রিগেড, ছয়টি অ্যাম্বুলেন্সসহ মেডিকেল টিম। এসব দায়িত্ব পালনে কিশোরগঞ্জ পুলিশের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ঈদগাহ ময়দানে নির্মাণ করা হয়েছে ছয়টি ওয়াচ টাওয়ার। পুরো ঈদগাহ ময়দান সিসি ক্যামেরায় নিয়ন্ত্রিত হবে। এ ছাড়া নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্য সার্বক্ষণিক চারটি ড্রোন ক্যামেরা। ঈদগাহ ময়দানের ২৮টি প্রবেশ পথে হ্যান্ডমেটাল ডিটেকটর নিয়ে অবস্থান করবেন নিরাপত্তাকর্মীরা।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম জানিয়েছেন, নিরাপত্তার স্বার্থে ঈদগাহ ময়দানে শুধু মাস্ক, টুপি ও জায়নামাজ নিয়ে মুসল্লিদের প্রবেশ করতে হবে। মোবাইল ফোন ও ছাতা নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না। তবে, বৃষ্টির ক্ষেত্রে ছাতা ব্যবহার বিবেচনা করা হবে। মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ঈদের দিন ময়মনসিংহ ও ভৈরব থেকে দুটি বিশেষ ট্রেন আসা-যাওয়া করবে।
জানা গেছে, কিশোরগঞ্জের হয়বত নগর সাহেববাড়ির পূর্বপুরুষ শাহ সুফি সৈয়দ আহমদ নিজস্ব তালুকে নরসুন্দা নদীর তীরে ১৮২৮ সালে ৭ একর জমির ওপর এ ঈদগাহ ময়দান প্রতিষ্ঠা করেন। এমনকি তার ইমামতিতে এখানে প্রথম ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। জনশ্রুতি আছে, দীর্ঘদিন আগে এ মাঠে অনুষ্ঠিত এক ঈদের জামাতে কাতার গুণে এক লাখ ২৫ হাজার মুসল্লির উপস্থিতি মেলে। তখন থেকে লোকজন এ ময়দানকে সোয়া লাখিয়া ঈদগাহ হিসাবে ডাকতে শুরু করেন। পরে উচ্চারণ বিবর্তনে এর নাম শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান হিসাবেই পরিচিত হয়ে ওঠে।