স্পোর্টস ডেস্ক:
টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর বাংলাদেশের ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো ক্রিকেটারদের ধর্মঘটের ঘটনা ঘটল। এ কারণে তিনদিন অচল হয়ে পড়েছিল ক্রিকেটাঙ্গন। গত বুধবার বিসিবির সঙ্গে বৈঠকে ঐক্যমত হয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহার করেন ক্রিকেটাররা। ক্রিকেটারদের এই মুভমেন্টকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন টি-টোয়েন্টি আর টেস্ট অধিনায়ক বিশ্বসেরা অল-রাউন্ডার সাকিব আল হাসান। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, মাশরাফি বদলে সাকিব কেন নেতৃত্বে? মাশরাফিকেই বা কেন কোনোকিছু না জানিয়ে সাইড করে দেওয়া হয়েছিল?
গত ২১ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ধর্মঘটের বীজ আরও আগে বপন করা হয়েছিল। সাকিব আল হাসান বিপিএল দল রংপুর রাইডার্সের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার তিন দিন পর বিসিবি সভাপতি একে অবৈধ বলেছিলেন। তিনি আগামী আসর থেকে বিপিএলের নতুন চার বছরের চক্রের ঘোষণা করেছিলেন, যাতে একই সমস্যা পড়েন তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিমরা। এর কিছুদিন পর বিপিএলে ফ্র্যাঞ্চাইজি প্রথা বাতিলের ঘোষণা দেন তিনি। সব ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয়ে তৈরি হয় ১১ দফা দাবি। এই দাবিদাওয়া নিয়ে মিডিয়ার সামনে কথা বলা এবং বিসিবির সঙ্গে দেন-দরবার করার জন্য একজন নেতার প্রয়োজন ছিল।
বিসিবির সঙ্গে বৈঠকে নেতৃত্বে ছিলেন সাকিব।
ক্রিকেট মাঠ এবং মাঠের বাইরে সাকিব আর মাশরাফির নেতৃত্ব ভিন্ন ধরণের। দেশের জনপ্রিয়তম অধিনায়ক মাশরাফি মাঠ ও মাঠের বাইরে এতদিন ক্রিকেটারদের নেতা ছিলেন। তিনি ক্রিকেটারদের দাবি-দাওয়া নিয়ে বিসিবির সঙ্গে দর-কষাকষি করতেন এবং সেগুলো পূরণ করার চেষ্টা করতেন। কিন্তু এসব নিয়ে মিডিয়ায় খুব একটা মাতামাতি হতো না; কারণ কাজগুলো চুপচাপ সেরে ফেলতেন তিনি। ২০১৪ সালে মাশরাফি ওয়ানডে অধিনায়ক হওয়ার পর থেকে এভাবেই চলছিল বিসিবির সঙ্গে ক্রিকেটারদের দর-কষাকষি। তিনি হয়ে উঠেছিলেন সকলের পছন্দের অধিনায়ক। সেই মাশরাফিকেই এবার কেন ভুলে গেলেন ক্রিকেটাররা?
ক্রিকেটারদের ১১+২ মোট ১৩ দফা দাবির প্রতিটিতে ছিল দেশের ক্রিকেট দুর্বলতার কথা। এসব নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন ক্রিকেটাররা। তারা প্রায় সবাই চেয়েছিলেন, ভেতরের এই ক্ষোভের কথা মিডিয়া জানুক। এরপর মিডিয়ার মাধ্যমে এসব নৈরাজ্যের খবর জেনে যাক ক্রিকেটপ্রেমীরা। কিন্তু এক্ষেত্রে মাশরাফি নেতৃত্বে থাকলে আগের মতোই নীরবে বিসিবির সঙ্গে বৈঠক সেরে ফেলতে পারেন- এমন ভাবনা থেকে তাকে সামনে আনেনি আন্দোলনকারীরা। সেইসঙ্গে মাশরাফি এখন জাতীয় সংসদের সদস্য। এই অবস্থানের কারণে তিনি বিসিবির সঙ্গে দর-কষাকষি করতে পারতেন না বলেই ধারণা ছিল ক্রিকেটারদের।
গুলশানের একটি হোটেলে ক্রিকেটারদের পক্ষ থেকে কথা বলেন সাকিব।
যে কারণে মাশরাফি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। তাকে এই আন্দোলনের ব্যাপারে কিছু জানানোই হয়নি। কিন্তু ওই যে, একজন নেতার দরকার। সিনিয়রদের মধ্যে সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, তামিম সবাই ছিলেন এই আন্দোলনে। তবে এদের মধ্যে সবচেয়ে হাই প্রোফাইল ক্রিকেটার হলেন সাকিব। একইসঙ্গে দুই ফরম্যাটে জাতীয় দলের অধিনায়ক। পাশাপাশি সামনে থেকে সাহসী নেতৃত্ব দেওয়ার ব্যাপারে সাকিবের সুনাম আছে। যে কারণে তাকেই এগিয়ে দেওয়া হয় সামনে। এছাড়া জাতীয় দলের হয়ে ধুন্ধুমার পারফর্মেন্স করে যাওয়া সাকিবের জন্য আন্দোলনের নেতা হওয়া সহজ ছিল। তাকে শাস্তি দেওয়া বিসিবির জন্য এই মুহূর্তে কঠিন।
এভাবেই ক্রিকেটারদের নেতা হয়ে ২১ তারিখ দুটি দাবি উত্থাপন করে ধর্মঘট ঘোষণা করেন সাকিব। বাকী দাবিগুলো অন্যরা পড়ে শোনান। ২৩ তারিখ গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমানকে মুখপাত্র হিসেবে নিয়ে আসেন ক্রিকেটাররা। বক্তব্য রাখেন সাকিবও। সেদিন থেকেই মূলত সাকিবের নেতৃত্ব আলাদাভাবে চোখে পড়ে। এরপর তার নেতৃত্বেই বিসিবি সভাপতির সঙ্গে আলোচনায় বসেন ক্রিকেটাররা। মিটিং শেষে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সঙ্গে ক্রিকেটারদের প্রতিনিধি হিসেবে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন সাকিব। সংবাদমাধ্যমের সামনে তার পরিমিত বাক্যব্যায়, ধীরস্থির থাকার বিষয়গুলো সকলের প্রশংসা আদায় করে নিয়েছে।