আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
মাঙ্কিপক্স দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সান ফ্রান্সিসকো শহরের পর এবার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে নিউইয়র্কে। রাজ্যের গভর্নর ক্যাথি হোচুল স্থানীয় সময় শুক্রবার (২৯ জুলাই) রাতে নিউইয়র্কজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন।
এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভাবের মোকাবিলায় আমাদের চলমান প্রচেষ্টাকে আরও শক্তিশালী করার জন্য আমি রাজ্যজুড়ে ‘দুর্যোগ জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করছি। খবর এবিসি নিউজের।
গভর্নর ক্যাথি জানান, যুক্তরাষ্ট্রে মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত প্রতি চারজনের মধ্যে অন্তত একজন নিউইয়র্কের বাসিন্দা। নিউইয়র্ক স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, গেল ২৯ জুলাই পর্যন্ত নিউইয়র্ক রাজ্যে মোট ১ হাজার ৩৮৩ জনের দেহে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়েছে।
এর আগে, ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সান ফ্রান্সিসকো শহরে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) এ সতর্কতা জারি করে অঞ্চলটির কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ভাইরাসটির সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে সবাইকে সতর্ক থাকতেও বলা হয়।
এদিকে আফ্রিকার পর মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হয়ে ব্রাজিল ও স্পেনে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার এ তথ্য নিশ্চিত করে দেশ দুটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মাঙ্কিপক্স সনাক্ত হয়েছে ফিলিপিন্সেও।
বিশ্বজুড়ে এখন আতঙ্কের আরেক নাম মাঙ্কিপক্স। দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে ভাইরাসটি। এরইমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের ৭৪টি দেশে। যার মধ্যে ৭০ শতাংশ রোগী ইউরোপে। আর ২৫ শতাংশ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে।
তবে ভয়াবহ এ ভাইরাসটি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পরলেও এতে আক্রান্ত হয়ে আফ্রিকার বাইরে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার ব্রাজিলে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হয়ে ৪১ বছর বয়সী এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১ হাজারের বেশি মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের বেশিরভাগই সাও পাওলো ও রিও ডি জেনিরোর বাসিন্দা।
স্পেনেও ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যুর খবর প্রকাশ করে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্য দিয়ে ইউরোপে প্রথমবারের মতো মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হয়ে কারও মৃত্যুর ঘটনা ঘটল।
সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সম্প্রতি মাঙ্কিপক্স নিয়ে বিশ্বব্যাপী ‘জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতা’ জারি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। যে কোনো স্বাস্থ্য সংকটে এটিই সংস্থাটির জারি করা সবচেয়ে জোরাল সতর্কতা।
গত ২৩ জুলাই মাঙ্কিপক্স ভাইরাস সম্পর্কিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি কমিটির দ্বিতীয় বৈঠক শেষে এ ঘোষণা দেয়া হয়। এতে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী মাঙ্কিপক্সের বিস্তার আন্তর্জাতিক উদ্বেগের পাশাপাশি জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতার পরিস্থিতি তৈরি করেছে। সারা বিশ্বের সরকার মাঙ্কিপক্সের ক্রমবর্ধমান প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চালালেও, এটি আরও ছড়িয়ে পড়ার ‘সুস্পষ্ট ঝুঁকি’ রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ইউরোপ হলো মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের বিশ্বব্যাপী প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রস্থল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাঙ্কিপক্স বসন্তের একটি বিশেষ ধরন। সংক্রামক হলেও রোগীর সংস্পর্শে না এলে এই রোগ ছড়ায় না। বিভিন্ন বানর জাতীয় প্রাণীর মাধ্যমে এটি ছড়ায়। এ ছাড়া শ্বাসনালি, শরীরে তৈরি হওয়া কোনো ক্ষত, নাক কিংবা চোখের মাধ্যমেও অন্যের শরীরে প্রবেশ করতে পারে মাঙ্কিপক্স ভাইরাস।
সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই ভাইরাস সম্পর্কে সবাইকে বিস্তারিত জানার আহ্বান জানিয়েছে ডব্লিউএইচও। কীভাবে মাঙ্কিপক্স ছড়াচ্ছে তা চিহ্নিত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়েও জোর দিয়েছে সংস্থাটি। এছাড়া ভাইরাসটির বিরুদ্ধে কার্যকর অ্যান্টিভাইরাল ভ্যাকসিন গ্রহণের ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।