নিউজ ডেস্ক:
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে এক চাকরিপ্রার্থী ঘুষের টাকা ফেরত চাওয়ার একটি অডিও নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে রেকর্ডটি ছড়িয়ে পড়ে।
এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে তিন শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়া তিন শিক্ষক হলেন অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইয়াহিয়া ব্যাপারী আকাশ, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের প্রভাষক কমরুল হাসান কনক এবং ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কামাল হোসেন।
ওই তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রত্যাহারের দাবিসহ চার দফা দাবিতে সোমবার (২৮ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান করেন তারা। এ সময় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শিক্ষকদের দেয়া কারণ দর্শানো নোটিশ প্রত্যাহারের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, নিয়োগ নিয়ে নানা বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করেছে প্রশাসন। সোমবার বিকেলে পাবিপ্রবি উপাচার্য এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. প্রীতম কুমার দাস বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু তারা কোনো লিখিত দাবি জানায়নি। লিখিত পেলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করা হবে। শিক্ষকদের শোকজ করা হয়েছে। তারা জবাব দিলে বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে। সেখানে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা কি আমরা বুঝতেছি না।
ক্যাম্পাস সূত্র জানায়, ২৪ অক্টোবর পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে লিখিত পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে ক্যাম্পাসে তুলকালাম কাণ্ড ঘটান মনিরুল ইসলাম নামের এক চাকরিপ্রার্থী। তিনি কুমিল্লার সদর দক্ষিণ সদর উপজেলার কৃঞ্চনগর গ্রামের নুরুল হকের ছেলে এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে জনসংযোগ দপ্তরের উপপরিচালক ফারুক হোসেন চৌধুরী বলেন, লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মৌখিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ওই দিন বিকেল ৪টার দিকে মনিরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনের সামনে এসে পরীক্ষার বিশেষজ্ঞ সদস্যসহ উপাচার্য, উপ-উপাচার্যকে গালিগালাজ করেন।
পরিকল্পিতভাবে ওই চাকরিপ্রার্থী পুরো নিয়োগ পরীক্ষাকে বিতর্কিত করার জন্য উপাচার্যকে নিয়ে মানহানিকর মন্তব্য করেন এবং বিষয়টি গোপনে মোবাইলে ধারণ করেন। পরবর্তীতে ভাইস-চ্যান্সেলর সম্পর্কে মানহানিকর, বিভ্রান্তমূলক মন্তব্য সংবলিত ধারণকৃত অডিও ফেসবুকে ছেড়ে দেন। এ নিয়ে ওই দিন রাতেই পাবনা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
নিয়োগ কমিটির সদস্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. এম হাবিবুল্লাহ বলেন, সাড়ে ৩ বছর আগে এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। নানা জটিলতায় এতদিনে নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া যায়নি। এর আগে জুন মাসে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের একজন প্রার্থী মামলা করেন। মামলায় বিশ্ববিদ্যালয় জয়ী হলে পরীক্ষার সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়। কঠোর গোপনীয়তা এবং স্বচ্ছতা অনুসরণ করে প্রশ্নপত্র তৈরি এবং পরীক্ষা নেয়া হয়। কাজেই শতভাগ সততা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে এই নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এম রোস্তম আলী বলেন, পরীক্ষায় অকৃতকার্য ওই পরীক্ষার্থী পরিকল্পিতভাবে অশোভনীয় কাণ্ড ঘটিয়েছেন। বেশ কয়েকজন প্রভাবশালীকে দিয়ে আমাকে চাপ দেন ওই চাকরিপ্রার্থী। অনৈতিক চাপের কাছে নতি স্বীকার করব না আমি তাকে বলে দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ দুজন চাকরিপ্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণে বাধা দেয়ায় উপস্থিত হতে পারেননি। এ কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়েছে। পুনরায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া হবে।
তিন শিক্ষককে শোকজ নোটিশ দেয়ার বিষয়ে উপাচার্য বলেন, পরীক্ষায় অকৃতকার্য মনিরুল পূর্বপরিকল্পিতভাবে ঘুষের যে মিথ্যা ভিডিও ফেসবুকে ছেড়ে দিয়েছেন, তা শেয়ার করেছেন ওই তিন শিক্ষক। তাই তাদের শোকজ নোটিশ দেয়া হয়েছে।