আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
গ্যাস সঙ্কটের কারণে বিদ্যুতের ঘাটতি সম্পর্কে সতর্ক করেছেন জার্মান অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়ান লিন্ডনার। জোটসঙ্গী গ্রিন পার্টির বিরোধিতা সত্ত্বেও পারমাণবিক বিদ্যুৎ বন্ধ করার প্রক্রিয়া বিলম্বিত করার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন তিনি।
রাশিয়ার আবারও ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ার পর গ্যাস ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়ান লিন্ডনার।
ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জার্মানি শিগগিরই গ্যাস স্বল্পতার মুখে পড়তে পারে, এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে গত রবিবার জার্মান সংবাদমাধ্যম বিল্ড আম সনটাগকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে লিন্ডনার বলেন, ‘গ্যাস সঙ্কটের মধ্যে বিদ্যুৎ সঙ্কটও তৈরি হোক, এমনটা আমরা চাচ্ছি না।’
প্রয়োজনে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস ব্যবহার বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়ার আইনি ক্ষমতা দেশটির অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী রবার্ট হাবেকের রয়েছে বলেও জানান অর্থমন্ত্রী। নয়াউদারপন্থি দল ফ্রি ডেমোক্র্যাটস পার্টি-এফডিপির রাজনীতিবিদ লিন্ডনার পরমাণু বিদ্যুৎকে ‘নিরাপদ এবং পরিবেশবান্ধব’ উল্লেখ করে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র ২০২৪ সাল পর্যন্ত চালু রাখারও আহ্বান জানান।
জার্মানিতে গত বছর তিনটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ডিসেম্বরে আরো তিনটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেয়ার কথা রয়েছে। এ বছরের প্রথম তিন মাসে জার্মানির মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ছয় শতাংশ এসেছে পরমাণু বিদ্যুৎ থেকে, অন্যদিকে গ্যাসে উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ ছিল ১৩ শতাংশ।
তবে তার এমন মন্তব্যের ফলে জার্মান সরকারে এফডিপির অন্য জোটসঙ্গী পরিবেশবাদী গ্রিন পার্টির সঙ্গে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। পরমাণু বিদ্যুতে ফেরত যাওয়ার সিদ্ধান্ত ‘আমরা থাকতে কার্যকর হবে না’ বলে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন গ্রিন পার্টির সহ-প্রধান রিকার্ডা লাং।
পাবলিক ব্রডকাস্টার জেডডিএফকে তিনি বলেন, পরমাণু বিদ্যুৎ এখনও একটি ‘উচ্চঝুঁকির প্রযুক্তি’।
পরমাণুর পক্ষে মত জোরালো হচ্ছে
পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেয়ার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করার এই দাবি জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের মধ্য-বামপন্থি দল এসপিডি এবং তাদের জোটসঙ্গী গ্রিন পার্টিকে একটু বিপদেই ফেলে দিয়েছে। গ্রিনপার্টির মূলনীতির অন্যতম পরমাণু বিদ্যুতের বিরোধিতা। অন্যদিকে জার্মানিকে পরমাণু বিদ্যুৎ থেকে বের করে নিয়ে আসার ব্যাপারে এসপিডির সঙ্গে গ্রিনদের সমঝোতা প্রায় দুই দশকের পুরাতন।
জাপানের ফুকুশিমা বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিপর্যয়ের পরপর ২০১১ সালে তৎকালীন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল দেশটির পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু এবার পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্থায়ীত্ব দীর্ঘায়িত করার জন্য লিন্ডনারের প্রস্তাবে সমর্থন রয়েছে ম্যার্কেলের দল মধ্য-ডানপন্থি সিডিইউ এর।
তবে এখন পর্যন্ত সরকারের আনুষ্ঠানিক অবস্থান পরমাণু বিদ্যুতে ফেরত না যাওয়ার পক্ষে। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালু রাখাটা আইনগত এবং কৌশলগত দিক থেকেও জটিল একটি প্রক্রিয়া। এর ফলে গ্যাস সঙ্কটের সমাধান হবে না বলেও মনে করে সরকার।