ডেস্ক রিপোর্ট :
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর দেশে হু হু করে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। আজ শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ানবাজার, মতিঝিল, কাপ্তানবাজার, যাত্রাবাড়ী, টিকাটুলি, স্বামীবাগ, মিরপুর, বাড্ডা, রামপুরাসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে—প্রতিটি পণ্যের দাম চড়া। এর মধ্যে সবচেয়ে বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে ৪০ টাকা বেড়ে ব্রয়লার মুরগির কেজি ২০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া ফার্মের মুরগির ডিমের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। ফার্মের মুরগির এক ডজন ডিমের দাম ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর সঙ্গে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি। তবে কাঁচা মরিচের দাম কিছুটা কমেছে।
কারওয়ানবাজারে গিয়ে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি দরে। তবে, কোনো কোনো ব্যবসায়ী ১৯০ টাকা কেজিও বিক্রি করছেন। গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির কেজি ছিল ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা। ব্রয়লার মুরগির পাশাপাশি দাম বেড়েছে পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগির। সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা। গত সপ্তাহে ছিল ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা।
সবজির বাজারে দেখা গেছে, বাজারে সব থেকে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে শিম। এক কেজি শিমের কেজি ১৯০-২০০ টাকা রাখা হচ্ছে। শিমের পাশাপাশি দাম বেড়েছে পাকা টমেটোর। পাকা টম্যাটো বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে। আর গাজর গত সপ্তাহের মতো ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। বরবটিও গত সপ্তাহের মতো ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। শসার দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। গত সপ্তাহে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া শসা এখন ৭০ থেকে ৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁকরোলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁচা পেঁপের কেজি ২০ থেকে ২৫ টাকা, পটল ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। কচুর লতি, ঝিঙে, চিচিঙ্গার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। করলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এসব সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকা। তেলাপিয়া, পাঙাস মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৯০ টাকা। শিং মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪৬০ টাকা। কৈ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। পাবদা মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এসব মাছের দামে কেজিতে ১০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এক কেজি ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৬০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা, ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা, আর ৪০০-৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা।
এদিকে, বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে খোলা সয়াবিন তেলের কেজি বিক্রি হয়েছে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায়। আর, আজ বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকায়। বোতলজাত সরিষার তেলের লিটার বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকায়। অপরদিকে, বেড়েছে পামঅয়েলের দামও। গত সপ্তাহে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে এক কেজি পামঅয়েল। আজ বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়।
কারওয়ানবাজারে হাসেম মিয়া নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করি। সব পণ্যের দাম বাড়লেও আমাদের বেতন একই জায়গায় রয়েছে। কীভাবে সংসার চালাব? কিছুই বুঝতে পারছি না। বাজারে এসে কিছুই মনমতো কিনতে পারছি না। এত দাম দিয়ে বাজার করে সংসার চালানো অনেক কঠিন।’
রাব্বী নামের আরেক ক্রেতা জানান, একটি মেসে কয়েক জন মিলে থাকেন। আজ তাঁর বাজারের দিন। যে টাকা আজ বরাদ্দ রয়েছে, তা দিয়ে পুরো বাজার করা সম্ভব না। তিনি বলেন, ‘বাসা থেকে বাবা যে টাকা পাঠান, তা দিয়ে কোনো রকমে পড়ালেখা বা খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা হয়। এখন বাবার পাঠানো টাকায় ঢাকায় টিকে থাকতে কঠিন হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।’
কারওয়ানবাজারে সবজি ব্যবসায়ী আক্তার হোসেন বলেন, ‘জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর সবকিছু একসঙ্গে বেড়ে গেছে। আমাদের অনেক বেশি দিয়ে কিনে আনতে হয়।’ এভাবে চলতে থাকলে দাম আরও অনেক বেশি বাড়বে বলে জানান তিনি