আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
প্রবাসী আয় রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়ায় বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে। এতে হু হু করে বাড়তে থাকা মার্কিন ডলার এখন উল্টো পথে হাঁটতে শুরু করেছে। কমতে শুরু করেছে দাম। ফলে, বাড়ছে টাকার মান। গত সপ্তাহে কার্ব মার্কেট বা খোলা বাজারে নগদ ডলার যেখানে ১২০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল, আজ বৃহস্পতিবার তা নেমে এসেছে ১১০ টাকায়। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে খোলাবাজারে ডলারের দাম কমেছে ১০ টাকা। কোথাও কোথাও বিক্রি হয়েছে এর থেকে কম দামে।
মতিঝিলে খুচরা বাজারে ডলার বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১১ টাকায়। অপরদিকে, বসুন্ধরা মার্কেটে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ডলার ১০৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে, বাজারে আরও স্থিতিশীলতা আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গতকাল মানি চেঞ্জারগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছে। ওই বৈঠকে প্রতি ডলারে সর্বোচ্চ দেড় টাকা মুনাফার সীমা ঠিক করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আগে গত রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকের সংগঠন বাফেদা বৈঠক করে। সেখানে বলা হয়, ব্যাংকগুলো ডলার কেনাবেচায় কত টাকা মুনাফা করবে, তা তারা নিজেরাই ঠিক করবে। তবে, বেচাকেনার মধ্যে পার্থক্য যেন এক টাকার বেশি না হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখাপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘মানি চেঞ্জারদেরকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর গড় রেট থেকে এক টাকা বেশি দামে ডলার ক্রয় করে সর্বোচ্চ দেড় টাকা মুনাফা করতে বলা হয়েছে। এর আগে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সর্বোচ্চ মুনাফার সীমা এক টাকা বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নিয়ম না মানলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে, অতিরিক্ত মুনাফা করে বাজার অস্থিতিশীল করায় দেশি–বিদেশি ছয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ব্যাখ্যা তলব করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে এসব ব্যাংকের ট্রেজারিপ্রধানদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ব্যাংক ছয়টি হলো দেশীয় ডাচ্–বাংলা, সাউথ ইস্ট, প্রাইম, দি সিটি, ব্র্যাক ও বিদেশি খাতের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। গতকাল বুধবার ব্যাংকগুলোর এমডিদের এই চিঠি দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘ছয় এমডিকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কারা দায়ী, তা জানাতে বলা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর আগে এই ছয় ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, মার্কিন ডলারের বাজার অস্থিতিশীল করে অতিরিক্ত মুনাফা করায় এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’
আমদানি খরচ বাড়ায় গত মে মাস থেকে দেশে ডলারের সংকট চলছে। রপ্তানি ও প্রবাসী আয় দিয়ে আমদানি দায় শোধ করা যাচ্ছে না। এ কারণে বেড়ে যায় ডলারের দাম।
বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, কোনো কোনো ব্যাংক ডলার কেনাবেচা করে এক মাসে ৪০০ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা করেছে। যার মাধ্যমে ডলারের বাজারকে আরও অস্থিতিশীল করে তোলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সামনে আরও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
চলতি আগস্ট মাসের প্রথম ১৬ দিনে ১১৭ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে বাংলাদেশে। দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ৯৫ টাকা ধরে) এর পরিমাণ ১১ হাজার ১১৫ কোটি টাকা।
অন্যদিকে, আমদানির লাগাম টানতে যেসব শর্ত দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, তার সুফল আসতে শুরু করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট মাসের ১১ দিনে দেশে মোট ১৬১ কোটি ডলার সমপরিমাণ মূল্যের আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছে। যা জুলাই মাসের তুলনায় ৯৪ কোটি ডলার বা ৩৬ শতাংশ কম। জুলাই মাসে আমদানি হয়েছিল ২৫৫ কোটি ডলার।