বিজ্ঞপ্তি:
দৈনিক শাহনামার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। জাতীয়, রাজনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন সহ সকল সংবাদের সর্বশেষ আপডেট জানতে ভিজিট করুন www.shahnamabd.com

বাংলাদেশের সব মৌসুমের বন্ধু রাশিয়া

বাংলাদেশের সব মৌসুমের বন্ধু রাশিয়া

ডেস্ক রিপোর্ট :
রাশিয়াকে বলা হয় বাংলাদেশের সব মৌসুমের বন্ধু। বৈরী পরিস্থিতিতেও রাশিয়া যেমন বাংলাদেশের পাশে থাকে, তেমনি অনুকূল সময়েও। মুক্তিযুদ্ধের সময় রাশিয়া বাংলাদেশের পক্ষে জোরালো ভূমিকা রেখেছিল।

১৯৭১ সালে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তা না পেলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন আরও কষ্টকর হতো। স্বাধীন হওয়ার পরও এক অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে ভূমিকা রেখে আসছে রাশিয়া।

খাদ্য আমদানি

বিশ্বজুড়ে চলমান সংকটের মধ্যে রাশিয়া থেকে খাদ্য ও জ্বালানি আমদানি করতে চাচ্ছে বাংলাদেশ। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ভারত, চীনসহ কোনো কোনো দেশ রাশিয়া থেকে কম দামে জ্বালানি তেল কিনছে। গত মে মাসে বাংলাদেশকেও অপরিশোধিত জ্বালানি তেল কেনার প্রস্তাব দেয় রাশিয়া।

রাশিয়া থেকে সরকারি পর্যায়ে গম আমদানির প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হওয়ার পথে। দেশটি থেকে প্রাথমিকভাবে সাড়ে তিন লাখ টন গম কিনতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এ নিয়ে চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে। আবার রুশ জ্বালানি তেল আমদানি নিয়েও প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা চলছে। দুই দেশের প্রতিনিধিদলের মধ্যে এক দফা বৈঠকে কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

বুধবার (২৫ আগস্ট) দুপুরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্দার মান্টিটস্কি বলেন, রাশিয়া থেকে সরকারি পর্যায়ে গম ও সার আমদানির বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে সাড়ে তিন লাখ টন গম ও এক লাখ টনের বেশি পটাশ সার পাঠানো হবে।

এ সময়ে বৈশ্বিক খাদ্যসংকট নিয়ে রাশিয়ার উদ্বেগের কথাও জানান তিনি। রুশ রাষ্ট্রদূত বলেন, সে কারণে ইউক্রেন থেকে খাদ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে রাশিয়া উদ্যোগ নিয়েছে। তবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটে রাশিয়ার কোনো দায় নেই। কেননা, রাশিয়া কোনো ধরনের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তাই এই সংকটের জন্য আপনারা রাশিয়ার ওপর দায় চাপাবেন না।

মুক্তিযুদ্ধের আগে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক

১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের জন্ম হওয়ার পর সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো ছিল না। পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়নের সম্পর্ক ভালো না হলেও পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) সঙ্গে সোভিয়েতের সুসম্পর্ক ছিল। পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ন্যাপ-মোজাফফর ও পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সোভিয়েতের সম্পর্ক ছিল ঘনিষ্ঠ।

পশ্চিম পাকিস্তানের চেয়ে পূর্ব পাকিস্তানে দল দুটির জনসমর্থন বেশি ছিল। পূর্ব পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক আন্দোলন জোরদার ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের তুলনায়। যা পরোক্ষভাবে হলেও সোভিয়েত ইউনিয়নের পক্ষে ছিল।

পাকিস্তান ১৯৫৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি সামরিক চুক্তি সই করে। এতে পূর্ব পাকিস্তানে মারাত্মক বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক চুক্তির বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছিল। আর এ চুক্তির নিন্দা জানিয়ে যৌথ বিবৃতি দিয়েছিলেন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের ১৬২ নবনির্বাচিত সদস্য।

মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের পাশে সোভিয়েত

পাকিস্তানের শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। এতে ভারতের প্রত্যক্ষ সহযোগিতার পাশাপাশি পরোক্ষভাবে সর্বাত্মক ভূমিকা রাখে সোভিয়েত ইউনিয়ন। মিত্র দেশগুলোকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে জোরালো পদক্ষেপ নেয় দেশটি।

২৫ মার্চ বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর গণহত্যার নিন্দা জানায় সোভিয়েত ইউনিয়ন। গণহত্যা বন্ধ করতে পাকিস্তান সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়। যুদ্ধে সামরিক ও আর্থিকভাবে বাঙালি মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপক সহায়তা করে সোভিয়েত ইউনিয়ন।

সে সময়ের দ্বিমেরু বিশ্ব ব্যবস্থায় পাকিস্তান-চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ায় সমাজতান্ত্রিক দেশটি।

যুদ্ধের শেষ দিকে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর কাছে যখন পাকিস্তান পরাজিত হচ্ছিল, তখন বঙ্গোপসাগরে সপ্তম নৌবহর পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন হুমকি প্রতিহত করতে ১৯৭১ সালের ৬ ও ১৩ ডিসেম্বর ভ্লাদিভোস্তক থেকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহরের দুই স্কোয়াড্রন ক্রুজার, ডেস্ট্রয়ার ও পরমাণু অস্ত্রে সজ্জিত একটি পারমাণবিক ডুবোজাহাজ পাঠায় সোভিয়েত ইউনিয়ন। এই নৌবহরের নেতৃত্বে ছিলেন অ্যাডমিরাল ভ্লাদিমির ক্রুগ্লিয়াকভ।

সোভিয়েত ইউনিয়ন এগিয়ে আসার কারণেই পাকিস্তানকে সহায়তা করতে পারেনি মার্কিন নৌবহর। ১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বর থেকে ১৯৭২ সালের ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত মার্কিন রণতরীকে তাড়া করে বেড়ায় সোভিয়েত নৌবহর। পাশাপাশি গোপনে ভারতীয় নৌবাহিনীকে সহায়তাও করেছে। এছাড়া পাকিস্তানি নৌবাহিনীর বিরুদ্ধে গোপনে অভিযান চালিয়ে তাদের পর্যুদস্ত করে তোলে।

মুক্তিযুদ্ধের একেবারে শেষ দিকে ৩ ডিসেম্বর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব তোলে। তাতে চীনও সমর্থন দেয়। কিন্তু ভেটো দিয়ে তা প্রতিহত করে সোভিয়েত ইউনিয়ন। বিশ্লেষকরা মনে করেন, ওই সময় যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব পাস হলে ১৬ ডিসেম্বরে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারত না বাংলাদেশ। যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব পাস হলে যুদ্ধ আরও দীর্ঘ হতো।

যুদ্ধপরবর্তী রুশ সহায়তা

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গেল ৫০ বছরে যা পার হয়েছে নানা চড়াই-উতরাই।

১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় সোভিয়েত ইউনিয়ন। আর পরদিন দুদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। স্বাধীন বাংলাদেশের সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়নের সম্পর্ক ছিল সৌহার্দ্যপূর্ণ।

মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম বন্দর ও কর্ণফুলি নদীতে অসংখ্য মাইন পুঁতে রেখেছিল পাকিস্তানি হানাদাররা। আবার যুদ্ধের সময় অনেক নৌযান ডুবে যায়। এতে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্রখ্যাত চট্টগ্রাম বন্দরটি অকার্যকর হয়ে পড়ে।

যুদ্ধবিধ্বস্ত সমুদ্রবন্দরটির কার্যক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে ও মাইন অপসারণ করতে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহরের ২২টি জাহাজ দূরপ্রাচ্যের ভ্লাদিভোস্তক থেকে চট্টগ্রামে আসে ১৯৭২ সালের মে মাসে। বছরখানেক লেগেছিল মাইন অপসারণে। এ সময়ে মাইন বিস্ফোরণে প্রাণ হারান ইউরি রেদকিন নামের এক সোভিয়েত মেরিন। বাংলাদেশের নেভাল একাডেমিতে তার কবর রয়েছে।

এরপর চট্টগ্রাম একটি প্রধান বন্দর হিসেবে আগের অবস্থায় ফিরে আসে সোভিয়েত ইউনিয়নের সহযোগিতায়। এমনকি ১৯৭৩ সালে এটির ধারণ ক্ষমতা যুদ্ধপূর্ব সক্ষমতাকেও ছাড়িয়ে যায়। ১৯৭২ সালের মার্চে মস্কো সফরে যান তখনকার প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। মুক্তিযুদ্ধে সহায়তার জন্য তখন সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সব ওলটপালট

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলে সবকিছু ওলট-পালট হয়ে যায়। বাংলাদেশের রাজনীতি হয়ে ওঠে দুর্যোগপূর্ণ। পররাষ্ট্রনীতিও হয়ে যায় সোভিয়েতবিরোধী। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকে পড়ে বাংলাদেশ।

জিয়াউর রহমান ও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সামরিক সরকার যুক্তরাষ্ট্র, চীন, পাকিস্তান ও আরব দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। শীতল হয়ে পড়ে সোভিয়েত-বাংলাদেশের উষ্ণ সম্পর্ক। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এ সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে অবনতি ঘটে।

১৯৭৯ সালে আফগানিস্তানে সোভিয়েত হস্তক্ষেপেরও বিরোধিতা করে ঢাকা। আর ৬৮টি দেশের সঙ্গে মিলে ১৯৮০ সালে মস্কোয় গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকও বর্জন করে বাংলাদেশ। ১৯৮৩ সালের ডিসেম্বরে ও ১৯৮৪ সালের জানুয়ারিতে ঢাকা থেকে ৯ সোভিয়েত কূটনীতিককে বরখাস্ত করে বাংলাদেশ সরকার। সম্পর্কের চূড়ান্ত অবনতি ঘটে তখন।

সহায়তা অব্যাহত রাখে সোভিয়েত ইউনিয়ন

কিন্তু এসব কিছুতেও বাংলাদেশে সোভিয়েত সহায়তা বন্ধ হয়নি। বিদ্যুৎ উৎপাদন, প্রাকৃতিক গ্যাস ও জ্বালানি তেল- এ তিন ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সহায়তা করে সোভিয়েতরা। ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হয় তাদের অর্থায়নে। বাংলাদেশে দাতা দেশগুলোর মধ্যে ১৯৮৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল ১৪তম। এ দুদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক সম্পর্কও রয়েছে।

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটে ১৯৯১ সালে। তখন রাশিয়াকে সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্তরসূরি হিসেবে স্বীকৃতি দেয় বাংলাদেশ। সম্পর্ক আবার ভালো হতে শুরু করে। পুরো নব্বইয়ের দশকে রুশ-বাংলাদেশ সম্পর্ক ছিল চালিয়ে নেয়ার মতো। বসনিয়া যুদ্ধসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পারস্পরিক বিপরীতে অবস্থান করে দুই দেশ। কিন্তু পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কোন্নয়ন ঘটে।

২০০৯ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গ সফর করে তখনকার রুশ প্রধানমন্ত্রী ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন শেখ হাসিনা। ২০১৩ সালেও মস্কো যান বঙ্গবন্ধুকন্যা।

রাশিয়ার সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক

এ সফরে রাশিয়ার কাছ থেকে প্রায় ১০০ কোটি ডলারের সমরাস্ত্র কেনার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয় বাংলাদেশ। শেখ হাসিনা ও প্রেসিডেন্ট পুতিনের এক বৈঠকের পর চুক্তিটি হয়েছিল। বাংলাদেশের তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি বলেন, রাশিয়ার কাছ থেকে রাষ্ট্রীয় ঋণেই বাংলাদেশ এই সমরাস্ত্র কিনেছে। তখন বাণিজ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আরও একগুচ্ছ চুক্তি করে বাংলাদেশ।

গেল বছর বাংলাদেশ সফর করেন রাশিয়ার উপপ্রতিরক্ষামন্ত্রী আলেক্সান্দার ফোমিন। তিনি বলেন, সামরিক এবং সামরিক-প্রযুক্তিগত সহযোগিতার ক্ষেত্রসহ আমাদের মধ্যে সহযোগিতা ক্রমেই বাড়ছে। রাশিয়া বাংলাদেশের সঙ্গে সামরিক ও সামরিক-প্রযুক্তিগত সহযোগিতা জোরদার করতে প্রস্তুত।

তিনি আরও জানান, সামরিক এবং সামরিক প্রযুক্তিবিষয়ক সহযোগিতার ক্ষেত্রসহ আমাদের দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা উন্নত হচ্ছে। পৃথিবী নামের এই গ্রহের শান্তির জন্য আমাদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধির স্বার্থে এই সম্পর্ক আরও শক্তিশালী ও উন্নত করার জন্য প্রস্তুত আমরা।

বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীকে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামাদি দিয়ে সহায়তাকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম রাশিয়া। ২০১৩ সালে রাশিয়ার কাছে থেকে মেতিস-এম ট্যাংকবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র কেনে বাংলাদেশ। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে বাংলাদেশ রাশিয়ার কাছ থেকে ১৬টি ইয়াক-১৩০ প্রশিক্ষণ বিমান কেনে। এছাড়া ২০১৬ সালে বাংলাদেশ রাশিয়া থেকে ৬টি এমআই-১৭১এসএইচ হেলিকপ্টার নিয়েছে।

বাংলাদেশকে রুশ অর্থনৈতিক সহযোগিতা

রাশিয়ার সঙ্গে বর্তমানে বাংলাদেশের সম্পর্কের মূল ভিত্তি অর্থনৈতিক সম্পর্কের ওপর দাঁড়িয়ে। সংবাদমাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশকে মূলত তিনটি দিকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে রাশিয়া। যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করছে। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে মূলত তিনটি ভিত্তি এখন। প্রথমটি ভৌত অবকাঠামো খাত। এর মধ্যে পড়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সাহায্য। দ্বিতীয়ত, মানবসম্পদ উন্নয়নে কারিগরি সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করা।

পাবনার রূপপুরে নির্মিত হচ্ছে দেশের একমাত্র পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এটি নির্মাণে বড় অংশের অর্থ এসেছে রাশিয়ার দেয়া ঋণ থেকে। নির্মাণ করছে রুশ রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রোসাটম। ২০২৪ সালে নির্মাণ শেষে সেখান থেকে উৎপাদিত হবে দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে।

এরইমধ্যে ঘোড়াশালে সাড়ে ৪০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে রাশিয়া। ২০১২ সালে পারমাণবিক বিদ্যুৎ শক্তির উন্নয়নে সহায়তার জন্য রাশিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়।

বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ায় রফতানি হয়েছে ৬৬ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য, বিপরীতে আমদানি করা হয়েছে ৪৬ কোটি ৬০ লাখ ডলারের পণ্য। ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাশিয়ার ঋণ সহায়তা ১০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি।

যেভাবে গড়ে ওঠে সাংস্কৃতিক যোগসূত্র

বাংলাদেশের সঙ্গে রাশিয়ার সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে অষ্টাদশ শতাব্দীতে। প্রথম বাংলা নাটক মঞ্চস্থ করেছিলেন রুশ নাট্যকার ও অভিযাত্রী গেরাসিম লেবেদেভ। তিনি তার ভাষা-শিক্ষক গোলকনাথ দাসের সহায়তায় ১৭৮৫ সালের ২৭ নভেম্বর ‘দ্য ডিসগাইজ’ নামের একটি ইংরেজি নাটক বাংলায় অনুবাদ করেন। পরে তা ‘ছদ্মবেশ’ নামে মঞ্চস্থ করেন। স্থানীয় বুদ্ধিজীবীদের সহায়তায় লেবেদেভ বাংলায় প্রথম ইউরোপীয় ধাঁচের থিয়েটারও স্থাপন করেন।

এছাড়া, লেবেদেভ একটি ছোট বাংলা অভিধান রচনা করেন, পাটিগণিতের ওপর বাংলায় একটি বই লিখেন এবং আনন্দমঙ্গল কাব্যের অংশবিশেষ রুশ ভাষায় অনুবাদ করেন।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর অর্থনৈতিক, শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসে সোভিয়েত ইউনিয়ন। সম্পর্ক গভীর করার চেষ্টা হিসেবে দুদেশের মানুষে মানুষে সম্পর্কের প্রতি জোর দেয়া হয়। বহু মানুষ সে সময় রাশিয়া পড়তে যান বাংলাদেশ থেকে।

কমিউনিস্ট আদর্শ জনপ্রিয় করতে তখন বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতি এবং প্রকাশনা ক্ষেত্রে সোভিয়েত ইউনিয়ন বিপুল বিনিয়োগ করেছিল।

ইউক্রেন যুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থান

গেল ২৫ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ওঠা প্রস্তাবে ভোট দেয়নি বাংলাদেশ। এর ব্যাখ্যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশ শান্তি চায় এবং যুদ্ধের বিপক্ষে- যে কারণে ভোটদানে বিরত ছিল।

তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ মীমাংসার কথা বলেছি। আমরা জাতিসংঘেও একই কথা বলেছি। আমরা বলেছি, আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। শান্তি ও আলোচনার মাধ্যমে যাতে সমাধান হয়।

২০১৪ সালের ক্রিমিয়া সঙ্কটের সময় যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য পশ্চিমা দেশগুলোর মতো রাশিয়ার বিরোধিতা না করে নিরপেক্ষতা অবলম্বন করে বাংলাদেশ।

গেল ৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রাশিয়াকে শাস্তি দিতে গিয়ে বিশ্বের সব মানুষকে কষ্ট দেয়া ঠিক না। অবরোধ আরোপ করে কোনো দেশ বা জাতিকে যে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না, সেটাও প্রমাণিত হয়েছে। সারা বিশ্বের মানুষের দুর্ভোগের কথা ভেবে, অর্থনীতির কথা ভেবে রাশিয়ার ওপর আরোপ করা যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার আহ্বানও জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

 

Please Share This Post in Your Social Media




All rights reserved by Daily Shahnama
কারিগরি সহায়তা: Next Tech