আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন দল কনজারভেটিভ পার্টির নেতা নির্বাচিত হয়েছেন দেশটির বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস। এ জয়ের মধ্য দিয়ে তিনিই হতে যাচ্ছেন দেশটির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী।
কনজারভেটিভ পার্টির নতুন প্রধান লিজ ট্রাস মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) স্কটল্যান্ডের বালমোরালে সাক্ষাৎ করবেন রানি এলিজাবেথের সঙ্গে। সেখানে ক্ষমতাসীন দলটির নতুন প্রধানকে সরকার গঠন করার আহ্বান জানাবেন রানি। ২০১৫ সালের পর লিজ ট্রাসই হচ্ছেন ব্রিটেনের চতুর্থ কনজারভেটিভ প্রধানমন্ত্রী।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রিত্বের দৌড়ে থাকা আরেক প্রার্থী ঋষি সুনাকের বিপরীতে লিজ ট্রাসের জয়ের ব্যবধান নিয়ে কিছু পরিসংখ্যান দিয়েছেন কনজারভেটিভ পার্টির সদস্য, ১৯২২ কমিটির চেয়ারম্যান স্যার গ্রাহাম ব্র্যাডি। তিনি জানান, কনজারভেটিভ পার্টির ৬০ হাজার ৩৯৯ জন সদস্যের ভোট পেয়েছেন সুনাক। আর ট্রাস পেয়েছেন ৮১ হাজার ৩২৬ ভোট। ভোট পড়েছে ৮২.৬ শতাংশ।
দীর্ঘদিন ধরে নানা ইস্যুতে চাপের মুখে থাকা বরিস জনসন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এবং কনজারভেটিভ পার্টির নেতার পদ থেকে অব্যাহতি নিতে বাধ্য হওয়ার পর শুরু হয় তার উত্তরসূরি বাছাইয়ের প্রক্রিয়া। যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন দল কনজারভেটিভ পার্টির নেতা নির্বাচনে ভোটাভুটি শেষ হয়েছে আগেই। সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) যার ফল ঘোষণা হলো। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর বলছে, কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত নতুন নেতা লিজ ট্রাসই যাচ্ছেন ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে।
প্রায় দুমাস ধরে চলা কনজারভেটিভ পার্টির নেতা এবং ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় লিজ ট্রাসের প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন সাবেক চ্যান্সেলর ঋষি সুনাক। বিবিসি জানায়, সোমবার স্থানীয় সময় বেলা সাড়ে ১১টায় ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির নতুন প্রধানের নাম ঘোষণার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে বরিস জনসনের ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া।
নির্বাচনের জন্য যুক্তরাজ্যে এবার সাধারণ ভোট হয়নি। এর পরিবর্তে বরিসের উত্তরসূরি নির্বাচন করেছেন কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যরা। ব্রিটেনে যখন কোনো প্রধানমন্ত্রী তার মেয়াদকালের মধ্যে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তখন সাধারণ নির্বাচনের আয়োজন করা হয় না। এর পরিবর্তে ক্ষমতাসীন দলের সদস্যরা কেবল একজন নতুন নেতা বেছে নেন।
বরিস জনসন যখন পদত্যাগের কথা ঘোষণা করলেন তখন কনজারভেটিভ পার্টির এমপি এবং দলের সদস্যদের পরবর্তী পদক্ষেপ ছিল তার উত্তরসূরি বেছে নেয়া। এই বাছাই প্রক্রিয়ার প্রথম রাউন্ডে পার্লামেন্টে শুধুমাত্র কনজারভেটিভ পার্টির এমপিরা ভোট দেন। কয়েক দফার এ ভোট শেষে দুজন প্রার্থী বিজয়ী হন। আর তারা হলেন বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী বা চ্যান্সেলর অব এক্সচেকার ঋষি সুনাক।
একাধিক প্রকাশ্য জনসভায় এবং টেলিভিশন বিতর্কে পরস্পরের বিরুদ্ধে সমালোচনায় সরব হতে দেখা গেছে দুজনকে। নির্বাচনের প্রাথমিক পর্বে ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুনাক এগিয়ে থাকলেও, ক্রমশ ব্যবধান কমাতে থাকেন লিজ ট্রাস। স্থানীয় সময় শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ভোটগ্রহণ পর্ব শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত ট্রাসের দিকেই পাল্লা ভারী ছিল।
অক্সফোর্ডের মেরটন কলেজে পড়াশোনা করেছেন ট্রাস। সেসময় লিবারেল ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে সক্রিয় ছিলেন তিনি। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি লিবারেল ডেমোক্র্যাটসের প্রেসিডেন্ট এবং লিবারেল ডেমোক্র্যাট যুব ও ছাত্রদের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যও ছিলেন লিজ ট্রাস। তবে ১৯৯৬ সালে স্নাতক হওয়ার পর যোগ দেন কনজারভেটিভ পার্টিতে।
২০১০ সালের সাধারণ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন লিজ ট্রাস। নির্বাচিত হয়েই শিশুযত্ন, গণিত শিক্ষা এবং অর্থনীতিসহ দেশের বেশ কয়েকটি নীতির ক্ষেত্রে সংস্কারের আহ্বান জানিয়ে আলোচনায় আসেন।
এরপর ২০১৯ সাল থেকে যুক্তরাজ্যের নারী ও সমতা বিষয়ক মন্ত্রী এবং ২০২১ সাল থেকে পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ এবং উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করন মেরি এলিজাবেথ ট্রাস। লিজ ট্রাস অর্থনৈতিকভাবে নব্য উদারনৈতিক এবং সামাজিকভাবে রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে যুক্ত।