ডেস্ক রিপোর্ট :
কুষ্টিয়ায় মেঘলা খাতুন (১৬) নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থী সন্তান জন্ম দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন। ঘটনাটি এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। শহরের পূর্ব মিলপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ওই শিক্ষার্থীর সাহস আর মনোবল দেখে অনেকেই তার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ১৫ মার্চ মেঘলা খাতুনের বিয়ে হয়। তার স্বামী আল আমিন একটি কারখানায় দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন। মেঘলা কুষ্টিয়া শহরের আলাউদ্দিন আহামেদ ক্যাডেট স্কুল থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে।
চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষা শুরু হলে গর্ভের সন্তান নিয়েই শহরের চর মিলপাড়া গড়াই আবাসন এলাকায় বাবা-মায়ের বাড়িতে থেকে তিনি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে আসছিলেন।
আজ মঙ্গলবার ছিল ইংরেজি ২য় পত্রের পরীক্ষা। কিন্তু ভোর হতে না হতেই তার প্রসব বেদনা শুরু হয়। এ অবস্থায় সকাল ৭টার দিকে পরিবারের লোকজন শহরের পূর্ব মিলপাড়ায় অবস্থিত নগর মাতৃসদন হাসলাতালে নিয়ে গিয়ে প্রসূতি ওয়ার্ডে তাকে ভর্তি করা হয়। এরপর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় মেঘলা ফুটফুটে এক ছেলে-সন্তানের জন্ম দেন। সন্তান জন্মের পর মেঘলা খাতুন শারীরিকভাবে সুস্থ বোধ করলে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ইচ্ছা পোষণ করেন। সদ্য ভূমিষ্ট নবজাতক সন্তানকে হাসপাতালে স্বজনদের কাছে রেখে অদম্য মনোবল নিয়ে মেঘলা খাতুন ছুটে যান শহরের কুষ্টিয়া হাই স্কুল পরীক্ষা কেন্দ্রে।
মেঘলার অদম্য মনোবল আর সাহস দেখে বিস্মৃত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে তাকে পরীক্ষার হলে পৌঁছে দেয়।
পরীক্ষার্থী মেঘলা খাতুন বলেন, আমি শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকলেও এখানকার চিকিৎসকসহ স্টাফরা আমাকে মানসিক সাহস যুগিয়েছেন। এখানকার সেবার মান অনেক উন্নত। তাই আমি নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান প্রসব করতে পেরেছি এবং নবজাতক সন্তানকে রেখে পিছুটান ছাড়াই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পেরেছি।
হাসপাতালের চিকিৎসক সুমাইয়া শারমিন বন্যা বলেন, সন্তান জন্ম দেওয়ার পর আমরা মেঘলা খাতুনকে শারীরিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছি সে সুস্থ রয়েছে। তাই তার ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে আমাদের অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে পরীক্ষার হলে পাঠানোর ব্যবস্থা করি।
হাসপাতালের প্রজেক্ট ম্যানেজার রাহেলা পারভিন বলেন, মেঘলার মতো অদম্য মনোবল নিয়ে লড়াই করা মেয়ের সংখ্যা খুবই কম। আমরা তার মনোবল দেখে বিস্মৃত হয়েছি। আমরা হাসপাতালের সবাই মেঘলাকে অভিবাধন জানাচ্ছি এবং নবজাতক ও তার পরিবারের মঙ্গল কামনা করছি।