ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে যুদ্ধের তীব্রতা বেড়েছে। দেশটির সশস্ত্র বাহিনী লুহানস্ক অঞ্চলের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। অগ্রসরমান ইউক্রেনের সৈন্যরা যখন একর পর এক গ্রাম পুনর্দখল করছে তখন রাস্তায় রুশ সৈন্যদের মৃতদেহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়।
গত কয়েকদিনে কয়েক হাজার রুশ সেনা এসব এলাকার যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পিছিয়ে এসেছে, আর পেছনে ফেলে রেখে গেছে ব্যাপক ধ্বংস-যজ্ঞের নিদর্শণ। পূর্বাঞ্চলের যুদ্ধক্ষেত্রের দিকে যেতে যেতে দেখা যায় বোমা বিস্ফোরণে সৃষ্টি হওয়া বড় বড় গর্ত, পুড়ে যাওয়া যানবাহন আর এখানে ওখানে রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহ।
রুশ সেনারা দোনেৎস্ক অঞ্চলের টর্স্কে শহর থেকে পিছিয়ে যাওয়ার পর খালি পড়ে থাকা অনেক বাড়িতে রুশ সেনাদের ইউনিফর্ম ঝুলে থাকতে দেখা যায়। কয়েকদিন আগেও রুশ সেনারা এই শহরটিতে ঘাঁটি গেড়ে বসেছিল কিন্তু এখন তাদের বদলে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে রাস্তায় টহল দিতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে অ্রান্টোনিনা নামে টর্স্কে শহরের একজন পেনশনভোগী বলেন, ‘এটা ছিল ভয়াবহ। এখানে কোনো প্রাণ ছিল না। আমাদের প্রতিবেশিরা বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিল আর সেসব বাড়িতে ওঠেছিল রাশিয়ার সৈন্যরা।’ তিনি বলেন, ‘কিন্তু যখন তারা চলে যাচ্ছিল, তারা আতঙ্কে পালাচ্ছিল, ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে দৌড়ে পালাচ্ছিল তারা।’
এ বিষয়ে দিমা নামে একজন কৃষক জানান, ‘আমরা আমাদের বাড়ির বেসমেন্টে তিন থেকে চার দিন কোনোভাবে বেঁচে ছিলাম। সেসময়ে এতো বেশি গোলাগুলি আর বোমা বর্ষণ হচ্ছিল যে তারা জঙ্গলে পালিয়ে গিয়েছিল।’
রুশ সেনাদের পিছিয়ে পড়ার বিষয়ে বর্ণনা করতে গিয়ে একজন বয়স্কা নারী বলেন, ‘তারা ছিল সব জায়গায়, রাস্তায় অনেক যানবাহন ছিল, রাস্তায়-গাড়িতে করে তারা চলাচল করছিল। আমি কথা বলতেও ভয় পাচ্ছিলাম।’
টর্স্কে শহরটি ইউক্রেন সশস্ত্র বাহিনীর সদ্য পুনর্দখল করা কৌশলগত লাইমান শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। আলজাজিরার প্রতিবেদক চার্লস স্ট্যাটফোর্ডের ভাষ্য অনুয়ায়ী রুশ সেনারা ক্রেমিনার দিকে চলে যাবার পর এই শহরটির আশেপাশের গ্রামগুলোতে দেখা যায় গোলার আঘাতে বিধ্বস্ত প্রায় সব কিছু। কোনো কোনো ক্ষতিগ্রস্ত সামরিক যানে এমনকি মৃত মানুষকেও দেখা যাচ্ছিল। একটি ধ্বংস হয়ে যাওয়া সেতুতে দেখা যাচ্ছিল বোমা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি স্কুল বাস থেকে দুজন রুশ সেনার মৃতদেহ ঝুলে আছে।
এদিকে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী রোববার জানায়, দোনেৎস্ক অঞ্চলের বাখমুত ও আভদিভকা শহরে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলছে। এসব এলাকার কিছু অংশ রাশিয়া সম্প্রতি তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল। ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফ জানান, তারা কোনো এলাকা হারাননি তবে দুটি শহরকে কেন্দ্র করে পুরো এলাকার পরিস্থিতি ‘খুবই উত্তপ্ত’।