হেলথ ডেস্ক :
ডেঙ্গুতে রক্তের প্লাটিলেট কম মানেই আতঙ্ক নয়। চিকিৎসকরা বলছেন, অন্য কোনো উপসর্গ না থাকলে ১০ হাজারের নিচে নামলেও আলাদা করে প্লাটিলেট দেয়ার প্রয়োজন হয় না।তবে যে কোনো পরিস্থিতিতেই রক্তচাপ কমে যাওয়া, রক্তক্ষরণের মতো উপসর্গ দেখা দিলে নিতে হবে হাসপাতালে। এদিকে নিয়ম মেনে চিকিৎসা দিতে গাইডলাইনের পাশাপাশি চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
মাজিদুর রহমান নামে এক ব্যক্তি থাকেন রাজধানীর মিরপুরে। কয়েক দিনের জ্বরের পর ধরা পড়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত তিনি। একলাফে প্লাটিলেট নেমে যায় ১৫ হাজারে। স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি হলে সঙ্গে সঙ্গে পরামর্শ দেয়া হয় প্লাজমা দেয়ার। চারদিকে ছোটাছুটিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন তার স্বজনরা। এরপর ১০ হাজার টাকা খরচ করে প্লাজমার ব্যবস্থা করে ওই হাসপাতাল থেকে চলে আসেন সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে। কোনো রক্ত না দিয়ে তিন দিনেই অনেকটা ভালো আছেন তিনি।
মাজিদুর রহমান সময় সংবাদকে বলেন, ‘প্লাটিলেট ১৫ হাজারে নামায় আমাকে প্লাজমা দেয়ার কথা জানান চিকিৎসকরা। তখন আমরা এটি জোগাড় করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চলে এসেছি। এখানে চিকিৎসার পর সেটা লাগেনি। এখন আমি সুস্থ।’
ডেঙ্গুতে রক্তের প্লাটিলেট কমা মানেই আতঙ্ক, প্রাথমিক ধারণা এটাই। তবে অন্য উপসর্গ না থাকলে এখন প্লাটিলেট ১০ কিংবা ৫ হাজারে নেমে এলেও ভয় নেই বলছেন চিকিৎসকরা।
সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. সানজিদা আইরিন বলেন, প্লাজমা কমলে মানুষ আসলে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। যত কিছুই বলা হোক না আসলে প্লাজমা কমলেই যে মানুষ মারা যাবে বা মারা যান এমনটা নয়। এমন ধারণা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। প্রচারণা আরও বাড়াতে হবে। তাহলে সেটা বুঝতে মানুষের জন্য সুবিধা হবে।
তিনি বলেন, ডেঙ্গুতে প্লাটিলেট কমা কোনো ঘটনা না, সেটা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। মূল জিনিস হচ্ছে আমাদের শরীরে পানিশূন্যতা বা পানির স্বল্পতাকে ডাক্তারি পরিভাষায় বলে ডিহাইড্রেশন সেটা মেইনটেইন করতে হবে, প্লাটিলেট একা একাই বাড়বে।
তাহলে ভয়ের জায়গাটা কোথায়?
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, হঠাৎ অতিরিক্ত বমি, পেটব্যথা, অতিরিক্ত দুর্বলতা, দাঁত, নাক, মাড়ি ও মলের সঙ্গে রক্ত যাওয়া, অস্বাভাবিক আচরণ আর সব থেকে বড় বিপদ চিহ্ন রক্তচাপ কমে যাওয়া। সেক্ষেত্রে রক্তের ঘনত্ব জানতে হেমাটোক্রিট পরীক্ষা করতে হবে।
সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোস্তফা কামাল রউফ বলেন, ডেঙ্গু হলে রক্তনালি থেকে রক্তের জলীয় অংশ বের হয়ে যায়। যেটাকে আমরা মেডিকেলের ভাষায় প্লাজমা কেস বলি, যখন এই জলীয় অংশটা রক্তনালি থেকে বের হয়ে যায়, সেটা পেটে এবং বুকে গিয়ে জমা হয়, তখন রক্তটা ঘন হয়ে যায়, ফলে রক্তচাপ কমে যায়।
তিনি বলেন, রক্তক্ষরণ হচ্ছে, পেটে প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছে, পরিচিত লোককে সে চিনতে পারছে না, এগুলো হলো ডেঙ্গুর রোগীর জন্য বিপদসংকেত। যাদের ডায়াবেটিস আছে, প্রেশার আছে এবং বিভিন্ন কঠিন রোগে ভুগছেন, তারা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।
এখনো অনেক হাসপাতালেই অপ্রয়োজনে দেয়া হয় প্লাজমা। যেখানে গাইডলাইনে স্পষ্ট বলা আছে কখন তা দিতে হবে। এ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনায় যে গাইডলাইন আছে, সেটা হালনাগাদ করা হয়েছে এবং চিকিৎসদের চিকিৎসার সুবিধার জন্য ছোট্ট গাইড বই তৈরি করে দেয়া হয়েছে। সেখানে চিকিৎসাপত্র রয়েছে।
তবে যারা ৬০ বছরের বেশি বয়স, শূন্য থেকে ছয় বছরের শিশু, অন্তঃসত্ত্বা আর যারা দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভুগছেন, তাদের বিষয়ে বাড়তি সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন ডা. মোস্তফা কামাল রউফ।