অবশেষে ইতিহাস সৃষ্টি করে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিলেন ঋষি সুনাক। দায়িত্ব নিয়েই বিভক্ত দলকে ঐক্যবদ্ধ এবং দেশটির গভীর অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবিলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটেনের এই প্রধানমন্ত্রী। রেকর্ড সৃষ্টি করে ক্ষমতায় আসা সুনাক বিশ্ব নেতাদের প্রশংসায় ভাসছেন।
মঙ্গলবার ব্রিটিশ রাজা চার্লসের সঙ্গে দেখা করে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিলেন ঋষি সুনাক। খবর : বিবিসির।
বাকিংহাম প্রাসাদ থেকে দায়িত্ব নিয়ে দশ ডাউনিং স্ট্রিটে আসেন তিনি। এসেই গভীর অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবিলার প্রতিশ্রুতি দেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রথম ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক।
এসময় ঋষি সুনাক বলেন, আমাদের পূর্বসুরিদের ভুলের কারণে ব্রিটেন এখন গভীর অর্থনৈতিক সঙ্কটে। সেই ভুল শোধরানোটা হবে আমাদের চ্যালেঞ্জ। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং দলের প্রতি বিশ্বাস ফেরাতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবো আমরা। আমি সহমর্মিতার সঙ্গে সঙ্গে সতত পেশাদারিত্ব ও জবাবদিহিতার মধ্য দিয়ে সরকার পরিচালনা করবো।
একাধিক রেকর্ড গড়ে ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিয়েছেন সাবেক চ্যান্সেলর ঋষি সুনাক। দুই শতাব্দীরও বেশি সময়ের মধ্যে ৪২ বছরের ঋষি সুনাক যুক্তরাজ্যের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী। এছাড়াও এমপি নির্বাচিত হওয়ার সাত বছর পর তিনিই সবচেয়ে দ্রুততম সময়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন।
গেলো জুলাইতে যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে আলোচিত চরিত্র হয়ে ওঠেন তিনি। বরিস জনসনের সরে যাওয়ার পর দলের নেতৃত্বে সুনাককে হারিয়ে লিজ ট্রাস প্রধানমন্ত্রী হলেও, ক্ষমতায় ছিলেন মাত্র ৪৫ দিন। এরপর আবারও দৃশ্যপটে হাজির হয়ে প্রধানমন্ত্রী হলেন ঋষি সুনাক। এর আগে, সকালে জাতির উদ্দেশে বিদায়ী ভাষণ দিয়ে ডাউনিং স্ট্রিট ছাড়েন ব্রিটেনের অর্থনীতিতে বিপর্যয় ডেকে আনা লিজ ট্রাস।
দায়িত্ব নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্বনেতাদের প্রশংসায় ভাসছেন নতুন ব্রিটিশ প্রধামন্ত্রী। হোয়াইট হাউসে দিওয়ালি উৎসবে, সুনাকের দায়িত্ব পাওয়াকে যুগান্তকারী ঘটনা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ঋষি সুনাককে, ব্রিটেনের তীব্র জ্বালানি সংকট এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামাল দিতে হবে চরম বিভক্ত ও গভীরভাবে আস্থাহীন হয়ে পড়া একটি দলকে।
ঋষি সুনাক এমন এক সময় প্রধানমন্ত্রী হলেন যখন ব্রিটেন কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর অর্থনৈতিক সমস্যায় আক্রান্ত। স্থবির প্রবৃদ্ধি, ১০ শতাংশের বেশি মুদ্রাস্ফীতি, ইউক্রেন যুদ্ধ, কোভিড মহামারি ও ব্রেক্সিটের কারণে ব্রিটেনের অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়েছে। তার সাথে যোগ হয়েছে সরকারের অস্থিতিশীলতা। এ অবস্থায় ব্রিটেনের বিরোধীদলগুলো ইতোমধ্যে নতুন সাধারণ নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। যদিও ঋষি সুনাক তা প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং ইউক্রেনের প্রতি ব্রিটেনের সমর্থন অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছেন।
অপরদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লাইনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা পৃথক পৃথক বার্তায় ঋষি সুনাককে অভিনন্দন জানিয়েছেন।