ডেস্ক রিপোর্ট :
চলতি বছরে ডেঙ্গুর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। দেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি রোগী আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে অক্টোবরে। ২০০০ সাল থেকে ডেঙ্গুর তথ্য সংরক্ষণ করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেই তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, অক্টোবরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৮৬ জনের মৃত্যু গত ২২ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
এর আগে, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সবশেষ সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছিল ২০২১ সালের অক্টোবরে। সে মাসে ডেঙ্গুতে ২২ জন মারা যায়। ২০১৯ সাল ছিল দেশে ডেঙ্গুর ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বছর। সে বছর সর্বোচ্চ ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন আক্রান্ত এবং ১৭৯ জনের মৃত্যু হয় ডেঙ্গুতে। ওই বছর অক্টোবরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় ৮ হাজার মানুষ, তবে কেউ মারা যায়নি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩৮ হাজার ২৪ জন আর মারা গেছেন ১৪১ জন। এরমধ্যে শুধু অক্টোবরেই আক্রান্তের সংখ্যা ২১ হাজার ৯৩২ জন এবং মৃত্যুর সংখ্যা ৮৬।
২২ বছরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ডেঙ্গু আক্রান্তের ক্ষেত্রে শুধু ২০২২ সালই ব্যতিক্রম। এ বছর ছাড়া অন্যান্য বছরগুলোতে সাধারণত সর্বাধিক ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঘটে আগস্ট এবং সেপ্টেম্বরে।
এর জন্য বিশেষজ্ঞরা এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ উদ্যোগের অভাব এবং বর্তমান পরিস্থিতির জন্য জাতীয় ভেক্টর নিয়ন্ত্রণ সেলের অনুপস্থিতিকে দায়ী করেছেন।
অক্টোবরে ডেঙ্গুতে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেশি কেনো জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, বৃষ্টিপাত, আদ্রতা, এডিস মশার ঘনত্ব, তাপমাত্রা ও ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা এই তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে ফোরকাস্টিং মডেল তৈরি করা হয়।
তিনি বলেন, “অক্টোবরের প্রাদুর্ভাবের ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের একটি প্রভাব আছে। অক্টোবরে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে এবং এডিস মশার ঘনত্বও এ সময় বেশি ছিল। এছাড়া, এ বছর মে থেকে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছিল, যেটি আমরা কমাতে পারিনি।”
ড. কবিরুল বাশার আরও বলেন, চলতি বছর ৫৪টি জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়েছে। কিন্তু জেলা পর্যায়ে মশা নিয়ন্ত্রণের কোনো কার্যক্রম নেই, জনবলও নেই্।
“ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত যেকোনো রোগ নিয়ন্ত্রণে ন্যাশনাল ভেক্টর কন্ট্রোল সেল গঠন করা প্রয়োজন। এ রকম জাতীয় প্রতিষ্ঠান যতদিন না হবে, ততোদিন মশাবাহিত রোগ মোকাবেলা কঠিন হবে,” যোগ করেন তিনি।
তবে তিনি আশা করছেন, সিত্রাংয়ের কারণে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে রোগী কমার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু জমে থাকা পানি অপসরণের ওপর জোর দিয়েছেন তিনি। তা না হলে, জমে থাকা পানিতে আবারও এডিস মশা জন্মাতে পারে।
এই বিশেষজ্ঞ সতর্ক করে বলেন, নভেম্বরে রোগীর সংখ্যা কমে আসলেও সারাবছর ডেঙ্গু রোগী থাকবে। বছরব্যাপী মশক নিধন ব্যবস্থা চলমান না থাকলে মৌসুমে (জুন-সেপ্টেম্বর) পরিস্থিতি খারাপ হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সোমবার সকাল পর্যন্ত বিগত ২৪ ঘণ্টায় আরও পাঁচজন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, এ সময়ের মধ্যে আরও ৮৭৩ জন রোগী ভাইরাল জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও সচেতনতার অভাবেই ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেড়েছে। চিকিৎসকের কাছে যথাসময়ে না যাওয়া এবং অবহেলার কারণে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ঘটছে বলে উল্লেখ করেন তিনি