আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
ইউক্রেনে কামাকাজি (আত্মঘাতী) ড্রোনের মাধ্যমে ভয়াবহ হামলা চালানোর পর পশ্চিমা বিশ্ব বারবার বলে আসছিল এই ড্রোন সরবরাহ করেছে ইরান। তবে এতদিন অস্বীকার করলেও প্রথমবারের মতো রাশিয়াকে ড্রোন দেয়ার কথা স্বীকার করেছে ইরান।
শনিবার (৫ নভেম্বর) ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমিরাবদুল্লাহিয়ান জানিয়েছেন ইরান রাশিয়াকে ‘কিছু’ ড্রোন দিয়েছে তবে তা ইউক্রেন যুদ্ধের আগে।
এ বিষয়ে তেহরানে সাংবাদিকদের হোসেইন আমিরাবদুল্লাহিয়ান বলেন, আমরা ইউক্রেনে ব্যবহারের জন্য রাশিয়াকে কোনো অস্ত্র সরবরাহ করিনি। ভবিষ্যতেও করব না। কিছু পশ্চিমা দেশ আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে যে আমরা এই যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য রাশিয়াকে ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করেছি। ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে অভিযোগ সম্পূর্ণ ভুল।
তবে ড্রোনের বিষয়টি নিয়ে বলতে পারি, আমরা ইউক্রেন যুদ্ধের কয়েক মাস আগে রাশিয়াকে সীমিত সংখ্যক ড্রোন সরবরাহ করেছি। তবে মস্কোকে যে ড্রোনগুলো দেয়া হয়েছিল তা বিস্ফোরক বহন করতে পারে কিনা সে বিষয়ে কিছু বলেননি হোসেইন আমিরাবদুল্লাহিয়ান।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে আত্মঘাতী ড্রোনগুলো রাশিয়াকে ব্যাপক সুবিধা দিচ্ছে। আত্মঘাতী এ ড্রোনগুলো নির্দিষ্ট এলাকায় শত্রুর স্থাপনা সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পারে সেই সঙ্গে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিজেই আঘাত করে বিস্ফোরিত হয়। সম্প্রতি কয়েক সপ্তাহ ধরে রাশিয়া পুরো ইউক্রেনের বিভিন্ন স্থাপনায় সিরিজ ড্রোন হামলা চালিয়ে সফল হয়েছে।
ইউক্রেনের সামরিক কর্মকর্তাসহ দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও বলছেন, রাশিয়ার ড্রোন হামলায় ইউক্রেনের ৩০ ভাগ জ্বালানি স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে তিনি ড্রোনগুলো সরবরাহের বিষয়ে ইরানকে দায়ী করেছেন। এছাড়া ইরানের রাষ্ট্রদূতকে ইউক্রেন থেকে বরখাস্ত করেছেন জেলেনস্কি।
গত সপ্তাহে ইউক্রেনের সামরিক কর্মকর্তারা বলেন, তারা তিন শতাধিক ইরানি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। এদিকে পশ্চিমা সামরিক কর্মকর্তারা সিএনএনকে জানিয়েছে, ইরান রাশিয়ার কাছে স্বল্প মাত্রার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রসহ আরও ড্রোন পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা আরও জানিয়েছেন, সর্বশেষ যে অস্ত্রের চালান ইরান রাশিয়াতে পাঠিয়েছে তাতে ৪৫০টি ড্রোন ছিল।
এদিকে আমিরাবদুল্লাহিয়ান দাবি করেছেন, রাশিয়া যুদ্ধে ইরানের ড্রোন ব্যবহার করেছে এমন প্রমাণ পর্যালোচনা করতে ইউক্রেনের সঙ্গে তারা একটি চুক্তিতে পৌঁছেছেন।
তিনি বলেন, আমরা ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। সেই সঙ্গে দুই পক্ষ সম্মত হয়েছি যে, রাশিয়া ইউক্রেনে ইরানি ড্রোন ব্যবহার করেছে এমন কোনো প্রমাণ যদি তারা পেয়ে থাকেন তাহলে সেটি আমাদের কাছে সরবরাহ করা হবে। অবশ্যই, যদি এটি প্রমাণিত হয় যে রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইরানের ড্রোন ব্যবহার করেছে, তাহলে আমরা এই বিষয়ে চুপ থাকব না।
আমিরাবদুল্লাহিয়ান বলেন, ইউক্রেনের যুদ্ধের বিষয়ে আমাদের অবস্থান হলো যুদ্ধ বন্ধ করা। এছাড়া বিবাদমান দুই পক্ষকেই আলোচনায় ফিরিয়ে আনা এবং বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের তাদের ভূখণ্ড ফিরিয়ে দেয়া।