বিজ্ঞপ্তি:
দৈনিক শাহনামার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। জাতীয়, রাজনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন সহ সকল সংবাদের সর্বশেষ আপডেট জানতে ভিজিট করুন www.shahnamabd.com

বাংলাদেশে বায়ুদূষণের কারণে মানুষের বিষন্নতা বাড়ছে

বাংলাদেশে বায়ুদূষণের কারণে মানুষের বিষন্নতা বাড়ছে

ডেস্ক রিপোর্ট :

বাংলাদেশে বায়ুদূষণের কারণে মানুষের বিষন্নতা বাড়ছে; যার অর্থনৈতিক ক্ষতি জিডিপির চার ভাগেরও বেশি৷ এমনকি প্রতি বছর বায়ুদূষণে ৮০ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে৷ বায়ুদূষণ নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে৷

বিশ্লেষক ও চিকিৎসকেরা বলছেন, অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও নগরায়ণের কারণে পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে৷ বায়ুদূষণের কারণে গর্ভবতী মা ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে৷

‘ব্রিদিং হেভি : নিউ এভিডেন্স অন এয়ার পলিউশন অ্যান্ড হেলথ ইন বাংলাদেশ’শীর্ষক ওই গবেষণায় বলা হয়, ২০১৮ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে প্রতি বছর বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দেশ ও ঢাকা দ্বিতীয় দূষিত শহর হিসেবে স্থান পেয়েছে৷

বাংলাদেশে বায়ুদূষণের দিক থেকে শীর্ষে আছে ঢাকা৷ ঢাকার পর সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণের শিকার বরিশাল বিভাগ৷ অন্যদিকে সিলেট বিভাগে বায়ুদূষণ অপেক্ষাকৃত কম৷ এই প্রতিবেদন তৈরিতে ঢাকা ও সিলেটের ১২ হাজার ২৫০ জন ব্যক্তির তথ্য ব্যবহার করে বায়ুদূষণের কারণে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর স্বল্পমেয়াদি প্রভাবের মূল্যায়ন করা হয়েছে৷

বায়ুদূষণে মৃত্যু ও ঝুঁকি

বায়ুদূষণকে ২০১৯ সালে বাংলাদেশে মৃত্যু এবং অক্ষমতার দিকে নিয়ে যাওয়া দ্বিতীয় বৃহত্তম ঝুঁকির কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়৷ এখানে বছরে কমপক্ষে ৮০ হাজার মানুষ বায়ুদূষণের কারণে মারা যায়৷ ঢাকায় সারা দিনে একজন যে পরিমাণে দূষিত বায়ু গ্রহণ করেন, তা প্রায় দুটি সিগারেটের সমান ক্ষতি করে বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে৷

প্রতিবেদনে বলা হয়, বায়ুদূষণে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ছে শ্বাসকষ্ট, কাশি, নিম্ন শ্বাসনালীর সংক্রমণ এবং বিষন্নতার ঝুঁকি৷ পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু, বয়স্ক ও রোগে আক্রান্তরা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছেন৷ তাদের মধ্যে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ বা শ্বাস রোগে আক্রান্তরা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ৷

বিশ্বব্যাংকের তথ্য বলছে, দূষণের কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন বয়স্ক মানুষ, শিশু এবং যাদের ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ আছে তারা৷ দূষিত এলাকার প্রধান সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে শ্বাসকষ্ট৷ নিউমোনিয়াসহ অন্যান্য বক্ষব্যাধিও এসব এলাকার বয়স্ক ও শিশুদের মধ্যে দেখা গেছে৷ বায়ুদূষণের কারণে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়ছে৷ দূষিত এলাকাগুলোর মধ্যে বিষন্নতার রোগী দেখা গেছে সবচেয়ে বেশি৷ বায়ুদূষণের কারণে অর্থনীতিও ক্ষতির মুখে পড়ছে৷ প্রতিবছর জিডিপির চার দশমিক চার শতাংশ ক্ষতি হচ্ছে৷

ঢাকার বাতাসে হেভি মেটাল

বাংলাদেশের স্থানীয় গবেষণা বলছে, ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণ হচ্ছে অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও নির্মাণ কাজের মাধ্যমে৷ গবেষণা বলছে, বায়ুদূষণের জন্য নির্মাণখাত ৩০ শতাংশ দায়ী৷ এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বায়ুদূষণ হচ্ছে ইটভাটা ও শিল্পকারখানার মাধ্যমে৷ যার হার ২৯ শতাংশ৷ বায়ুদূষণের তৃতীয় সর্বোচ্চ কারণ হলো যানবাহনের কালো ধোঁয়া, যার শতকরা হার ১৫ শতাংশ৷ ঢাকার স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে৷ প্রতিষ্ঠানটি ২০২১ সালে ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ ১০টি স্থানের বায়ুমান নিয়ে গবেষণা করে৷

ক্যাপস-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘‘আমাদের সবশেষ গবেষণায় ঢাকার বাতাসে লেড ও মার্কারির মতো হেভি মেটালও পেয়েছি৷ লেড এর উপস্থিতি আশঙ্কাজনক৷ ঢাকার বাইরের বাতাসেও এটা পাওয়া যাচ্ছে৷ আর এর সঙ্গে আছে ধূলিকণা৷ প্রধানত অপরিকল্পিত নগরায়ণ, নির্মাণ কাজ ও উন্নয়নমূলক কাজ নিয়ম না মেনে করায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে৷ পরিবেশ মন্ত্রণালয় বায়ুদূষণ রোধে কিছু প্রকল্প নিলেও তা তেমন কাজে দেয়নি৷ সেগুলো ছিল অপরিকল্পিত৷ আর এটা পরিমাপের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও দক্ষ জনবলও তাদের নেই৷”

গর্ভবতী মা ও সন্তানের যেসব ক্ষতি

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান বলেন, ‘‘গর্ভবতী মা ও শিশুদের ওপর বায়ুদূষণের নেতিবাচক প্রভাব সবচেয়ে বেশি৷ মায়ের গর্ভের সন্তান ক্ষতির শিকার হতে পারে৷ আর এখন মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ও বিষন্নতা বেড়ে যাচ্ছে৷ যারা জটিল রেগে বিশেষ করে শ্বাসপ্রশ্বাস সংক্রান্ত রোগে আক্রান্ত তা আরও জটিল হচ্ছে৷ আবার যার ডায়াবেটিস হওয়ার কথা নয়, তারও হচ্ছে৷”

তিনি আরও বলেন, ‘‘ঢাকার বাতাসে হেভি মেটাল আছে, আছে নানা ধরনের বস্তু কণা, ফাইবার ও ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান৷ এর কারণে ক্যানসার ছাড়াও লিভার ও কিডনি ক্ষতিগ্রন্ত হয়৷ এমনকি মস্তিষ্কেরও ক্ষতি হয়৷”

সবাই সচেতন না হলে এটা বন্ধ করা অসম্ভব : মন্ত্রী

পরিবেশ ও বনমন্ত্রী মো. শাহাবউদ্দিন বলেন, ‘‘আমরা চেষ্টা করছি বায়ুদূষণ ঠেকাতে, কিন্তু এককভাবে অল্প জনবল নিয়ে তা পারছি না৷ এখানে সবাই বায়ুদূষণ করে, কিন্তু বন্ধ করার দায়িত্ব শুধু আমাদের৷ সবাই সচেতন না হলে এটা বন্ধ করা সম্ভব নয়৷”

তিনি বলেন, ‘‘শীতকালে শুষ্ক মৌসুমে দূষণ বেড়ে যায়৷ বর্ষাকালে কমে৷ কারণ তখন বৃষ্টি থাকে৷ বৃষ্টির পানি দূষণের মাত্রা কমায়৷ এটা প্রাকৃতিক৷ কিন্তু আমাদের সবাইকে দায়িত্ব পালন করতে হবে৷ এখন সারা বিশ্বেই একই অবস্থা৷ আমরা এখানে মোবাইল কোর্ট দিয়ে জরিমানা করি৷ কিন্তু কী বলব, তারপরও থামছে না৷”

Please Share This Post in Your Social Media




All rights reserved by Daily Shahnama
কারিগরি সহায়তা: Next Tech