দুই দফায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে তুরস্ক। দেশটিতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলছে। এই সংখ্যা কোথায় গিয়ে থামবে, তা জানা নেই। ইতোমধ্যে তুরস্কে এক হাজার ৪৯৮ মৃত্যুর তথ্য জানা গেছে। অন্যদিকে, সিরিয়ায় এখন পর্যন্ত ৮১০ জন নিহতের খবর এসেছে। খবর আল-জাজিরার।
সোমবার ভোর ও দুপুরে ভূমিকম্প আঘাত হানে তুরস্কে। রিক্টার স্কেলে এর পরিমাণ ছিল যথাক্রমে সাত দশমিক ৮ ও সাত দশমিক পাঁচ। ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল।
দেশটির দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রধান ওরান তাতার বলেছেন, ‘তুরস্কে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪৯৮। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আমাদের টিম পৌঁছেছে। উদ্ধার কাজ চলছে।’
ওরান তাতার আরও বলেন, ‘ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত আহত হয়েছেন আট হাজার ৫৩৩ জন। শুধুমাত্র দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে দুই হাজার ৮৩৪টি ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে।’
ভূমিকম্পের জন্য আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে তুরস্কের শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এদিকে, সিরিয়ার আসাদ সরকার নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে ৪৩০ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছে এক হাজার ৩১৫ জন। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।
অন্যদিকে, বিদ্রোহীদের দখলকৃত অঞ্চলে ৩৮০ জনের মৃত্যুর খবর জানা গেছে। এক হাজারেরও বেশি আহত হয়েছেন। মানবাধিকার সংস্থা দ্য হোয়াইট হেলমেটস এ তথ্য জানিয়েছে।
সংস্থাটির তথ্য মতে, বিদ্রোহীদের দখলকৃত অঞ্চলের ১৩৩টি ভবন ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া আংশিক ক্ষতিগ্রস্তের শিকার ২৭২ ভবন।
ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের শতাধিক পরিবার আটকে রয়েছে বলেও জানিয়েছে দ্য হোয়াইট হেলমেটস।
আল-জাজিরা বলছে, তুরস্কে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো হলো—কাহরামানমারাস, গাজিয়ানতেপ, সানলিউরফা, দিয়ারবাকির, আদানা, আদিয়ামান, মালত্য, ওসমানিয়ে, হাতায় ও কিলিস। আর সিরিয়ার আলেপ্পো, ইদলিব, হামা ও লাতাকিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
স্থানীয় সময় সোমবার ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে প্রথম ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। এর উৎপত্তিস্থল ছিল সিরিয়া সীমান্তবর্তী তুরস্কের গাজিয়ানতেপ শহরের কাছে। ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল সাত দশমিক ৮। তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারাসহ দেশটির অন্যান্য শহরে এবং পার্শ্ববর্তী সিরিয়াসহ প্রতিবেশী দেশ লেবানন, সাইপ্রাস, ইসরায়েলেও এই ভূকম্পন অনুভূত হয়। পরে স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ২৪ মিনিটে কাহরামানমারাস প্রদেশের এলবিস্তানে সাত দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্পটি অনুভূত হয়।
তুরস্কে জরুরি সহায়তা দিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এরই মধ্যে ১০টি টিম পাঠিয়েছে। বুলগেরিয়া, ক্রোয়েশিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, ফ্রান্স, গ্রিস ও নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড ও রোমানিয়া থেকে প্রাথমিক উদ্ধারকাজে এই দলগুলোকে পাঠানো হয়। ইতালি ও হাঙ্গেরিও সহায়তা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া রাশিয়া, কাতার, ইউক্রেন, ভারত, চীনও সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আর ভয়াবহ ভূমিকম্পের জন্য জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে নীরবতা পালন করা হয়।