বিজ্ঞপ্তি:
দৈনিক শাহনামার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। জাতীয়, রাজনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন সহ সকল সংবাদের সর্বশেষ আপডেট জানতে ভিজিট করুন www.shahnamabd.com

ভারতের ট্রেন দুর্ঘটনায় বেচে যাওয়া বাংলাদেশীর যা জানালেন

ভারতের ট্রেন দুর্ঘটনায় বেচে যাওয়া বাংলাদেশীর যা জানালেন

ডেস্ক রিপোর্ট :
চিকিৎসার জন্য স্ত্রী ববিতা সুলতানকে নিয়ে ভারতের চেন্নাইয়ের উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন ঢাকার মিরপুরের ব্যবসায়ী সাজ্জাদ আলী (৩৪)। গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে তিনটা নাগাদ কলকাতার হাওড়া জেলার শালিমার স্টেশন থেকে উঠেছিলেন করমণ্ডল এক্সপ্রেসে। সন্ধ্যা সাতটার কিছু পরে জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন তাঁরা। এখনো ওই ঘটনার ধাক্কা সামলে উঠতে না পারা সাজ্জাদ বলেছেন, জীবনে এমন দৃশ্য দেখতে হবে, তা কখনো ভাবেননি।

ঘটনার ভয়াবহতা তুলে ধরে সাজ্জাদ বলেন, ‘বহু মানুষকে দেখেছি চোখের সামনে মরে যেতে। সাংঘাতিক দৃশ্য!’ মানসিকভাবে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত অবস্থায় সাজ্জাদ ও তাঁর স্ত্রী ববিতা সুলতান শনিবার সকালে কলকাতায় ফিরেছেন। উঠেছেন উত্তর কলকাতার একটি হোটেলে। সাজ্জাদ বলেন, ‘আমার স্ত্রীর মেরুদণ্ডে একটু চোট লেগেছে, আমার লেগেছে হাতে। কিন্তু যা দেখলাম, তার সঙ্গে আমাদের আঘাত একেবারেই তুলনা করার মতো কিছু নয়।’

ভারতের ওডিশার বালাসোরে তিন ট্রেনের সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৮৮ জন হয়েছে। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছেছবি: এএনআই

সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ সাজ্জাদ ট্রেনের বাথরুম থেকে এসে নিজের সিটে বসেন। তাঁর কামরা বি-০১-এর দুই আসন ১৩ ও ১৪। তিনি বলেন, ‘হঠাৎই একটা ঘর্ঘর শব্দ শুরু হলো। সেই শব্দ ক্রমশ তীব্র হতে থাকল। আমি ভাবলাম ট্রেন বেলাইন হয়ে যাচ্ছে এবং সেটাই হয়েছিল। বগির ডান দিকের চাকাটি লাইনচ্যুত হয়েছিল এবং বাঁ দিকের চাকা সরে দুই লাইনের মাঝখানে চলে এসেছিল, এটা পরে বুঝলাম।’

ট্রেনের কামরায় বসে তোলা ছবিতে ঢাকার মিরপুরের ব্যবসায়ী সাজ্জাদ আলী ও তাঁর স্ত্রী ববিতা সুলতান। তখনো ট্রেনটি দুর্ঘটনায় পড়েনিছবি: সংগৃহীত

কিন্তু কিছুক্ষণ এই শব্দ হওয়ার পরে সাজ্জাদ ভেবেছিলেন, যেকোনো অবস্থায়ই তাঁদের নামতে হবে। কারণ, ট্রেনটি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে বা পড়ছে। কিন্তু তিনি যেটা বোঝেননি, সেটা হলো দুর্ঘটনা ইতিমধ্যে ঘটে গেছে।

ট্রেনটি কয়েক সেকেন্ডের জন্য থামার পরে তিনি ও ববিতা বের হয়ে আসেন। ‘একটু আগেই আমার সঙ্গে ক্যানটিন ম্যানেজারের আলাপ হয়েছিল এবং আমি কামরার বাইরে এসে প্রথমেই দেখলাম যে তাঁর মৃতদেহ সামনে পড়ে আছে,’ বললেন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত সাজ্জাদ।

সাজ্জাদ বলেন, কামরার বাইরে এসে দেখেন এক অদ্ভুত দৃশ্য। তাঁদের কামরা উত্তর–দক্ষিণ বরাবর রয়েছে। কিন্তু প্যান্ট্রি কারটি (খাবার সরবরাহ করার কামরা) পূর্ব–পশ্চিম হয়ে রয়েছে। অর্থাৎ সম্পূর্ণ ঘুরে গেছে। আর ট্রেনে ওঠার আগে একজনের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল, যিনি এ ১ কামরায় ছিলেন। তাঁদের কামরাটা কফি খাওয়ার পরে কাগজের কাপ দুমড়ে ফেললে যেমন হয় তেমন আকৃতি নিয়েছে।

এরপর সাজ্জাদ স্টেশন ছেড়ে প্রধান সড়কের দিকে এগোনোর সিদ্ধান্ত নেন এবং এগোতেও থাকেন। এর পরের স্মৃতি স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘ভয়াবহ দৃশ্য এখানেই দেখলাম। একের পর এক মানুষের মৃতদেহ রয়েছে। কেউ কেউ হয়তো আমার সামনেই মারা গেলেন। কেউ কেউ ছটফট করছেন। কারও হাত নাই, কারও পা নেই। এক নারীকে দেখলাম শিশু কোলে বসে আছেন, যে শিশুর মাথা চূর্ণ হয়ে গেছে। অ্যাম্বুলেন্স তখন ঢুকতে শুরু করেছে।’

স্থানীয়রা সাজ্জাদ ও তাঁর স্ত্রীকে তাঁদের বাসায় নিয়ে যান। কিছু জল খাবার খেতে দিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বলেন। শরীরে কোনো রকম সমস্যা হচ্ছে কি না তা জানতে চান। সাজ্জাদ বলেন, ‘সেখানে কিছুক্ষণ অপেক্ষার পরে রাতের দিকে, আমাদের তাঁরাই বাসে তুলে দেন। বাসে উঠে দেখি সবাই ওই ট্রেনের যাত্রী এবং অনেকেই কাতরাচ্ছেন, মাটিতে শুয়ে আছেন।’

সকালের দিকে কলকাতায় ফিরে একটি হোটেলে ওঠেন সাজ্জাদ এবং সিদ্ধান্ত নেন আপাতত তিনি চেন্নাই যাবেন না। তিনি বলেন, ‘প্রথমে এই ট্রেনের টিকিট পাইনি। অনেক কষ্ট করে টিকিট পেতে হয়েছে। তারপরে এখন এই দুর্ঘটনা ঘটল, আমরা আর চেন্নাইয়ে চিকিৎসার জন্য যাব না। কলকাতাতেই এখন চিকিৎসা করাব। আল্লাহ বাঁচিয়েছেন, এখন আর যাওয়ার প্রয়োজন দেখি না।’

কলকাতায় বাংলাদেশের উপহাইকমিশন তাঁর খোঁজখবর নিয়েছে বলে জানান সাজ্জাদ আলী। তিনি জানান, ট্রেনে ওঠার সময় বাংলাদেশের তিন-চারজনকে দেখেছিলেন। কিন্তু এই ঘটনার পরে আর তাঁদের সঙ্গে দেখা হয়নি।

Please Share This Post in Your Social Media




All rights reserved by Daily Shahnama
কারিগরি সহায়তা: Next Tech